ফর্সা হওয়ার মাসুল গুনে চামড়ায় ক্ষত

বিজ্ঞাপন দেখে মোহটা তৈরি হয়েছিল। দু’চার দিন মাখার পরেই মোহ থেকে মুগ্ধতা। একটা ক্রিম মেখেই গায়ের রং বদলে ফেলা যায়! তরুণী সমস্যাটা প্রথমে টের পেলেন মাস ছয়েকের মাথায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাল চাকা চাকা দাগ। দ্রুত পড়ে যেতে শুরু করল মাথার চুল। ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরে প্রথমেই তার ‘ফর্সা হওয়ার চাবিকাঠি’টা বন্ধ করা হল। শুরু হল দীর্ঘ চিকিৎসা। বছর খানেক কেটে গেছে। পুরো সুস্থ হননি সর্বাণী। ফর্সা হতে চাওয়ার খেসারত এখনো দিয়ে চলেছেন বছর পঁচিশের ওই তরুণী।
অথবা ধরা যাক, স়ৃজনার কথা। দু’বছর ধরে একটি ক্রিম ব্যবহার করছিলেন তিনি। প্রথমে ত্বক উজ্জ্বল দেখালেও ধীরে ধীরে মুখে ফোঁড়া হতে শুরু করে। গজায় অবাঞ্ছিত লোম। ভয় পেয়ে ক্রিম মাখা বন্ধ করেন তিনি। কিন্তু ক্রিম বন্ধ করায় সমস্যা আরো বাড়তে থাকে। ফলে ফের ক্রিমের ব্যবহার শুরু করতে হয়। তার পরে যান ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে। তার ব্যবহার করা ক্রিম দেখে ভয় পেয়ে যান চিকিৎসক। জানান, চড়া মাত্রায় স্টেরয়েড রয়েছে ওই ক্রিমে। আর কিছু দিন ব্যবহার করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারত। স্টেরয়েড প্রতিরোধী চিকিৎসায় এখন অনেকটা সুস্থ সৃজনা।
মেয়েরাই শুধু নয়, পুরুষেরাও এখন দেদার ব্যবহার করেন ফর্সা হওয়ার ক্রিম। এমনকি কয়েক বছরের শিশুদেরও এই ধরনের ক্রিম মাখানোর প্রবণতা তৈরি হচ্ছে কোনো কোনো মায়ের, যার ফল দাঁড়াচ্ছে মারাত্মক।
পৃথিবীজুড়ে এদের মতো মানুষের অভিজ্ঞতা নিয়েই তৈরি হচ্ছে একটি তথ্যচিত্র। চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েডযুক্ত ওষুধ বা ক্রিম ব্যবহারের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা নিয়ে তথ্যচিত্রটি বানাচ্ছেন ফ্লোরিডার ব্রেইনা বানোস। সেই সংক্রান্ত কাজেই সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। ব্রেইনা জানান, ফর্সা হওয়ার চাহিদা বহু দেশেই রয়েছে। যার জেরে এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন মানুষ। সচেতনতার অভাবের জেরে স্টেরয়েড দেয়া ক্রিম ব্যবহার করে ত্বকের ক্ষতি হচ্ছে। স্টেরয়েড দেয়া ক্রিম ব্যবহার করে নিজেও বিস্তর ভুগেছেন তিনি। বললেন, ‘‘শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি রোগীকে কী ধরণের মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটা জানি। তাই সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’’
ত্বক বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ত্বকের সমস্যা নিয়ে যে সব রোগী চিকিৎসকের কাছে যান, তাদের একটা বড় অংশ ‘স্টেরয়েড অ্যাবিউজ’-এর শিকার। এ ছাড়াও চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া ফর্সা হওয়ার বিভিন্ন ওষুধ কিংবা ক্রিম ওষুধের দোকান থেকে কিনে ব্যবহার করেন অনেকেই। ওষুধ কিংবা ক্রিম ব্যবহার করে ফর্সা হওয়া যায় না, এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
চর্মরোগ চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, ‘‘এই ধরনের ক্রিম এক রকম আসক্তি তৈরি করে। ক্ষতি হচ্ছে বুঝতে পেরেও রোগী সাময়িক আরামের জন্য ওই ওষুধ বা ক্রিম ব্যবহার করেন। সচেতন না-হলে এই সমস্যা মিটবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ক্রিম কিংবা ওষুধের ব্যবহারের ফল মারাত্মক হতে পারে সেটা নিয়ে লাগাতার প্রচার জরুরি।’’
চর্মরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষের কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধের দোকানে ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা নিয়েও ভাবতে হবে। এ দেশে ফর্সা হওয়া বিষয়টির সঙ্গে সামাজিক দিক রয়েছে। প্রথমদিকে ত্বক উজ্বল হয়ে ওঠে তাই বিনা পরামর্শে স্টেরয়েডযুক্ত ওষুধ বা ক্রিমের ব্যবহার করতে শুরু করেন অনেকে। তবে এগুলো ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে। তাই এ গুলি কেনার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।’’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

No comments

Powered by Blogger.