জিম্বাবুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন ‘কুমির মানুষ’

দ্রুত পর্দা নামছে, উঠছে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতার মসনদে। একদিকে বিদায় নিয়েছেন ৩৭ বছরের শাসক রবার্ট মুগাবে। তারপর পরই ক্ষমতায় আসছেন তারই বরখাস্ত করা ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মনাঙ্গাগওয়া। যিনি ‘ক্রোকোডাইল’ বা কুমির নামেই বেশি পরিচিতি পেয়েছেন। গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ‘ক্রোকোডাইল গ্রুপের’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে তাকে ওই নামে ডাকা হয়। এই কুমির মানুষই হচ্ছেন জিম্বাবুয়ের নতুন প্রেসিডেন্ট।
এরই মধ্যে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিশ্চিত করেছে মুগাবের ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফ পার্টি। দলটির একজন মন্ত্রী টেলিফোনে মিডিয়াকে বলেছেন, এরই মধ্যে কুমির মানুষ দেশ চালনা করছেন। তিনি স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে সমর্থকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বুধবার তাকে অন্তর্বর্তী নেতা হিসেবে শপথ করানোর কথা রয়েছে। এমনটা নিশ্চিত করেছেন জানু-পিএফ পার্টির চিফ হুইপ লাভমোর মাতুকে। এর মধ্য দিয়ে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় আসীন হচ্ছেন আরেক বিপ্লবী। দেশটিতে ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তার পূর্ব পর্যন্ত অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ‘দ্য ক্রোকোডাইল’। তার বয়স এখন ৭৫ বছর। জিম্বাবুয়েতে তিনি একজন বড় ব্যক্তিত্ব। স্ত্রী গ্রেসি মুগাবে, এমারসন মনাঙ্গাগওয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার যে লড়াই হয়েছে তাতে কতল হয়েছেন মুগাবে। এতে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন এমারসন মনাঙ্গাগওয়া। কিন্তু তার অতীত অতোটা সুখকর নয়। ১৯৮০র দশকে তিনি বিরোধীদের ওপর ভয়াবহ দমনপীড়ন চালিয়েছিলেন। এতে তাকে সহায়তা করেছিল উত্তর কোরিয়ায় প্রশিক্ষিত ‘ফিফট আর্মি ব্রিগেড’। ওই সময় তারা জিম্বাবুয়ের গুকুরাহুন্ডিতে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ সব সময়ই অস্বীকার করে যাচেছন এমারসন মনাঙ্গাগওয়া। তার এই নিষ্ঠুরতা এতটাই পরিচিত যে, জিম্বাবুয়েতে হাতেগোনা যা কয়েকজন দুঃসাহসী নেতা আছেন তার মধ্যে তিনি অন্যতম। তারা দেশের ভিতরে কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই নিজে নিজে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারেন। তার টিকি’টি স্পর্শ করার সাহস কারো হয় না। মুগাবের মতো তারও আছে দীর্ঘ ও বর্ণিল রাজনৈতিক চরিত্র। এক সময় তিনি আইন, প্রতিরক্ষা, গৃহায়ন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। ছিলেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার।
এমনকি তাকে বলা হয় স্পাইমাস্টারও। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের সঙ্গে তার ক্ষমতা নিয়ে রেষারেষি থেকে তাকে বরখাস্ত করেন মুগাবে। কারণ, তাকেই দেখা হচ্ছিল মুগাবে পরবর্তী নেতা হিসেবে। কিন্তু ক্ষমতা হাতছাড়া করতে রাজি হন নি মুগাবে। তিনি নিজের চেয়ে ৪১ বছরের ছোট স্ত্রী গ্রেসি মুগাবেকে ক্ষমতায় আনতে চেয়েছিলেন। এ জন্যই এমারসন মনাঙ্গাগওয়াকে বরখাস্ত করেন তিনি। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে চলে যান এমারসন মনাঙ্গাগওয়া। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেয়। গৃহবন্দি করে প্রেসিডেন্ট মুগাবেকে। ফার্স্টলেডি গ্রেসি মুগাবে পালিয়ে চলে যান নামিবিয়ায়। তারপর আর তিনি প্রকাশ্যে আসেন নি। এসব ঘটনার জন্য মুগাবে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনেন এমারসন মনাঙ্গাগওয়ার বিরুদ্ধে।
সেনাবাহিনী যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসে তখন দৃশ্যত মাখনের ভাগ বসাতে দেশে ফিরে যান এমারসন মনাঙ্গাগওয়া। কখনো কখনো তাকে বলা হয় তথাকথিত ল্যাকোস্টে অংশের নেতা হিসেবে। ক্রোকোডাইল লোগো প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নামে এমন নামে দেয়া হয়েছে। তার দলের সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর রয়েছে ঘনিষ্ঠতা। উল্লেখ্য, জিম্বাবুয়ের ক্রোকোডাইল এমারসন মনাঙ্গাগওয়ার জন্ম ১৯৪২ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর জিশাভানা জেলায়। কি ঘটেছিল গুরুকাহুন্ডিতে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র পিছন ফিরে দেখা যাক। ১৯৮০ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হন রবার্ট মুগাবে। তাকে বানানো হয় জিম্বাবুরে প্রথম প্রধানমন্ত্রী। ১৯৮৩ সালে জিম্বাবুয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাতাবেলেল্যান্ডে বড় ধরনের দমন অভিযানে নেতৃত্ব দেন এমারসন মনাঙ্গাগওয়াঅ রবার্ট মুগাবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জোশুয়া নকোমোর সবচেয়ে বড় ঘাঁটি ছিল এই মাতাবেলেল্যা-। নেকোমার দলীয় সদস্যরা ওই অঞ্চলে সিরিজ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে অভিযোগ আনেন মুগাবে। ১৯৮৩ থেকে ৮৭ সাল পর্যন্ত ওই গুকুরাহুন্ডিতে অভিযান পরিচালনা করেন এমারসন। এই অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.