ঢাবিতে শিক্ষার্থীকে দফায় দফায় মারধর ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের

ধার নেয়া ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের এক শিক্ষার্থীকে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দফায় দফায় মারধর করে রক্তাক্ত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে তিন দফায় মারধর তারা। এতে ভুক্তভোগীর চোখের কর্ণিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আঘাতের ফলে ওই শিক্ষার্থীর মুখে বেশ কয়েকটি ক্ষত চিহ্নসহ শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভুক্তভোগী ঢাবির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এহসান রফিক। মারধরকারীরা হলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেলের অনুসারী। হল ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, মারধরের পরে অন্য হলের বন্ধুদের সহযোগিতায় আজ দুপুর আড়াইটায় পালিয়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে এহসান। এর আগে তাকে হলের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। বারবার ক্ষুদা-তৃষ্ণায় চিৎকার করলেও তাকে কোনো ধরনের পানি বা খাবার দেয়নি তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওমর ফারুক প্রায় তিন মাস আগে তার কাছ থেকে একটি ক্যালকুলেটর ধার নেয়। প্রায়ই তা ফেরত চাইলেও ফেরত দেয়নি। সর্বশেষ গতকাল রাতে ক্যালকুলেটর দাবি করলে ওমর ফারুক তাকে মারধর করে। পরে হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি আরিফের (আইইআর) মাধ্যমে এহসানকে টিভি রুমে ডেকে নেয়। এসময় টিভিরুমে উপস্থিত ছিলেন হল সহসভাপতি তানিম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আনিম ইরতিজা শোভন ও আবু তাহের। তারা এহসানকে শিবির অপবাদ দিয়ে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চেক করে। কিন্তু এর মাধ্যমে কোনো প্রমাণ বের করতে পারেনি। পরে জোরপূর্বক শিবির স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাকে বেদম মারধর করে। হল থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে হল গেটে বের করে দেয় তাকে। সেখানে আরেক দফায় হল শাখার সহ সম্পাদক ওমর ফারুক ও রুহুল আমিন, সদস্য সামিউল ইসলাম সামী, আহসান উল্লাহ, উপসম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেলের নেতৃত্বে রড, লঠি সোটা দিয়ে বেদম প্রহার করা হয়। মরধরের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এহসান। অবস্থা বেগতিক দেখে আরিফ রাত সাড়ে তিনটায় এহসানকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখান প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ে এসে হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদের (১৬ নম্বর) কক্ষে মারধরের তথ্য প্রকাশ না করতে হুমকি দিয়ে আটকে রাখা হয়। সকালে এহসানের অবস্থা খারাপ হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। সেখান থেকে হলে এনে একই কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে হল থেকে পালিয়ে আসে এহসান। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন এহসান। এ বিষয়ে এহসানের পিতা চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বলেন, এহসানের চোখের কর্ণিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় অপরাধীদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন আর কোনো বাবাকে তার সন্তানকে এভাবে নির্যাতিত না দেখতে হয় সেজন্য আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে হল শাখা সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, আমি অভিযুক্তদের হল থেকে বের করে দিয়েছি। আমি সোহাগ ভাইকে (কেন্দ্রীয় সভাপতি) বিষয়টি অবহিত করেছি। তাদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধরণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সকে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি। পরে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আলম জোয়ারর্দার জানান, অভিযোগ পেয়েছি, ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। উল্লেখ্য, এর আগেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোবাইল-ল্যাপটপ ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের শিবির অ্যাখ্যা দিয়ে মারধর করে ছাত্রলীগ। সম্প্রতি বিজয় একাত্তর হলের দুটি ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মারধর করে মোবাইল-ল্যাপটপ হাতিয়ে নিয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অভিযোগ আছে হল সভাপতি ফকির রাসেলের অনুসারী একটি চক্র এ ব্যাপারে খুবই সক্রিয়।

No comments

Powered by Blogger.