নাসিরনগরে অপহৃত শিশুর লাশ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ২

নাসিরনগরে মাদরাসাছাত্রী শিশু রিয়া আক্তার (৮) হত্যা মামলায় শাহ আলম (৫৩) ও সাইফুল (৩২) নামের ২ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হত্যার দায় স্বীকার করেছে আসামি সাইফুল। শাহ আলমের অন্যতম সহযোগী সাইফুল একজন পেশাদার কিলার এমনটি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। পুলিশ ওই ২ আসামির ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠিয়েছেন। ওদিকে একমাত্র শিশু কন্যার নির্মম হত্যাকাণ্ডে ভেঙে পড়েছেন রিয়ার লন্ডন প্রবাসী পিতা আবদুল আজিজ। আর মা তুহুরা বেগম খাওয়া ছেড়ে দিয়ে এখন বাকরুদ্ধ। পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানায়, গত ৩-৪ বছর ধরে লন্ডনে আছেন ধরমণ্ডল গ্রামের আবদুল আজিজ। তার ২ ছেলে ও ১টি মাত্র মেয়ে রিয়া। ধরমণ্ডল দাখিল মাদরাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রিয়া। গত সোমবার সন্ধ্যায় পাশের বাড়ির শাহ আলমের ঘরে হালুয়া রুটি দিয়ে রিয়াকে পাঠায় তার পরিবারের লোকজন। রুটি দিতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি রিয়া। বাড়িঘরসহ গোটা গ্রামের কোথাও খুঁজে না পেয়ে ভেঙে পড়ে রিয়ার মা ভাইয়েরা। নিজেদের স্বজনদের বাড়িতেও রিয়ার সন্ধান মিলেনি। পরের দিন ১লা মে মঙ্গলবার রিয়ার চাচা আবুল বাশার নাসিরনগর থানায় একটি নিখোঁজের জিডি করেন। গত বুধবার বিকালে শাহ আলমের ছেলে শামীমের টিনের ঘরের পূর্ব পাশের জঙ্গলের কাছে খেলতে যায় রিয়ার কয়েকজন সহপাঠী। জঙ্গলের কাছেই ছিল শামীমের ভাঙা সেপটিক ট্যাংক। তারা খেলতে খেলতে ট্যাঙ্কির কাছে গিয়ে দেখে ভেতরে বস্তার একটি বড় প্যাকেট দেখা যায়। বাচ্চারা তখন বস্তাটি দেখার জন্য কৌতূহলী হয়ে ওঠে। তাদের চিৎকার শুনে দৌড়ে আসে রিয়ার স্বজনরা। তারা ওই ট্যাঙ্কি থেকে বস্তার প্যাকেটটি তুলে ভেতরে দেখেন শিশু রিয়ার লাশ। পুলিশ এসে রিয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। নিহত রিয়ার গলায় একটি দাগ ছিল। আর বস্তাটির ভেতরে ছিল ৪টি ইট। নাক দিয়ে ঝরছিল রক্ত। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি প্যাথেড্রিন ইনজেকশনের খালি কৌটা উদ্ধার করেছে। এ সময় শামীমসহ বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। তবে পুলিশ শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করেছে। শাহ আলমের অন্যতম সহযোগী সাইফুল ইসলাম পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ পেছনের দিকে ধাওয়া মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা গ্রামের বিলের কাছ থেকে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করেন এসআই সাধন কান্তি। নিহত শিশুর মা তুহুরা বেগম বাদী হয়ে শাহ আলমকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরো ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিষ্পাপ শিশুটির হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত বৃহস্পতিবার ২ আসামির ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে পুলিশ। নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু জাফর বলেন, এ ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন ও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.