জটিল সমীকরণে প্রত্যাবাসন রোহিঙ্গা: ২,১৫৪ জনে অনাপত্তি মিয়ানমারের তবে... by মিজানুর রহমান

শর্তের  বেড়াজালে আটকে যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। রোহিঙ্গারা এবার নতুন শর্ত যুক্ত করেছে! এতদিন নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের কথা বললেও এখন তারা বিচারের দাবিটি পূর্ব শর্ত হিসেবে জুড়ে দিচ্ছে। সেগুনবাগিচা বলছে- এমনিতেই প্রত্যাবাসন তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে সাড়ে ৪ মাস সময় খেয়ে ফেলেছে (কিল) মিয়ানমার। সেই তালিকার ৮ হাজার ৩২ জনের মধ্যে চার দফায় মোট ২ হাজার একশ’ ৫৪ জনের বিষয়ে অনাপত্তি মিলেছে। বাকিটা আজও ঝুলে আছে। এখন ভেরিফাইড রোহিঙ্গারা শর্ত বাড়াতে শুরু করেছে। আগে নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকারসহ ৫টি শর্ত ছিল তাদের। এখন নির্যাতনের বিচারের বিষয়টি তারা সামনে নিয়ে এসেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি মতে রাখাইন কতটা প্রস্তুত তা দেখতে যেতে চান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা। তারা সরজমিন দেখতে চান ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে মিয়ানমার সরকার রাখাইনে কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে। চীনসহ রোহিঙ্গা সংকটের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় উৎসাহদাতা বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো দ্রুত ভেরিফাইড রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে প্রতিনিয়ত ঢাকাকে তাগিদ দিচ্ছে। অন্যদিকে মিয়ানমারও দাবি করছে তারা তাদের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা যাদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে তাদের যেকোনো সময় গ্রহণে তারা প্রস্তুত।
এ অবস্থায় মন্ত্রীসহ বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা দ্রুতই রাখাইন যেতে চান। তারা দেখতে চায় আদৌ রাখাইন কতটা প্রস্তুত? যেটি মিয়ানমার তথা অং সান সুচি সরকারের প্রতিনিধিরা চীনসহ তাদের বন্ধুদের বলে বেড়াচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফরের বিষয়ে গত সপ্তাহে নোট পাঠানো হলেও গতকাল পর্যন্ত মিয়ানমার তাতে সাড়া দেয়নি। ফলে চলতি মাসে সফরটি  হচ্ছে না বলে ধারণা দিয়েছেন কর্মকর্তারা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ মিটিং এবং প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি সইয়ের পর গত ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৬৭৩টি পরিবারের ৮ হাজার  ৩২ জনের প্রথম প্রত্যাবাসন তালিকা হস্তান্তর করেছিলেন বাংলাদেশ। সেই সময়ে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিউ সোয়ে ঢাকায় এলে তার হাতেই তালিকা তুলে দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বলা হয়েছিল- দ্রুততম সময়ের মধ্যে তালিকা যাচাই-বাছাই করে তাদের গ্রহণে আপত্তি বা অনাপত্তি জানাবে মিয়ানমার। কিন্তু সাড়ে ৪ মাসেও সেই ‘দ্রুততম সময়’ শেষ হয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন- যাচাই-বাছাইয়ে কমপক্ষে দু’মাস সময় নেয়ার কথা রয়েছে চুক্তিতে। কিন্তু সর্বোচ্চ কতদিন সময় পাবে মিয়ানমার তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। ফলে মিয়ানমার সেই সুযোগটিই নিচ্ছে। অন্যদিকে তারা এ পর্যন্ত যে ২,১৫৪ বাস্তুচ্যুতকে (রোহিঙ্গা) গ্রহণে অনাপত্তি দিয়েছে তারাও এখন ফিরতে গররাজি। ফেরার শর্ত হিসেবে এতদিন নিরাপত্তা, পুরনো বসত এলাকায় পুনর্বাসন, বাধাহীন চলাফেরা, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মক্তব, মাদরাসায় যেতে দেয়াসহ কাজকর্মে যোগদানের সুযোগ এবং নাগরিকত্বসহ মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিল তারা।
কিন্তু প্রত্যাবাসনের পূর্ব শর্ত হিসেবে নির্যাতনের বিচারের দাবিটি যুক্ত করে দিয়েছে ভেরিফাইড বা যাচাই-বাছাইকৃত রোহিঙ্গারা। সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন একদিকে যাচাই-বাছাইয়ে মিয়ানমারের ধীরগতি অন্যদিকে ভেরিফাইড রোহিঙ্গাদের নতুন শর্ত আরোপে জটিল সমীকরণের দিকেই যাচ্ছে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। যদিও চীনসহ রোহিঙ্গা সংকটের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতায় উৎসাহদাতা বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো চাইছে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে! তারা প্রতিনিয়ত এ নিয়ে বাংলাদেশকে তাগিদ দিচ্ছে। ওদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় গত আগস্ট থেকে অবস্থান করছে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা। তারা শূন্য রেখাতেই রয়েছে, বাংলাদেশে ঢুকেনি বা ঢুকতে পারেনি। এদের যাচাই-বাছাই ছাড়াই  ফেরত নেয়ার বিষয়ে গত ২০শে ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে দুই দেশের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু ৫ মাসেও তাদের ফেরানোর বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই! উল্লেখ্য, গত ২৩শে জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার নির্ধারিত ডেডলাইন ছিল।

No comments

Powered by Blogger.