বি. চৌধুরী প্রসঙ্গে কর্নেল অলি

রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে ঝড় তুললেন এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। তার একটি বক্তব্যে তৈরি হয়েছে তোলপাড়। চলছে নানা আলোচনা, সমালোচনা, বিচার, বিশ্লেষণ। শুক্রবার রাজধানীতে নিজ দলের একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. বি. চৌধুরী এবং তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরীর তীব্র সমালোচনা করেন অলি আহমেদ। তাদেরকে রাজনৈতিক অতীত স্মরণ করিয়ে দেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। বৃহৎ বিরোধী জোটে জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধীদের অংশগ্রহণ নিয়ে অধ্যাপক বি. চৌধুরী এবং মাহী বি. চৌধুরী গত কিছুদিন ধরেই নানা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তারা বলছেন, বিএনপিকে জোটে আসতে হলে জামায়াতকে ত্যাগ করে আসতে হবে। পিতা-পুত্রের এই অবস্থানের ব্যাপারে অলি আহমেদ বলেন, বি. চৌধুরী যখন বিএনপি’র মহাসিচব ছিলেন তখন মুসলিম লীগের শাহ্‌ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। জয়পুরহাটের আবদুল আলীম ছিলেন রেলমন্ত্রী।
এ ধরনের আরও অনেকেই বিএনপিতে ছিল। বি. চৌধুরী যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তাহলে সময়ের প্রেক্ষিতে বক্তব্যের পার্থক্য হচ্ছে কেন? মাংস হালাল আর ঝোল হারাম- এটা কেন? মহাসচিব থাকা অবস্থায় সব রাজাকার ভালো ছিল আর এখন তারাই রাজাকার, দেশদ্রোহী!
অলি আহমদ বলেন, সেজন্য বলি জনগণের কাছে যাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে, দোকানদারের কাছে যারা পরাজিত, তাদেরকে মাহাথির মোহাম্মদ বানান কেন? ৯০ বছরের বুড়োকে ৮০ বছর বানানো যাবে কিন্তু ৫০ বছর বানানো যাবে না। মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার জন্মদাতা, আধুনিক মালয়েশিয়ার নির্মাতা। যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নেই। আর আমরা তো ছেলের কাছে বিক্রি হয়ে যাই। যারা আজকে ঐক্যজোটে আছে তাদের অনেকের ছেলে ভিওআইপি ব্যবসা করে। ভিওআইপি ব্যবসা কার থেকে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের থেকে।
একদিকে ভিওআইপি ব্যবসা করছে আবার অন্যদিকে বলছে ঐক্য করছি। রুমের ভেতরে থাকলে একরকম আর বাইরে অন্যরকম। তিনি বলেন, জোটে আমাদের অবস্থান বিএনপি স্পষ্ট করতে পারেনি। এটা স্পষ্ট করা উচিত। ড. কামাল হোসেনের পক্ষ থেকে আমার কাছে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন এসেছিলেন। বলেছেন, আপনি যদি আসেন এ মুভমেন্টের গতির সঞ্চারিত হবে। উত্তরে বলেছি, আমি দুর্নীতিবাজ নই। আমি পরিষ্কার কথা বলি। আমি গেলে গতি সঞ্চারিত হবে তা জানি। তবে আমি ওখানে কাউকে নেতা বানানোর জন্য যাবো না। আমি যাব দেশের গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। সেটাতে যদি আসেন তাহলে কথা বলেন। অলি আরও বলেন, বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। তারা যদি এ স্বল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার করে পুনর্গঠন করে এখনও তাদের পক্ষে যে কোনো কাজ করা সম্ভব।
নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও ২০ দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে এখন কোনো কথা নেই। এখন কথা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে। তিনি বলেন, সরকার পদক্ষেপ না নিলে রক্তপাত এড়ানো সম্ভব হবে না। কারণ আগামী মাস থেকে বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হবে। এটা যদি এড়াতে হয় তাহলে সরকার এবং বিরোধী দলগুলোকে নমনীয় হতে হবে। আলোচনায় বসতে হবে। নিজ নিজ জায়গায় অহঙ্কার নিয়ে বসে থাকলে দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সঙ্গে বসে একটা সম্মানজনক মীমাংসা হবে বলে আশা করি। কারণ আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে ক্ষমতা গেলে এই আইনের মাধ্যমে তাদের অবস্থা কি হতে পারে।
প্রসঙ্গত অনেক পর্যবেক্ষকই স্মরণ করছেন, বি. চৌধুরী যখন বিএনপি করতেন তখন জামায়াত নেতাদের অনেকের সঙ্গেই তার যোগাযোগ ছিল। একসঙ্গে তারা অনেক বৈঠক করেছেন। এইসব ছবি তখনকার পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.