মিয়ানমারে প্রথম রোহিঙ্গা পরিবারের প্রত্যাবর্তন ‘শঠতা’

বাংলাদেশ থেকে প্রথম রোহিঙ্গা পরিবারের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ইউরোপে রোহিঙ্গা অধিকার কর্মীদের পরিচালিত ওয়েবসাইট রোহিঙ্গা ব্লগার বলছে, এই প্রত্যাবর্তন এক ধরনের  ‘শঠতা।’ শনিবার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকার ঘোষণা দেয় যে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে ৫ সদস্যের একটি পরিবার রাখাইনে ফিরেছে। গত বছরের আগস্টে রাখাইন অঙ্গরাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে মিয়ানমার। এর পর থেকে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মিয়ানমারের সামরিক অভিযানকে জাতিসংঘ বর্ণনা দিয়েছে ‘জাতিগত দমন অভিযানের প্রকৃষ্ট উদাহরণ’ হিসেবে। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, মিয়ানমার সরকারের ফেসবুক পোস্টে ওই রোহিঙ্গা পরিবারকে ফেরানোর ঘোষণার পাশাপাশি কিছু ছবিও দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, পাঁচ সদস্যের ওই পরিবারের হাতে পরিচয়পত্র তুলে দিচ্ছেন উর্দিধারী কর্মকর্তারা। এই পরিচয়পত্র অবশ্য নাগরিকত্বের সনদ নয়। ওই পরিবারকে স্বাস্থ্যসেবা ও রেশন দিতেও দেখা যায় ছবিতে।
সরকারি ওই ঘোষণায় রোহিঙ্গা পরিবারকে শুধু ‘মুসলিম’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদেরকে জাতিগত গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তবে আরো লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে কীভাবে বা কখন প্রত্যাবর্তন করা হবে, তার ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি ওই বিবৃতিতে।
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের এক নেতা বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে ওই রোহিঙ্গা পরিবারের ফিরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রোহিঙ্গা ব্লগার ওয়েবসাইট অবশ্য বলছে, ছবিতে দেখানো ব্যক্তিবিশেষ হলো টং পো লাত্যা গ্রামের প্রশাসকের পরিবারের সদস্যরা। যেসব শরণার্থী ফিরে যাবেন তাদের জন্য নির্ধারিত প্রবেশ পথ হলো এই গ্রাম।
রোহিঙ্গা ব্লগার ওয়েবসাইটকে একটি সূত্র জানায়, ‘রাখাইনে বর্তমানে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সেই অবস্থায় কেউ সেখানে ফিরে যাবেন, এটা শুনে আমরা হতভম্ব।’ ওয়েবসাইটটি বলছে, তাদের নিজস্ব তদন্ত শেষে জানা গেছে, মূলত অন্যান্য রোহিঙ্গা পরিবারকে ফিরে যেতে রাজি করাতেই এই সাজানো প্রত্যাবর্তন।
ওই পরিবারকে ফিরিয়ে নেয়ার অনুষ্ঠানকে ‘ভুয়া অনুষ্ঠান’ আখ্যায়িত করে ওয়েবসাইটটি বলছে, এর উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদেরকে প্রলুব্ধ করে মিয়ানমারে নিয়ে সেখানকার শিবিরে বন্দি করে রাখা।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ)-এর আন্দ্রিয়া জর্জেত্তা এএফপিকে বলেন, সরকারের ওই ঘোষণা ‘এক ধরনের জনসংযোগ প্রচেষ্টা, যার উদ্দেশ্য হলো রাখাইন রাজ্যে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিচার করার প্রয়োজনীয়তা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেয়া।’ তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া শুরুর আগে, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদেরকে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তাদের সকল মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

No comments

Powered by Blogger.