স্থানীয় নির্বাচনে মন্ত্রী এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দিতে বিধি সংশোধন হচ্ছে

সিটি করপোরেশনের ভোটে প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছেন মন্ত্রী এমপিরা।   নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধনের ফের উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ চেয়ে প্রস্তাব দেয়ার পরে এক সপ্তাহের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় আচরণবিধি সংশোধনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানায়। কমিশনের আইন ও বিধি সংস্কার কমিটিকে বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত ইসির একজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে বৈঠক শেষে বিষয়টি অস্বীকার করে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইসি সচিব বলেন, এমপিরা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির আওতায় আছেন। এটা যদি ইউপি পৌরসভায় প্রযোজ্য হলেও সিটি করপোরেশন এলাকা বিরাট এলাকায় যদি নির্বাচন হয় যারা অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাদের বাইরে থাকতে হয়। এ বিষয়টি বিবেচনা করেই সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলোচনাটা হয়েছে। এমপিরা কোনো অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না বা সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কি না- এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা একটা কমিটি গঠন করেছেন কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কারে যে কমিটি আছে ওই কমিটি উনারা ইস্যুটি পর্যালোচনা করে একটা রিপোর্ট দেবেন। এরপরে বিষয়টি উনারা কমিশনে উত্থাপন করবেন। বিএনপিও কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। এগুলো নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না বা কমিশন সভা করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। যেহেতু আচরণবিধি সংশোধনের বিষয় আছে। কী কী সংশোধন আসতে পারে কমিটি একটি প্রস্তাব দেবে। এজন্য কমিটিকে কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। দ্রুত সম্ভব প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। তফশিল ঘোষণার পর এই উদ্যোগ কেন? সচিব বলেন, আচরণবিধি মাঝেমধ্যে আপডেট করা লাগে। আগে দলীয় প্রতীকে হতো না, এখন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। তখন এক ধরনের প্রেক্ষাপট, এখন আরেক ধরনের প্রেক্ষাপট। স্বাভাবিকভাবে এমপিরা এলাকায় যেতে পারেন না। এটা আপডেট করার জন্য আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের চাপে এই উদ্যোগ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চাপে না। যেকোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনের স্টেক হোল্ডার। তাদের নিয়ে কাজ করতে হয়। তাদের নিয়ে পরামর্শ করে আলাপ-আলোচনা করে তাদের সুবিধা অসুবিধাগুলো আমরা বিবেচনা করি। আবেদন-নিবেদন করলে ইসি বিষয়গুলো বিবেচনা করে। অন্য এমপি আসতে পারবে কি না- এগুলো বিবেচনা করে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। আইন মন্ত্রণালয়ে যেতে হয়।  বিষয়টি কমিশন ইতিবাচকভাবে দেখছে বলে সচিব জানান। এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। এটা প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনে কার্যকর হতেও পারে, নাও হতে পারে। গাজীপুরের এসপির বিষয়ে বিএনপির দাবির বিষয়ে সচিব বলেন, বিএনপির অভিযোগ ঢালাও। যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না দেয়া হলে একজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। এর আগে ২০১৫ সালে দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়া না দেয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নাম উল্লেখ না করে সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারের (সরকারি যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বাদ দিয়ে) সুযোগ করে দিয়ে খসড়া তৈরি করে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে সরকারি সুবিধাভোগীদের সফর ও প্রচারণায় অংশ নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মন্ত্রী-এমপিদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি করা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার গাজীপুর ও খুলনার সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রী-এমপির ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণারোপ না করার দাবি জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছিলেন, সামনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের চলাফেরার ওপরে যাতে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়। যাতে স্বাভাবিক কাজে বাধা না দেয়, তা দেখতে বলেছি।

No comments

Powered by Blogger.