৩৮ বছর ধরে সেহরি খেতে ডাকেন শাহজাদপুরের সামাদ by সাগর বসাক

‘ঘুমে ওয়ালী জাগো হে, আল্লাহর দাওয়াত করো কবুল’- এই গজল গেয়ে গেয়ে প্রায় ৩৮ বছর একটানা রমজান মাসের প্রতিটি দিনের আগের গভীর রাতে শাহজাদপুরের রূপপুর পুরাতনপাড়া মহল্লা, রূপপুর দক্ষিণপাড়া মহল্লা, রূপপুর নতুনপাড়া মহল্লা ও পাঠানপাড়া মহল্লার মুসলমানদের প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে রোজার দাওয়াত দিয়ে চলেছেন শাহজাদপুরের আব্দুস সামাদ। কখনও বা লাঠি হাতে, আবার কখনও বা লাঠির সঙ্গে বাঁশি নিয়ে একাকী আঁধার রাতে দুষ্কর ও কষ্টসাধ্য ওই কাজটি তিনি করে চলেছেন। লেখাপড়া খুব একটা করার ভাগ্য নিয়ে জন্মাননি তিনি। কিন্তু তার পরেও একজন মুসলমান হয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধে সর্বশক্তিমান আল্লাহু সুবহানু তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটানা ৩৮ বছর ঘুমন্ত রোজাদার মুসলমানদের ঘুম থেকে ডেকে রোজা রাখার জন্য সেহরির প্রস্তুতির যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। ওই কয়েকটি পাড়ামহল্লার এমন একজন মুসলমানকে খুঁজে পাওয়া সত্যই দুষ্কর যে গভীর রাতে তার রোজার দাওয়াত সম্পর্কে তিনি অবগত নন। শাহজাদপুর পৌরসভায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকর্মী আব্দুস সামাদ বর্তমানে বয়সের ভারে নুব্জ হলেও তার দাওয়াতি আদর্শ থেকে একদিনের জন্যও বিচ্যুতি হননি। গত ১৬ বছর সার্কুলার না আসায় পৌরসভায় তার নিয়োগও স্থায়ী হয়নি। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি আল্লাহর করুণা লাভের জন্য এভাবেই ঘুমন্ত রোজাদারদের ডেকে রোজার দাওয়াত দিয়ে যেতে চান। সেইসাথে ২ মেয়ে ২ ছেলে ও স্ত্রী’র অভাবী সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ও পরিবারের ভবিষ্যত শান্তির জন্য শাহজাদপুর পৌরসভায় তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্থায়ীকরণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই রসিকতার কারণে স্থানীয় অনেকেই তাকে টেলিসামাদও বলে ডেকেছেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনার দুর্গম গালা ইউনিয়নের পাড়াদুগালী গ্রামের হতদরিদ্র মৃত আজগার আলী শেখের ছেলে হতদরিদ্র আব্দুস সামাদ গত ১৯৭৭ সালে গ্রামের বাড়ি পাড়াদুগালী থেকে শাহজাদপুর পৌরসদরের রূপপুর পুরাতনপাড়া মহল্লার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান বদি’র রাইসমিলের ড্রাইভারি করার জন্য গ্রাম থেকে শহরে আসেন। এরপর থেকে বদিউজ্জামান বদির বাড়িতেই থেকে রাইসমিলে ড্রাইভারি করতেন। ১৯৮০ সালে রূপপুর মহল্লার মৃত তাজের উদ্দিন ব্যাপারী ছেলে শাহাদৎ হোসেন সাঈদের সঙ্গে গজলপার্টি করেছেন। তখন থেকেই গত ৩৮ বছর ধরে রমজানের প্রতি রাতেই ওই কয়েকটি মহল্লার মুসলমানদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ঘুমন্ত রোজাদারদের রোজা রাখার দাওয়াত দিয়ে চলেছেন। 
সুদীর্ঘ ওই ৩৮ বছরের দু’চারটি রাতে ঝড়বৃষ্টি হলেও ছাতি নিয়ে এমনকি তিনি অসুস্থ থাকাবস্থায়ও একই দাওয়াত দিয়ে চলেছেন। এ ব্যাপারে আব্দুস সামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র আল্লাহপাকের ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভের জন্যই তিনি একটানা ৩৮ বছর রমজান মাসের প্রতিটি রাতে রূপপুর পুরাতনপাড়া মহল্লা, রূপপুর দক্ষিণপাড়া মহল্লা, রূপপুর নতুনপাড়া মহল্লা ও পাঠানপাড়া মহল্লার মুসলমানদের প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে গজলের মাধ্যমে প্রত্যয়ী ঘুমন্ত রোজাদারদের ডেকেছেন ও মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ডেকে যেতে চেয়েছেন।’

No comments

Powered by Blogger.