‘আওয়ামী লীগই দেউলিয়া হয়ে গেছে’ -চট্টগ্রামে মির্জা ফখরুল

বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই দেউলিয়া হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, কথায় কথায় তারা বলছে, বিএনপি নাকি গণতান্ত্রিক দল নয়। বিএনপি নাকি দেউলিয়া হয়ে গেছে। কিন্তু আমি বলব, গণতান্ত্রিক দল বলুন আর দেউলিয়াত্ব বলুন, তা সবসময় প্রমাণের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতাসীন দলের। প্রতিপক্ষ হিসেবে আপনারা বিএনপিকে রাজপথে নামতেই দিচ্ছেন না। খোলা মাঠে সভা-সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছেন না। এতে আওয়ামী লীগেরই দেউলিয়াত্বের প্রমাণ মেলে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় জনসভার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের জনসভায় এসব কথা বলেন দলটির মহাসচিব। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নুর আহমদ সড়কে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি যদি দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে মামলার ফরম্যাটে ফেলে জেলে ঢুকিয়ে রাখছেন কেন? নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছেন কেন? ক্ষমতা ছেড়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে আপনারাই প্রমাণ করুন, নিজের দেউলিয়াত্ব শেষ পর্যায়ের কোন স্তরে আছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার শুধু দাঙ্গাবাজ নয়, মামলাবাজও। যাদের গণতান্ত্রিক তো নয়ই, রাজনৈতিক দলের যোগ্যতাতেও পড়ে না। অতীতেও আমরা দেখেছি, এই আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে রাজপথে কিভাবে বোমা মেরেছে, সন্ত্রাসী করেছে। গাড়ি ভেঙেছে, পুড়িয়েছে। পুলিশের উপর হামলা করেছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে পেট্রোলবোমা মেরে বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়ে একের পর এক মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। মামলার ফরম্যাট করে যখন যাকে খুশি তাকে ওই ফরম্যাটে ফেলে জেল-জুলুম করছে। তিনি বলেন, দেশে তো এখন গণতন্ত্র বলতে কিছুই নেই। যে গণতন্ত্রের জন্য দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছে। দেশ স্বাধীন করেছে, সে গণতন্ত্র তো লুট করে নিয়ে গেছে। রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। কখন কাকে ধরে নিয়ে লাশ করে ফেলছে তার ঠিক নেই। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ছাড়াও সাধারণ মানুষ পর্যন্ত গুম, খুনের আতঙ্কে রয়েছেন। এটা কিসের লক্ষণ? মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল বলে দেশের ১২ কোটি মানুষের প্রিয় দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভীত বলে গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তবে যত চেস্টাই করুন, বিএনপির জনপ্রিয়তা কখনও কেড়ে নিতে পারবেন না। আজকের জনসভার জনসমুদ্র তারই প্রমাণ। লালদীঘির মাঠে জনসভার অনুমতি না দেয়ায় সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে না। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে। সরকার প্রধান হেলিকপ্টারে চড়ে ভোট চেয়ে জনসভা করছেন। আর আমাদের সভা করার অনুমতিও দিচ্ছেন না। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সদ্য কারামুক্ত নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন এই মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। নগর বিএনপির সাধারণ সমপাদক আবুল হাশেম বক্কর মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন। জনসভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর মো. নাছিরউদ্দিন, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, জয়নুল আবদীন ফারুক, রোজি কবির, এসএম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক  মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান, চাকসুর ভিপি নাজিম উদ্দিন, এমএ আজিজ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এসএম সাইফুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র সহসভাপতি শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি নেতা সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশা, অ্যাডভোকেট আবু তাহের, মহানগর যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফৌজুল কবির ফজলুসহ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতারা বক্তব্য দেন। এর আগে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিএস২২১ বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের প্রতি শোক জানিয়ে জনসভা শুরু হয় গতকাল বিকাল তিনটায়। সমাবেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালনে নেতাকর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেন। ওদিকে লালদীঘি পাড়ে সমাবেশটি করার ঘোষণা দিলেও পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহমদ সড়কে এ সমাবেশ করে বিএনপি। এর আগে সমাবেশকে ঘিরে গত ১৫ দিন ধরেই দফায় দফায় প্রস্তুতি সভা করে আসছিলেন বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা। দলটির পক্ষ থেকে লালদীঘি মাঠে সমাবেশ করার জন্য সিএমপির কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখাও করেছিল। কিন্তু পুলিশের পক্ষে সপষ্ট করে কিছু বলা হয়নি বিএনপি নেতৃবৃন্দকে। না বা হ্যাঁ কোনোটিই বলেনি পুলিশ। অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে ঝুলিয়ে রাখে। সর্বশেষ বুধবার রাতে ১১টার দিকে মৌখিকভাবে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভার অনুমতি পায় বিএনপি।

No comments

Powered by Blogger.