ছাত্র বিক্ষোভ সরকারের জন্য বিব্রতকর -নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ সময়ে ছাত্রবিক্ষোভ সরকারের জন্য একটি বিব্রতকর অবস্থা। আগামী ডিসেম্বরের দিকে হওয়ার কথা ওই নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল ছাত্রদের এই বিক্ষোভের জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও এর প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করছে। বলা হচ্ছে, এ দুটি দল তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ছাত্রদের ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকায় হাজারো ছাত্রদের বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। তাদেরকে লাঠিপেটা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারী ছাত্রদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় পুলিশ ও ‘গভর্নমেন্ট অফিসিয়ালস’।
এ সময় এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, স্কুলের পোশাক পরে কিছু ‘ক্রিমিনাল’ সহিংসতায় যোগ দিয়েছে। তবে হামলার জন্য ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে দায়ী করেছে বেশির ভাগ বিক্ষোভকারী। এসব সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে টেলিভিশন স্টেশনগুলো। তাতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারী ছাত্ররা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ছে।
দেশের অন্য এলাকা থেকে বাস কোম্পানিগুলো ঢাকায় প্রবেশ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। এতে রাজধানী ঢাকা ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের অন্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে বাস হলো মূল চলাচলের মাধ্যম। এখানে রেলে প্রচণ্ড ভিড় হয়। আর বেশির ভাগ মানুষের প্রাইভেট কার কেনার সামর্থ্য নেই। বাস কোম্পানিগুলোর মালিক ও শ্রমিকরা বলেছেন, কয়েক ডজন বাস ভাঙচুর করা হয়েছে ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে। আগুন দেয়া হয়েছে। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা বাস চালাবেন না।
শনিবারের সংঘর্ষকালে ঘটনাস্থলে ছিলেন এপি’র এক সাংবাদিক। তিনি বলেছেন, কিছু সাংবাদিক সহ অনেক মানুষ ওই সংঘর্ষকালে আহত হয়েছেন। দ্য ডেইলি স্টার খবর প্রকাশ করেছে যে, এতে আহত হয়েছে ২৫ জন। তবে অন্য সংবাদ মাধ্যম এ সংখ্যা আরো বেশি বলে উল্লেখ করেছে।
দুটি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে কলেজপড়ুয়া দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এরপরই গত সপ্তাহের রোববার থেকে বিক্ষোভ প্রতিবাদে উন্মাতাল হয়ে ওঠে ঢাকা। তারা প্রায় এক কোটি মানুষের শহর ঢাকাকে অচল করে দেয়। যে দুটি বাস যাত্রী ধরার জন্য ওই সময় পাল্লা দিচ্ছিল, তাতেই ওই দুই শিক্ষার্থী মারা যান। এমন প্রতিযোগিতা ও মৃত্যুর ঘটনা ঢাকা শহরে নিয়মিতই ঘটে থাকে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্রদের এই বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের দাবি যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে এবং তা দফায় দফায় পূরণ করা হবে।
বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাংলাদেশে নিরাপদ সড়ক দাবি করছে। এ খাতটি দুর্নীতিতে সয়লাব। এ খাতে রয়েছে লাইসেন্সবিহীন চালক ও রেজিস্ট্রিবিহীন যানবাহন। এ চিত্র ঢাকার একটি সাধারণ ঘটনা। প্রতি বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১২০০০ মানুষ মারা যান। এর জন্য দায়ী ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়াগতিতে গাড়ি চালানো ও ট্রাফিক আইন প্রয়োগে শিথিলতা।
ছাত্ররা কয়েক হাজার গাড়ি থামিয়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন ও চালকের লাইসেন্স দেখতে চেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিচারক পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.