নায়ক হতে পারবেন সাব্বির?

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে
৩৩ রান, নাকি ২ উইকেট? ২ উইকেট দুটি মাত্র বলেরই ব্যাপার। ইংল্যান্ডের জন্য তাই কাজটা বেশি সহজ। আবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পক্ষেও ৩৩ রান করা খুব অসম্ভব নয়। হাতে পুরো একটা দিন। সারা দিন টুকটুক করে খেলে রান করলেই বা সমস্যা কী!
কিন্তু উইকেটের চতুর্থ দিনের আচরণ বলে দিচ্ছে, শেষ দিনে কাজটা সহজ হবে না। তার ওপর আজ সকালে ২ ওভার পরই নতুন বল নিতে পারবে ইংল্যান্ড। নতুন বলে এই উইকেটে বোলাররা কী করতে পারেন, সেটা এই কয় দিনেই দেখেছে সবাই। ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ ইনিংসে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে এখন ৫৯ রানে অপরাজিত সাব্বির রহমান। দিন শেষের সঙ্গী তাইজুল ইসলাম ও শেষ ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলাম তাঁকে সংগত দিতে পারলে ভালো। না পারলে আপাতত আক্ষেপেই শেষ হবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বপ্ন। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আশাবাদীদের দলে। তাঁর দৃঢ়বিশ্বাস, ‘কাল (আজ) ১০-১৫ ওভার ব্যাট করতে পারলেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। জিততে হলে আমাদের যতটা সম্ভব সময় মাঠে থাকতে হবে। আশা করি, আমরাই জিতব।’
অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যানকে নিশ্চয়ই কাজটা ঠিকভাবে করার কৌশল বুঝিয়ে দেবেন কোচ। পত্রিকায় ছাপা হলে সেটা ইংল্যান্ড শিবিরে ফাঁস হয়ে যাবে বলে কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন না। তবে সংবাদ সম্মেলনে বসেই ব্যাটসম্যানদের একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাইলেন কোচ, ‘ব্যাট করার জন্য আমাদের হাতে পুরো ৯০ ওভার আছে।’ ২৩৮ রানে কামরুল ইসলামের বিদায়ের পর সাব্বিরের সঙ্গে জুটি বাঁধেন তাইজুল। উইকেটে যাওয়ার সময় তাইজুলকে একটাই পরামর্শ দিয়েছেন হাথুরুসিংহে—‘দিনটা শেষ করে আসো।’ বিস্তারিত কোচের মুখেই শুনুন, ‘তাইজুল যখন ব্যাট করতে যায় তখনো আমাদের ৪৬-৪৭ রান বাকি ছিল। ৫-৬ ওভারেই সেটা করে ফেলা সম্ভব ছিল না। ওই সময়টুকু ব্যাট করে টেস্টটাকে পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়াই ছিল সম্ভাব্য সেরা উপায়।’ টেস্ট শুরুর আগে কোচ বলেছিলেন, বাংলাদেশের বোলারদের পক্ষে ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট নেওয়া সম্ভব নয়। প্রকারান্তরে যেন আগেই বলে দিতে চাইলেন—আর যা-ই হোক চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশ জিতবে না। ইংল্যান্ডকে দুই ইনিংসেই অলআউট করে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করতে নেমে কোচের ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন খেলোয়াড়েরা। কোচও তাতে খুশি, ‘আমি খুবই খুশি যে ওরা ২০টি উইকেট নিতে পেরেছে। এটা ইতিবাচক। চতুর্থ দিন শেষে আমরা খেলায় আছি, এটাও আনন্দের।’ এত ভালোর মধ্যে শুধু একটা অঙ্কই মেলেনি হাথুরুসিংহের। প্রথম ইনিংসের রানটা আরেকটু ভালো আশা করেছিলেন তিনি।
গেম প্ল্যানও সাজিয়েছিলেন সেভাবেই। তবে এ নিয়ে আর হতাশা নেই। কোচ-খেলোয়াড় সবার চোখই এখন জয়ে। সাব্বিরের সঙ্গে বাকি দুজনের কেউ না কেউ দলকে সেই পথ দেখাবেন, সবার আশাটা এমনই। এমনও তো নয় যে, তাইজুল-সাব্বির এর আগে এমন রোমাঞ্চকর ম্যাচে দল জেতাননি। তবে বেশি আশা সাব্বিরের কাছেই। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসেই প্রথম ফিফটি পেয়ে গেছেন। এখন সামনে টেস্ট জয়ের নায়ক হওয়ারও হাতছানি। ব্যাটিং করাটা যে উইকেটে সমুদ্রে সাঁতার কাটার মতোই কঠিন, সেখানে সাব্বিরের এমন পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি হাথুরুসিংহে, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে ও যেভাবে ব্যাট করছে, আমি খুব খুশি। মাথায় আঘাত পেয়েছে, সারা দিন বাইরে ছিল। এমন চাপের মধ্যেও কঠিন একটা উইকেটে সে মনোযোগ ধরে রাখতে পেরেছে।’ অবশ্য এই উইকেটে সাব্বিরের অপরাজিত ৫৯ থেকে শুরু করে তামিম ইকবালের ৯, সবার ব্যাটিংয়েই সন্তুষ্ট কোচ। সেটা এমনই যে, তামিমের ৯ রানের ইনিংসটাও নাকি তাঁর কাছে ফিফটির সমান। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুলদের ইনিংস কতটা মূল্যবান, সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! কিন্তু টেস্ট জেতানোর নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ সাব্বিরেরই বেশি। মাথার ওপর থাকা চাপটাও। সেটা কমাতেই কিনা কাল রাতে বললেন, ‘আমি এই টেস্টটা পুরোপুরি আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।’

No comments

Powered by Blogger.