পৃষ্ঠা এলোমেলো, ছবি চেনা দায়

পৃ. ১১১ মাওলানা ভাসানীকে দেখে
চেনার কোনো উপায় নেই
সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও গতকাল সোমবার বই উৎসব হয়েছে। কিন্তু নতুন বই হাতে নিয়ে অনেক শিশুর মন খারাপ হয়েছে। বইয়ের পাতা এলোমেলো। কবির চেহারা চেনার উপায় নেই। লাল-সবুজের পতাকার রং পাল্টে গেছে। বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে এই বিভ্রাট বেশি হয়েছে। অনেক শিশু বই নেয়নি। আবার কেউ কেউ বদলে দেওয়ার শর্তে বই নিয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে মলাট ঝকঝকে হলেও এর ভেতরে ছাপা ঝাপসা। কোনো বইয়ের পৃষ্ঠা এলোমেলো। এই বইয়ের ৫৪ পৃষ্ঠার পরে ৫৫ পৃষ্ঠা হওয়ার কথা থাকলেও ৫৪-এর পরের পৃষ্ঠা নম্বর দেওয়া হয়েছে ৭০। এই বইয়ের ১৬টি পৃষ্ঠা বাদ পড়েছে। বইটির মলাট ওল্টালেই পতাকার একটি পরিষ্কার ছবি পাওয়া যাবে। কিন্তু বইয়ের ভেতরের পৃষ্ঠার ছাপা আর পরিষ্কার নয়। বইয়ের ৩৩ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি পতাকার ছবি ছাপা হয়েছে। এই পতাকার লাল অংশটুকু ফোটেনি। সবুজ রংটুকুও কালচে হয়ে আছে। ১০৮ পৃষ্ঠায় কবি পরিচিতি অংশে কবি শামসুর রাহমানের ছবি ছাপা হয়েছে। এতই কালিঝুলি মাখা ছবি যে নিচের নাম না পড়লে বোঝার উপায় নেই, সবার পরিচিত সুদর্শন চেহারার কবি শামসুর রাহমানের ছবি এটি। একই অবস্থা করা হয়েছে ৪৩ পৃষ্ঠায় কবি সুকুমার বড়ুয়া ও ৫৫ পৃষ্ঠায় আহসান হাবিবের ছবিতেও। ঘাসফুল কবিতার কবি জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের ছবির দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, এই ছবির কোনো মুখ নেই। শুধুই কালো রং। ১১১ পৃষ্ঠায় ছাপা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে ছবি দেখে কেউ চিনতে পারবে না। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার ডাকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা খাতুন এই বই না নিয়ে ফেরত দিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, কয়টা বই এ রকম হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে খেয়াল করা হয়নি। মাহমুদা বইয়ের পাতা ওল্টাতে গিয়ে পৃষ্ঠা এলোমেলো দেখে ফেরত দিয়ে গেছে। অন্য কোথাও এ রকম হয়েছে কি না জানার জন্য রাজশাহী নগরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফোন করলে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জানান, তাঁরাও এ ধরনের বই পেয়েছেন।
শিক্ষকেরা আরও জানিয়েছেন, পঞ্চম শ্রেণির গণিত বইয়ের ৪১ থেকে ৫৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দুবার ছাপা হয়েছে। রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বইয়ের চালানে উল্লেখ ছিল, রাজশাহী জেলায় বই ছাপা ও সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং নাজিরেরবাগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ঢাকা। কিন্তু রাজশাহীতে বলাকা প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, নাজিরেরবাগ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ ঢাকা থেকে মুদ্রিত বইও সরবরাহ করা হয়েছে। জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষার রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক আবুল খায়ের প্রথমআলোকে বলেন, কোনো বই ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া গেলে সেগুলো বিদ্যালয়ে জমা দিলেই পরে তাদের ভালো বই সরবরাহ করা হবে। তিনি বলেন, এত বইয়ের মধ্যে দু-চারখানা এ রকম থাকতেই পারে। অন্য প্রকাশনা থেকে বই ছাপার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা তাঁদের দেখার বিষয় নয়। তাঁরা বই পেয়েছেন, এটাই বড় কথা। গতকাল সোমবার সকালে রাজশাহীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে জেলা পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসিমা খাতুন, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক ও পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উৎসবের সভাপতি শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী। বই বিতরণ শেষে ওই স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নাচ-গান-গম্ভীরার মাধ্যমে উৎসবে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

No comments

Powered by Blogger.