কারাগারে আলোচিত ‘হকার নেতা’ রকিব by ওয়েছ খছরু

মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার হলো সিলেটের আলোচিত হকার শ্রমিক নেতা রকিব আলী ওরফে আব্দুর রকিবকে। এই মুহূর্তে সিলেটের মেয়র ও ব্যবসায়ীদের সব ক্ষোভ তার উপর। রকিবের নেতৃত্বে চলছিলো সিলেটের ফুটপাথ ও রাস্তায় ব্যবসা। অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসিয়ে কারবার চালাচ্ছিলেন হকারের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় নি। তবে- রকিবসহ শতাধিক হকারদের বিরুদ্ধে মামলা ও রকিবকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল সিলেটে বিক্ষোভ করেছে হকাররা। তারা অভিযোগ করেছে- ভোটকে সামনে রেখে মেয়র আরিফ পুরো ঘটনাটি সাজিয়ে মঞ্চায়ন করেছেন। আরিফ নিজেও হকারদের একটি অংশকে গোপনে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। সিলেট নগর ভবনের চত্বরে সোমবারের ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি অবস্থান ছিল সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হকার শ্রমিক নেতা আব্দুর রকিবের। অপ্রীতিকর এ ঘটনার পরপরই রাতে আরিফুল হক চৌধুরী হকারদের বিরুদ্ধে ‘অলআউট’ অ্যাকশনে যেতে নিজের অনুসারী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি সিলেটের হকার শ্রমিক নেতা আব্দুর রকীবকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন সিলেটের প্রশাসনকে। এই আলটিমেটামের পরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিলেটের কোতোয়ালি থানায় হকার শ্রমিক নেতা আব্দুর রকীব সহ শতাধিক হকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের আইন সহকারী শ্যামল রঞ্জন দেব। এদিকে- থানায় হকারদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়েরের পর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন তারা। তারা তাৎক্ষণকি এ মামলার প্রতিবাদ জানায়। সিলেট হকার নেতা শাহজাহান জানিয়েছেন- ওই নগর মেয়র সহ সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা রকীব সহ অন্য হকারদের ডেকে নিয়ে নিজ হাতে নগর ভবনের ভেতরে পিঠিয়েছেন। এসব ছবি ও ভিডিও ফুটেজ আছে। এরপরও উল্টো হকারদের বিরুদ্ধে মারধর ও হামলার ঘটনায় মামলার বিষয়টি ন্যক্কারজনক বলে দাবি করেন তিনি। মামলা দায়েরের পর রাত পৌনে একটার দিকে হকার কল্যাণ সমিতির নেতাদের নিয়ে নগরী বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থান করছিলেন হকার্স শ্রমিক নেতা আব্দুর রকিব। এ সময় সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের পরপরই সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানিয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশনে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি। এদিকে- গতকাল দুপুরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ রকিবকে আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এদিকে- থানা থেকে আদালতে নেয়ার পথে হকার শ্রমিক নেতা আব্দুর রকিব সাংবাদিকদের বলেন- মেয়রসহ সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ও হকারদের মারধর করে আহত করেছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এখন গ্রেপ্তার করিয়েছে। তিনি বলেন- মেয়র নিজেই ফুটপাথ উচ্ছেদ চায় না। চাইলে হকারদের পুনর্বাসনের মার্কেট বিক্রি করে দিতো না। তিনি বলেন- তিনি মেয়রের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার। রকিবকে গ্রেপ্তার করলেও রাতে সিলেটের ফুটপাথ ও রাস্তা হকারদের দখলেই ছিল। তবে- গতকাল দুপুর পর্যন্ত কোনো হকারকে রাস্তায় দেখা যায়নি। তবে ভ্যানে করে থাকা ভাসমান ফল ও সবজি বিক্রেতারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ব্যবসা করতে দেখা যায়। সিলেটে এখন কাপড় ব্যবসায়ী হকারদের তেমন দাপট নেই। যারা ফল, সবজি সহ নানা পণ্যের বিক্রেতারা তাদের দেখা যায় বেশি। এদিকে- রকিবকে গ্রেপ্তারের পরপরই তার মুক্তির দাবিতে রাতেই সিলেটে বিক্ষোভ করেছে হকাররা। এ সময় তারা রকিবের মুক্তি দাবি জানান। মিছিলটি নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় হকারদের মালামাল লুট ও হকার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. রকিবের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের জোর দাবি জানানো হয়। মহানগর হকার্স লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে ও হকার্স কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোকন ইসলামের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কোষাধ্যক্ষ আব্দুর রহিম, হকার্স লীগের সহসভাপতি মতিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাশার, সহসাংগঠনিক সম্পাদক রোমন আহমদ, হকার্স দলের সভাপতি আব্দুর রহিম, লোকমান আহমদ প্রমুখ। কয়েক মাস আগে সিলেটে আদালতে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ফলে আদালতে হাজির হলে কারান্তরীণ হয়েছিলেন হকার শ্রমিক লীগ নেতা আব্দুর রকিব। তবে- রকিব কারাগারে গেলেও হকারদের দৌরাত্ম্য কমেনি। এরপর পরিবহন শ্রমিক নেতা, হকার নেতাদের আরো কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল। এরপরও সিলেটের ফুটপাথের ব্যবসা কমেনি। হকাররা আগের মতোই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যান। অবস্থান কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় নগরবাসীও হতবাক হয়েছে। নতুন করে গত তিন মাস ধরে সিলেটের ফুটপাথে হকারদের দাপট বেড়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় হাসান মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেট, করিম উল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ থাকলেও সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্তারা ছিলেন ঘুমে। রমজানের শুরুতেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি করপোরেশন। এ কারণে সিলেটের মেয়র আরিফের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ীরা। অবশেষে আরিফ ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে হকার উচ্ছেদ করতে এই ‘অলআউট’ অ্যাকশনে নামলেন। এতে সফল হয়েছেন তিনি।
কে এই রকিব : সিলেটের হকার শ্রমিক নেতা রকিব সিলেটের এক পরিচিত নাম। রকিবের বাড়ি সিলেটের বাইরে। নগরীতে নিজেই হকার রকিব। ফেরি করে বিক্রি করতো বিক্রি করতো। আর তাকে ঘিরেই নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে কাপড় ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রকিবের উত্থান শুরু হয়। এখন সে হকার্স শ্রমিক লীগ নেতাও। সিলেটের শ্রমিকলীগের শক্তিধর অবস্থান হয়েছে রকীবে। মেয়র হওয়ার পর থেকে আরিফের চক্ষুশূল আব্দুর রকিব। কিন্তু কোতোয়ালি থানা ও বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশের শেল্টার নিয়ে রকিব ছিলেন মহা দাপটবাজ। রকিব এখন সিলেট নগরীর শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা। তার সঙ্গে রয়েছে সিলেটের কয়েক হাজার হকার। এ কারণে সিলেটে হকার ইস্যু নিয়ে যখনই কথা শুরু হয় তখন সবার আগে আসে রকিবের নাম। এই রকিবকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখন প্রশ্ন হলো রকিব তো গ্রেপ্তার- আদৌ কী উচ্ছেদ হবে সিলেটের হকাররা।

No comments

Powered by Blogger.