স্টিফেন হকিংয়ের পূর্বাভাস: ২০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী ছাড়তে হবে মানুষকে, নাহলে বিলুপ্তি ঘটবে

কিংবদন্তি বিজ্ঞানী প্রফেসর স্টিফেন হকিং মৃত্যুর আগে মানব জাতির প্রতি বেশ কিছু সতর্কবাণী রেখে গেছেন। তিনি বলেছেন, আগামী ২০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী ছাড়তে হবে মানুষকে। তা না হলে বিলুপ্তির পথে ধাবিত হবে মানব জাতি। তিনি বলেন, মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে গ্রহাণু, উল্কা। আরও বিপদের পূর্বাভাস দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, পৃথিবীতে অতিরিক্ত হারে মানুষ বাড়ছে। দেখা দিচ্ছে জনবায়ুর পরিবর্তন। সব মিলিয়ে মানুষ, বিশেষ করে ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি মহাশূন্যে অন্য কোনো গ্রহে আশ্রয় না নেয় তাহলে তারা বিলুপ্তির দিকে যাবে। ৭৬ বছর বয়সে বুধবার দিনের একেবারে শুরুর ক্ষণে মারা যাওয়া বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর এসব পূর্বাভাষকে মহা বিপদ সংকেত হিসেবে দেখা হয়। স্টিফেন হকিং বিশ্বাস করতেন, গ্রহাণুর আঘাত, অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কাছে শিগগিরই পৃথিবী থেকে বিনাশ ঘটবে জীবনের। তাই এই মানব জাতির যদি ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার কোনো প্রত্যাশা থেকে থাকে তাহলে তাদেরকে অন্য কোনো গ্রহ বেছে নিতে হবে। স্টিফেন হকিংয়ের সবচেয়ে বড় ভয়ের মধ্যে অন্যতম হলো বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। তিনি গত জুলাইতে সতর্ক করে বলেছেন, আমাদের ‘ফিজিক্যাল রিসোর্স’গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। আমাদের এই সবুজ গ্রহটিকে আমরা একটি বিপর্যয় উহার দিতে পেরেছি। তা হলো জলবায়ুর পরিবর্তন। বাড়ছে তাপমাত্রা। কমছে মেরু অঞ্চলের বরফ। উজার করা হচ্ছে বন। হত্যা করা হচ্ছে পশুদের।  তিনি বলেন, যদি আমরা গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমিয়ে না আনি তাহলে একটি পৃথিবীর তাপমাত্রা শুক্র গ্রহের সমান অর্থাৎ ৪৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যাবে। যদি কেউ জলবায়ু পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেন তাহলে তাকে শুক্র গ্রহে ভ্রমণে যেতে বলুন। এর খরচ আমি দেবো। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রেকে বের করে নিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তার এমন সিদ্ধান্তকে আমাদের এই গ্রহের জন্য ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেছেন স্টিফেন হকিং। তিনি বলেছেন, যদি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আমাদেরকে পৃথিবী থেকে উৎখাত করতে না পারে তাহলে গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীর ধ্বংস হবে। এটা কোনো সায়েন্স ফিকশনের কথা নয়। এটা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র দ্বিয়ে প্রমাণিত এবং এমন ঘটনা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় পৃথিবীতে অবস্থান করা হবে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা। তাই অন্য গ্রহে ছড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতের মানবজাতির পরিবর্তন আসতে পারে। এর মাধ্যমেই আমাদের কোনো ভবিষ্যত আছে কিনা তা নির্ধারিত হবে। স্টিফেন হকিং মনে করেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যেটাকে আমরা রোবট বলে থাকি, তারা মানুষের জায়গা দখল করবে। শিগগিরই তারা এমন এক পর্যায়ে আসবে যখন তারা মানুষের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান হবে। তাই যদি হয় তাহলে মানুষদের সরিয়ে দেবে এসব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে কতদিনে এমন পরিবর্তন ঘটবে সে বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস দেন নি হকিং। মারা যাওয়ার আগে তিনি ওয়ারড’কে একটি সাক্ষাতকার দেন। তাতে তিনি বলেন, আমার ভয় হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানব জাতির স্থান দখল করবে। যদি মানুষ কমপিউটার ভাইরাস ডিজাইন করেন তাহলে কেউ একজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ডিজাইন করবে এবং তার উন্নয়ন ঘটাবে এবং তার নিজের জায়গা দখল করবে তা। অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পর্কেও পূর্বাভাস দিয়েছেন হকিং। ২০১৬ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকার মন্তব্য প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, আমাদের সামনে ভয়ংকর পরিবেশ বিষয়ক চ্যালেঞ্জ। তা হলো জলবায়ুু পরিবর্তন, খাদ্য উৎপাদন, অধিক জনসংখ্যা, অন্য প্রজাতির প্রাণীকে হত্যা, মহামারী আকারে রোগ, সমুদ্রের পানি এসিডিকরণ। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি আরো স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি বলেন, এই ভঙ্গুর পৃথিবীতে মানুষ টিকে থাকবে আর ১০০০ বছর।

No comments

Powered by Blogger.