বিশ্ব গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ: এই হামলা থেকে কী অর্জন করলো পশ্চিমা দেশগুলো?

সিরিয়া বিষয়ে গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ম্যাটিস এবং সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ জেনারেল ডানফোর্ড
বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাংক গার্ডনার তাঁর বিশ্লেষণে লিখেছেন, ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের এই হামলার লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের সরকারকে এমন একটা ধাক্কা দেয়া যাতে করে তারা আবার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। তবে এই হামলা এত ব্যাপক নয় যে তা সিরিয়ার যুদ্ধের ভারসাম্য পাল্টে দেবে বা রাশিয়া এর শোধ নেয়ার জন্য পাল্টা হামলা চালাবে।
ফ্রাংক গার্ডনার আরও বলছেন, প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে রাজকীয় বিমান বাহিনীকে হামলার সবুজ সংকেত দেয়ার আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এ নিয়ে এটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা এই হামলার আইনগত বৈধতার খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করেন।
২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় ব্রিটেন যে ভুল করেছিল, সে ব্যাপারে 'চিলকট তদন্ত রিপোর্টে' যেসব সুপারিশ ছিল, সেগুলো মাথায় রেখেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি জানতে পারছেন। কারণ এই সিদ্ধান্তের আইনগত বৈধতাও হয়তো একদিন আইনজীবীরা পরীক্ষা করে দেখবেন। আর হামলার লক্ষ্য বস্তু বাছাইয়ের সময় রাশিয়ার কথাটাও তারা মাথায় রেখেছেন। হামলার পরিকল্পনাকারীদের বিশ্বাস ছিল, রাশিয়া যেন শোধ নিতে পাল্টা হামলা না চালায় সেই ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় তাদেরকে আগে থেকে সতর্ক করে দেয়া এবং সিরিয়ায় তাদের কোন অবস্থানে হামলা না চালানো।
নিউ ইয়র্ক টাইমস
"প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত সপ্তাহে যত কড়া হাঁকডাকই দিন, শেষ পর্যন্ত তিনি যে পথ বেছে নিয়েছেন তাতে প্রেসিডেন্ট আসাদের 'ব্যাপক যুদ্ধ যন্ত্রকে' বা সামরিক বাহিনীর ওপর তার সরকারের যে কর্তৃত্ব এবং নিয়ন্ত্রণ, তার ক্ষতি করার কোন আপাত চেষ্টা এতে ছিল না। এক রাতের এই বোমা হামলা সিরিয়ায় বিভিন্ন শক্তির সার্বিক ভারসাম্যে কোন পরিবর্তন আনবে এমন সম্ভাবনা কম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা করছেন এটি হয়তো প্রেসিডেন্ট আসাদকে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে বিরত রাখতে যথেষ্ট।"
ওয়াশিংটন পোস্ট
"যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে কোনঠাসা করে, তাহলে তিনি চুপচাপ বসে থাকার সম্ভাবনা কম। যদি কোন কিছুই তিনি না করেন, তাহলে সিরিয়ায় রাশিয়ার কষ্টার্জিত বিজয় হুমকিতে পড়বে, রাশিয়ার মর্যাদা এবং তার 'কঠোর ভাবমূর্তি'র ক্ষতি হতে পারে।"
গার্ডিয়ান, লন্ডন
"আগে থেকে জল্পনা ছিল যে এরকম হামলা হলে তা থেকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। আসলে এটা তার ধারে-কাছেও না। এই হামলা একটিতেই সীমাবদ্ধ, নতুন করে হামলার কোন পরিকল্পনা নেই। যদি না বাশার-আল-আসাদ ভবিষ্যতে আবার রাসায়নিক হামলা চালান।
মোটামুটি সার্বিক উদ্দেশ্যটা ছিল প্রেসিডেন্ট আসাদকে রাসায়নিক হামলা থেকে বিরত রাখতে একটি বার্তা পাঠানো। একই সঙ্গে রুশ এবং ইরানী অবস্থানগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা, যাতে করে তাদের সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার মাধ্যমে সংঘাত আরও বিস্তৃত না হয়।"
আল জাজিরা
কাতার ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের এই হামলা আসলে এই সংকটের সামান্যই সমাধান করতে পেরেছে, কারণ, তাঁর ভাষায়, "যে ব্যক্তি সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলার জন্য দায়ী, তার কিছুই হয়নি।"
"এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন জড়িয়ে পড়েছিলেন মনিকাই লিউনস্কি কেলেংকারিতে, তাই হামলা করেছিলেন সুদান এবং পরে আফগানিস্তানে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন 'স্টর্মি ডানিয়েল' এবং তার আইনজীবীর কেলেংকারি নিয়ে সংকটে আছেন, কাজেই নিজেকে প্রেসিডেন্টসুলভ প্রমাণের জন্য তিনি এই হামলা করেছেন।"

No comments

Powered by Blogger.