বিজ্ঞানের মার্কিন অপপ্রয়োগ: ইতিহাসের বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও গণহত্যা

৭৩বছর আগে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট মার্কিন সরকার ঘটিয়েছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহতম নৃশংসতা। মার্কিন সরকারের মাধ্যমে বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং বিজ্ঞানের নৃশংসতম অপব্যবহারের ফলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে নিহত হয় লাখ লাখ নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন প্রায় শেষ এবং জাপান যখন আত্মসমর্পণের জন্য আলোচনায় বসতে চাচ্ছিল পশ্চিমা প্রতিপক্ষ শক্তিগুলোর সঙ্গে তখন রণক্ষেত্র থেকে বহুদূরে অবস্থিত জাপানের হিরোশিমা শহরে মার্কিন পরমাণু বোমার হামলায় মুহূর্তের মধ্যে নিহত হয় প্রায় এক লাখ নিরপরাধ ও বেসামরিক জাপানি নাগরিক।  আরো কয়েক লাখ মানুষ হয় আহত।
ওই বোমার ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পরবর্তী বছরগুলোতে নিহত হয়েছে আরো হাজার হাজার জাপানি নাগরিক।
এ ছাড়া, বোমার তেজষ্ক্রিয়তায় বহু বছর ধরে হিরোশিমার অধিবাসীরা ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগব্যধিতে ভুগেছে। বোমার প্রতিক্রিয়ায় পঙ্গু হয়ে জন্ম নিয়েছে হাজার হাজার শিশু। আজো ওই অঞ্চলে জন্ম হচ্ছে  বিকলাঙ্গ বা পঙ্গু শিশু। 
হিরোশিমাতে নিক্ষিপ্ত মার্কিন পরমাণু বোমাটির নাম ছিল 'লিটল বয়'। এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ছিল বিশ হাজার টন টিএন্ডটি'র সমান। 
হিরোশিমায় হামলার তিন দিন পর আমেরিকা আরো একটি পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল জাপানের নাগাসাকি শহরে। এ বোমা হামলায় নিহত হয় অন্তত ৭০ হাজার বেসামরিক জাপানি নাগরিক। 
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ যখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে পরাজয়ের মুখে জাপান যখন এমনিতেই আত্মসমর্পণ বা যুদ্ধ থামানোর কথা ভাবছিল তখন এইসব পরমাণু বোমা ব্যবহার করে আমেরিকা। এর মাধ্যমে তৎকালীন মার্কিন সরকার বিশ্বের সরকারগুলো ও জনগণের মধ্যে এ আতঙ্ক বদ্ধমূল করার চেষ্টা করেছে যে আমেরিকাই বিশ্বে সবচেয়ে বড় সামরিক ও অপরাজেয় শক্তি এবং এই বলদর্পী শক্তিকেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মোড়ল বা পুলিশি সরকার হিসেবে সবাইকে মেনে নিতে হবে।
কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার লজ্জাজনক পরাজয় এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধে আমেরিকার বিপর্যয় এটাই প্রমাণ করেছে যে পরমাণু বোমার অধিকারী হওয়াসহ সামরিক অস্ত্রশস্ত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দখলদারিত্বকে স্থায়ী করা বা কোনো দেশের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করে না।  
বিশ্বের মধ্যে আমেরিকাই একমাত্র দেশ যে পরমাণু বোমা ব্যবহার করেছে। জাপানে পরমাণু বোমা ব্যবহারের জন্য  মার্কিন সরকারগুলো কখনও ক্ষমা  চায়নি এবং ওবামার সরকারও ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণহত্যা চালানোর দায়ে বিচারেরও মুখোমুখি হয়নি মার্কিন সরকার জাতিসংঘের মত সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোয়। মানবতার বিরুদ্ধে মহাঅপরাধে জড়িত মার্কিন নেতাদের বিচারের জন্য জাপানি নেতারাও কোনো উদ্যোগ নেননি পরাজিত শক্তি হিসেবে অধীনতামূলক চুক্তি বা দাস-খত মেনে নেয়ায়।
বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্র নিষিদ্ধ করার জন্য দাবি জোরদার হওয়া সত্ত্বেও আজো আমেরিকা আরো মারাত্মক ও শক্তিশালী পরমাণু অস্ত্রসহ গণ-বিধ্বংসী নানা অস্ত্র উৎপাদন করছে। অন্যদিকে আমেরিকা স্বাধীনচেতা দেশগুলোকে শান্তিপূর্ণ পরমাণু প্রযুক্তিরও অধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা পরমাণু বোমা তৈরি করা ও সংরক্ষণ করাকে হারাম বলে ফতোয়া দেয়া সত্ত্বেও তেহরানের বিরুদ্ধে পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টার কাল্পনিক অভিযোগ তুলে মার্কিন সরকার ও তার সহযোগী পশ্চিমা সরকারগুলো ইরানের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে বছরের পর বছর ধরে। পরমাণু সমঝোতার আলোকে তারা এইসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে বলে কথা দেয়া সত্ত্বেও এখনও তা বাস্তবায়নে নানা গড়িমসি করছে। 
অন্যদিকে ফিলিস্তিন দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলকে শত শত পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে আমেরিকাসহ তার সাম্রাজ্যবাদী মিত্র শক্তিগুলো। পরমাণু শক্তি হওয়ার কারণে বর্ণবাদী ইসরাইল ধরাকে সরা জ্ঞান করছে এবং গত প্রায় ৫০ বছরের লাখ লাখ আরব ও ফিলিস্তিনি মুসলমানকে হতাহত করেছে।

No comments

Powered by Blogger.