স্বল্প পরিসরে প্রবাসীদের ভোটার করার সুপারিশ -ইসি’র সেমিনার

স্বল্প পরিসরে হলেও প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দেয়ার কাজ শুরুর তাগিদ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালট ও প্রক্সির মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান ও ভোটাধিকার প্রয়োগ’ সংক্রান্ত সেমিনার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। এ সেমিনারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা; সাবেক নির্বাচন কমিশনার, রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রবাসী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। মূল প্রবন্ধে প্রবাসীদের এনআইডি দেয়ার প্রক্রিয়ায় সুবিধা-অসুবিধা, চ্যালেঞ্জ ও ইসির উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রবাসীদের ভোটার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে সুবিধা-অসুবিধা বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান সেমিনারে ইসির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করতে এনআইডি উইং ও এমআরপি যৌথভাবে কাজ করতে পারে। ভোটের বিষয়টি জটিল হলেও এনআইডি দেয়ার প্রক্রিয়া নেয়া যেতে পারে। তবে দ্বৈত নাগরিকদের ভোটার করায় সমস্যা রয়েছে। পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেয়ার ব্যবস্থাও বেশ কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ভোট দেয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, ভোট দিতে এনআইডি লাগে না। সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের এনআইডি দেয়ার দ্রুত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত। প্রবাসীদের ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা বাধা থাকতে পারে। কিন্তু এনআইডি দেয়ার কাজটা কষ্টকর হলেও কঠিন নয়। এমআরপি দেয়া সম্ভব হলে এনআইডিও দেয়া যাবে। যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করলে প্রবাসীদের জন্য বেশ ফলোপ্রসূ উদ্যোগ হবে। সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি আরবের মতো বড় কোনো দেশে কাজ শুরু না করে ছোট্ট কোনো দেশে যেখানে কম প্রবাসী রয়েছে তাদের পরীক্ষামূলকভাবে এনআইডি দেয়া যায়। এ অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে কাজে লাগানো সম্ভব হবে। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য হয়তো প্রবাসীদের ভোটার করা যাবে না। তবে এরপরেই বাস্তবতা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়া যায়। পাশাপাশি এমআরপি রয়েছে তাদেরকেই প্রথমে অগ্রাধিকার দিয়ে এনআইডি দেয়া যেতে পারে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন তাদের সময়কার নেয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা উদ্যোগ শুরু করেছিলাম। বর্তমান কমিশনও তাদের মেয়াদে প্রবাসীদের বিষয়ে কাজ করতে পারলে ভালো হবে। তাড়াহুড়ো করলে জাতীয় নির্বাচনের আগে তা  সম্ভব হবে না। তবে কাজটা যেন চলমান থাকে। সৌদি আরবের নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের চিত্র তুলে ধরে জানান, ২১ লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৪৫ শতাংশ লোকের হাতে এনআইডি নেই। ইসি উদ্যোগ নিলে দূতাবাস সব ধরনের সহায়তা করবে। প্রবাসীদের এনআইডির প্রয়োজন প্রতিটি ক্ষেত্রে। ভোট দেয়ার ব্যবস্থা লাগবে না। ভোট বড় কথা নয়। কিন্তু এনআইডি যেন পায়, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, এনআইডি দেয়াও ভীষণ রকমের কঠিন কাজ। প্রবাসী অনেকেই দেশে এসে এনআইডি করেছে। কিন্তু যাদের নেই তাদের মধ্যে এমআরপিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আরো আলোচনার তাগিদ দেন তিনি। ইতালিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার ও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ মিশনের ডেপুটি চিফ মাহবুব হাসান সালেহ জানান, দ্বৈত ভোটারদের এনআইডি দেয়ার সুযোগ নেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নাহিদা রহমান সুমনা, ইয়াসমিন আকবরী আলোচনায় অংশ নেন। সেমিনারের শুরুতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা জানান, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার করতে দ্বৈত নাগরিকতা প্রধান সমস্যা। বর্তমানে প্রক্সি ভোট ও পোস্টাল ভোটের নিয়ম আছে। এর মাধ্যমে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারেন। আগামী নির্বাচনের আগে এসব পদ্ধতি নিয়ে প্রচারণা চালানো হবে। ইসি কর্মকর্তারা বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে প্রবাসে তাদের ভোটার করলে এ নিয়ে সমস্যা বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.