লেবানন-জর্ডান সফরের অভিজ্ঞতা

সম্প্রতি আমি জর্ডান ও লেবানন সফর করি। সেখানে বাংলাদেশী কর্মীদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া, তাদের সমস্যার সমাধান করা এবং শ্রমবাজার সম্প্রসারিত করাই ছিল এ সফরের মূল উদ্দেশ্য। ওই দুই দেশের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলাপ-আলোচনা হয়েছে। ফলাফল আমাদের পক্ষে। আমি এ বিষয়ের ওপর বিশদ আলোচনা না করে দেশ দুটির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করব। জর্ডানে সমতল ভূমি নেই বললেই চলে। উঁচু পাহাড়-পর্বতের চাদরে ঢাকা দেশটি। পাহাড়গুলোতে বড় বড় পাথর, পাথরের ভারে পাহাড়গুলো যেন নুয়ে পড়ছে। আকাশ ভেদ করা পর্বতগুলো যেন কেঁদে স্রষ্টার কাছে পাথরমুক্ত হতে প্রার্থনা করছে দিন-রাত। কিছু কিছু পাথর এরই মধ্যে ঠেলে ওপরে বের করে দিলেও বেশির ভাগ পাথর বুক চিরে অন্তরে অবস্থান করছে।
পাথরের ওপর কোনো গাছপালা জন্মাতে পারে না। দু-একটি গাছ পাথরের কাঠিন্য ভেদ করে আকাশের দিকে ওঠার চেষ্টা করছে। জর্ডানে বহু ঐতিহাসিক জায়গা আছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সিরিয়ায় যাওয়ার সময় যে গাছটির ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেটি এখনও আছে। কারও কারও মতে, গাছটির বয়স ২ হাজার বছর। জর্ডানের পেট্রা একটি আকর্ষণীয় জায়গা। পেট্রার সুড়ঙ্গগুলো কত বছর আগে আবিষ্কৃত তা ইতিহাসই বলতে পারে। তবে পাথরের পাহাড় কী করে দু-তিন ভাগ হয়ে মধ্যখানে সুড়ঙ্গ তৈরি করেছে তা দেখার বিষয়। আমরা সুড়ঙ্গ দিয়ে অনেক দূর এগিয়েছিলাম। ভয় করে যদি মাথার ওপর ঝুলন্ত পাথর ছিটকে পড়ে। ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকেছি। যখন ফেরত আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, মনে হল কে যেন পেছন দিক থেকে আরেকটু এগিয়ে যেতে চিৎকার করছে। আরও ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ফেরত আসি। এবার লেবাননের কথায় আসি। জর্ডানের মতো লেবাননেও সমতল ভূমি নেই। দু-চারটি জায়গায় ঢালু জায়গা আছে। ঢালু জায়গায় কলাবাগান, জয়তুন গাছের বাগান প্রচণ্ড রোদে প্রকৃতির সঙ্গে খেলা করছে। কলাগুলো ভারি মিষ্টি। লেবাননেও সুড়ঙ্গ পথ আছে। এ সুড়ঙ্গ পথ দু’ভাগে বিভক্ত। একভাগে শুধু পাহাড়।
পাহাড়ে দীর্ঘদিন বৃষ্টির পানি চুইয়ে চুইয়ে কেলসিফিকেশন হয়েছে এবং এ কেলসিফিকেশন থেকে নানা রঙের পিলারের সৃষ্টি হয়েছে, পিলারগুলো চিকচিক করছে। যত আলো পড়ে চিকচিক বেড়ে যায়। চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করা দায়। স্রষ্টার এ কী লীলা-খেলা। অন্য ভাগে শুধু পানি আর পানি। আমরা পানিতে নৌকায় করে ভেতরে প্রবেশ করি। স্বচ্ছ পানি। সমগ্র লেবাননে এ স্বচ্ছ পানি পান করার জন্য বিতরণ করা হয়। পাথর ভেদ করে খালের মতো এত পানির উৎস কী তা কেউ বলতে পারে না। জর্ডান ও লেবাননের মানুষ বন্ধুসুলভ। বিদেশীদের এরা সম্মানের চোখে দেখে। খাদ্যাভ্যাস আমাদের মতো নয়। এরা রুটি, চিজ, নানা ধরনের সালাদ খেতে অভ্যস্ত। খাবার খেতে আমাদের খুব বেশি অসুবিধা হয়নি। মহিলারা বোরকা পরে; কিন্তু সাজগোজ পশ্চিমাদের মতো। এখানে মহিলারাও গাড়ি চালায়। দেখে মনে হয় মহিলাদের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে। আমরা যখন দেশে ফিরে আসার জন্য বিমানে উঠি, বারবার ইচ্ছা করছিল আরও কিছুদিন সেখানে থেকে যেতে। লেবাননের মাটি যেন বারবার ডাকছে পেছনে- আরও কিছুদিন আমার কাছে থেকে যাও। তোমাদের পেয়ে আমরা ধন্য। আমাদের বঞ্চিত করো না। থেকে যাও।
নুরুল ইসলাম বিএসসি : প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী, কলাম লেখক

No comments

Powered by Blogger.