রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে মান্নার ক্যাম্পেইন শুরু

রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সচেতন করে তুলতে প্রচারণা শুরু করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট স্টেট কোরাপশন’ শীর্ষক এক সংবাদ  সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দেন। বলেন, রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বাংলাদেশকে শেষ করে ফেলছে। দুর্নীতির মাধ্যমে সমাজের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে চলে যাওয়া টাকা শেষ পর্যন্ত দেশে না থেকে পাচার হয়ে যায়। এখন প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়।
যেগুলো আর কখনো ফিরে আসে না। গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির তথ্য মতে ২০০৫ থেকে ২০১৪ এই দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে কমপক্ষে ৬ লাখ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২০১৪ সালে হয়েছিল ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের নিরিখে ২০১৪ সালকে ভিত্তি ধরে এটা যৌক্তিকভাবে অনুমান করাই যায় পাচারের অঙ্ক এখন বছরে কমপক্ষে ১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, মানুষকে দুর্নীতির বিষয়ে সচেতন করতে তাদের যথেষ্ট তথ্য দিতে হবে।
এর মাধ্যমে মানুষকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। মানুষের এই জানাশোনা, সচেতনতা তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রণোদনা যোগাবে। মান্না বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। তাই ক্যাম্পেইন এর জন্য যতগুলো মাধ্যমে সম্ভব আমরা প্রচারণা চালিয়ে যেতে চাই। আমাদের এই লড়াইয়ে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে আমন্ত্রণ জানাব। কারণ, এই সমস্যা আমাদের সকলের। আমরা একটি ফেসবুক পেজ খুলেছি।
সেখানে রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য দুর্নীতির তথ্য দেব। আশা করি সকলে নিজের জায়গা থেকে দুর্নীতির তথ্য আমাদের পেজে দিয়ে সহযোগিতা করবেন। তাহলে সাধারণ মানুষের কাছে খুব সহজেই দুর্নীতির তথ্যগুলো পৌঁছে যাবে। মান্না বলেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি এতটাই সর্বগ্রাসী যে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেই না, ছড়িয়ে পড়েছে বেসরকারি সেক্টরেও।
এখন ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার নিচে সরকারি একটি পিওনের চাকরিও পাওয়া যায় না। বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের সেবা পেতেও ঘুষ দেয়া লাগে। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতি হয় না। দেশের বেশির ভাগ মানুষ প্রান্তিক দুর্নীতির সরাসরি ভুক্তভোগী বলে তারা শুধু সেটা সম্পর্কেই কম-বেশি ধারণা রাখে। দুর্নীতি এ দেশে কতটা বীভৎস পর্যায়ে চলে গেছে সেটা তারা অনেকেই জানে না।
তারা এটা বোঝেও না। এই রাষ্ট্রের কাছ থেকে শিক্ষা-স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তাখাতসহ অন্যান্যখাতে তাদের যা যা প্রাপ্য সেসব তারা সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণেই পায় না বলে আমরা বিশ্বাস করি। মান্না বলেন, জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি দেখিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার দাবি করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশে অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান আমাদের ভিন্ন গল্প বলে। মেগা প্রকল্প ছাড়াই দেশে এখন প্রতি বছর দুর্নীতি হয় কমপক্ষে ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
১০ হাজার কোটি টাকা বাজেটের পদ্মা সেতুর বাজেট এখন ৪০ হাজার কোটি টাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার ভূপেন হাজারিকা সেতুর নির্মাণ ব্যয় যেখানে ১১৫০ কোটি টাকা সেখানে ৯ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা। শেষ হতে হতে কত হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে সেটা দেখার বিষয়। তিনি বলেন, সারা বিশ্বে প্রতি কিলোমিটার রেললাইনের খরচ ১২ থেকে ৩০ কোটি টাকা। সেখানে ঢাকা-পায়রা বন্দর রেললাইনের খরচ হচ্ছে কিলোমিটার প্রতি ২৫০ কোটি টাকা।
সেতু, রেললাইন, সড়ক, ফ্লাইওভার সব কিছুতে ব্যয় বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় ৪/৫ গুণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ, জনতা ব্যাংক (এননটেক্স গ্রুপ), সোনালী ব্যাংক (হলমার্ক), বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আজকের পত্রপত্রিকা খুললে দেখবেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ৯৬৩ কেজি স্বর্ণের চাকতি রাখা হয়েছিল সেগুলো ভুতুড়েভাবে মিশ্র ধাতু হয়ে গেছে।
তার মানে রাখা হলো সোনা তা হয়ে গেল তামা- বিষয়টা অনেকটা এমন। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এ ভয়ংকর অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না। এমনকি পৃথিবীর কোনো দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরি ও ভল্টে রাখা সোনা গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা পাওয়া যায় না।  সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের  ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার ও মমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.