পদ্মায় ৫১ বছরে বিলীন একটি শিকাগো শহর বা আড়াই গুন আয়তনের ঢাকা

সর্বনাশা পদ্মা যেমন কূল ভাঙে, তেমনি ভাঙে মানুষের বুক। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার প্রচুর বসতবাড়ি গ্রাস করেছে নিয়েছে পদ্মা। কখন, কোথায় উন্মাদের মতো পাড় ভাঙা শুরু হবে তার আগাম কোন সঠিক ইঙ্গিত না মিললেও পরিসংখ্যান বলছে বিগত ৫১ বছরে প্রায় ৬৬৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি জমি বিলীন হয়ে গিয়েছে পদ্মারগর্ভে। যা আমাদের দেশের একটি জেলা মেহেরপুরের আয়তনের (প্রায় ৭১৬ বর্গ কি.মি.) কাছাকাছি বা ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় আড়াই গুন হবে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পদ্মার আয়তন, আকৃতি বদল আর স্থান পরিবর্তন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর এসব তথ্য জানানো হয় সংস্থাটির অনলাইন প্রচারমাধ্যম ‘আর্থ অবজারভেটরি’তে।
১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ১৪টি ছবি নিরীক্ষা করে প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়, বিগত ৩০ বছর ধরে পদ্মার আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থান পরিবর্তন হচ্ছে বিভিন্ন আকৃতিতে। আর এ কারণেই দেখা দেয় ভূমিক্ষয়।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ১৪টি ছবিই নেওয়া হয়েছে প্রত্যেক বছরের শুষ্ক মৌসুম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে। স্যাটেলাটের ব্যবহারকৃত ল্যান্ডস্যাট ৫ ছিল থিমেটিক ম্যাপারের, ল্যান্ডস্যাট ৭ ছিল বৃদ্ধি পাওয়া থিমেটিক ম্যাপারের এবং ল্যান্ডস্যাট ৮ ছিল প্রয়োগগত ভূমির ছবির জন্য।
নাসার প্রতিবেদনে জানানো হয়, লক্ষাধিক কৃষিজীবী মানুষকে নদীটির ১৩০ কিলোমিটার উপকূলের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হয়।
১৯৬৭ সাল থেকে আজ অবধি ৬৬ হাজার হেক্টরের বেশি ভূমি পদ্মায় হারিয়ে আয়তন বিচারে যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় শহর শিকাগোর সমান। ভয়াবহ মাত্রার এ ভূমিক্ষয়ের অন্যতম কারণ হচ্ছে, উত্তাল নদী প্রবাহের মধ্যে উপকূল সুরক্ষা কর্মসূচিতে খুব কম এলাকা থাকা এবং নদীর তীরে বিশাল বালুচর থাকা।
দীর্ঘদিন যাবত পদ্মা নদীর প্রশস্ততা, গভীরতা, আকৃতি নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা নাসার স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ছবিকে ব্যাখ্যা করে বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে পদ্মার আকৃতি ও প্রশস্ততার পরিবর্তন হচ্ছে ব্যাপক। এমনকি বিজ্ঞানীদের কাছে নদীটির আঁকা-বাঁকা গতিপথ সহ ভিন্নমাত্রার ভূ-তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নীরিক্ষামূলক উপাদান হিসেবে সামনে উঠে এসেছে।

No comments

Powered by Blogger.