আগামী নির্বাচনে ই–ভোটিং চালু করা যেতে পারে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতি রেখে মানুষের ভোটাধিকার অধিকতর সুনিশ্চিত করার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন করার পরিকল্পনা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। এ টি এম শামসুল হুদা সিইসি থাকার সময় পরীক্ষামূলকভাবে একাধিক জায়গায় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি বিদায় নেওয়া কমিশন তা বাতিল করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা চাই পরবর্তীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে একটি উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হোক। সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে এখন থেকেই সে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেওয়ার যে প্রথা চালু হয়েছে, তা আমাদের গণতন্ত্রকে মজবুত ও সমুন্নত করেছে।’ প্রশ্নোত্তরের আগে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
অনির্ধারিত আলোচনা
সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা এবং এ জন্য সংসদে প্রস্তাব আনা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রমাণসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে জানাব যে পাকিস্তান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। এ বিষয়ে সারা বিশ্বে প্রচার চালাব, যাতে দিনটি আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন হয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে আমাদের ইতিহাস জানানো উচিত।’ পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত জনৈক জুনায়েদ আহমেদের লেখা ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ, মিথস এক্সপ্লোডেড বইয়ের বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আলোচনার সূত্রপাত ঘটান এবং ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের দাবি জানান। বইটিতে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে তারা গণহত্যা শুরু করেছিল। সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার, পুলিশ বাহিনীকে হত্যা করল। পিলখানায় ইপিআর, আনসার বাহিনী, সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে। আমি মনে করি, আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৫ মার্চ আমার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হলো। এর কিছুদিন পরে আমার মা, আমার ভাই জামাল, রাসেল, রেহানা ও আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। বন্দীখানায় থেকে অনেক কিছুই দেখেছি। স্যাঁতসেঁতে বাড়িতে রেখেছিল।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের চোখে দেখেছি,
ঢাকা শহরে বিভিন্ন রাস্তায় লাশ পড়ে আছে। যে বাড়িতে আমাদের বন্দী করে রেখেছিল, ঠিক তার সামনের বাড়িটায় মেয়েদের নিয়ে এসে ধর্ষণ করত। তাদের চিৎকার কান পাতলে শোনা যেত। ১৩-১৪ বছরের মেয়ে। পাকিস্তান এখন বই লিখে নিজেদের অপকর্ম মুক্তিবাহিনীর ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে। এটা পাকিস্তানের জন্য লজ্জার। এই বই লেখার দুঃসাহস তারা কোথা থেকে পেল? গণহত্যার জন্য তাদের মাফ চাইতে বলা হয়েছিল। তা তো করেইনি। উল্টো দোষ চাপায়। তাদের ধিক্কার জানাই। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানানো হবে।’ গতকাল ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির একটি অনুষ্ঠানে বইটি দেখেছেন জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বইটিতে দেখলাম আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, ৩০ লাখ শহীদ—সবকিছুর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে মিথ্যা তথ্য উত্থাপন করেছে। বইটি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল আমাদের হাইকমিশনে পাঠিয়েছে।’ পরে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের দাবিসংবলিত একটি নোটিশ ইতিমধ্যে পেয়েছি। অগ্নিঝরা মার্চের যেকোনো দিন সংসদের বৈঠকে নোটিশটি নিয়ে আলোচনা হবে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রীসহ সব সদস্য টেবিলে চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
সংসদীয় কমিটি পুনর্গঠন
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে এই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে আবদুল মতিন খসরুকে সভাপতি করা হয়েছে। আবদুল মতিন এর আগে অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি ছিলেন। অন্যদিকে অনুমিত হিসাব কমিটির সভাপতি করা হয়েছে নূর ই আলম চৌধুরীকে।
সংসদের অধিবেশন আজ বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.