তুর্কি সেনাবাহিনীতে ব্যাপক রদবদল

তুরস্কের সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডাররা শুক্রবার প্রেসিডেন্ট
রিসেপ তায়েপ এরদোগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন -এএফপি
তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটির সামরিক বাহিনীতে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর তিন প্রধানকে স্বপদে বহাল রাখা, ৯৯ জন কর্নেলকে জেনারেল ও এডমিরাল পদে পদোন্নতিসহ অন্য বিষয়ে ব্যাপক সংস্কার আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম মিলিটারি কাউন্সিলের (ইয়াস) সভায় এসব পরিবর্তন আনা হয়। প্রায় ৫ ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এসব তথ্য জানিয়েছেন। খবর এএফপি, রয়টার্স ও আল জাজিরার। ১৫ জুলাই অভ্যুত্থানচেষ্টার পর এটাই ছিল তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইয়াস সভা। প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের কাছে পাঠানো হবে। বুধবার হঠাৎ করেই দেশের ১৪৯ জন এডমিরাল ও জেনারেলকে বরখাস্তের ঘোষণা দেয়ার পর এ বৈঠকে বসে তুরস্কের শীর্ষ সেনা কমান্ডাররা।
ওই বৈঠকের কিছুক্ষণ আগে তুরস্কের সেনাবাহিনীর দু’জন জেনারেল চাকরি থেকে পদত্যাগ করে দেশের সরকারের এ দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদ জানান। দেশটির ল্যান্ড ফোর্সেস চিফ অব স্টাফ জেনারেল ইহসান ইয়ার এবং প্রশিক্ষণবিষয়ক কমান্ডার জেনারেল কামিল বাসোগলু পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তারা দু’জনেই ছিলেন ‘অরজেনারেল’। এটা তুরস্কের জেনারেলদের সর্বোচ্চ পদ। ইয়াস বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারে, তুরস্কের ‘চিফ অব স্টাফ’ হিসেবে জেনারেল হালুসি আকার তার পদে বহাল থাকছেন। এছাড়া, টার্কিশ ল্যান্ড ফোর্সেসের কমান্ডার জেনারেল সালিহ জেকি কোলাক, বিমানবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল আবিদিন উনাল এবং নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল রিসেপ বুলেন্ত বস্তানোগ্লুও তাদের পদে বহাল থাকছেন। তবে আধা সামরিক বাহিনী ‘গেন্ডারমেরি’র জেনারেল কমান্ডার ও জেনারেল স্টাফ ডেপুটি চিফ পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই দুই পদে নিয়োগ পেয়েছেন যথাক্রমে জেনারেল ইয়াসের গুলের এবং জেনারেল উমিত দান্দার। জেনারেল মুসা অ্যাভেসার এখন নতুন ফার্স্ট আর্মির কমান্ডার, জেনারেল ইসমাইল মেতিন তেমেল সেকেন্ড আর্মি কমান্ডার হয়েছেন। এদিকে, ৯৯ জন কর্নেলকে জেনারেল ও অ্যাডমিরাল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। ১৬ জেনারেল ও এডমিরালকেও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আর ২০ জেনারেল ও অ্যাডমিরালের চাকরি এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের প্রায় অর্ধেক জেনারেল ও এডমিরালকে অসম্মানজনকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৬৮৪ জন জেনারেল ও এডমিরালকে বরখাস্ত করে এরদোগান সরকার। দেশের আরও ১০৯৯ সেনা অফিসার ও ৪৩৬ জুনিয়র অফিসারকে অসম্মানজনকভাবে বরখাস্ত করে সরকার। এছাড়া, ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনীর অধিকারী দেশ তুরস্কের মাত্র ১ দশমিক ৫ ভাগ সদস্য সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার টার্কিশ জেনারেল স্টাফের প্রেস অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স ডিপার্টমেন্টের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানচেষ্টায় মোট ৮ হাজার ৬৫১ সৈনিক জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ১ হাজার ৬৭৬ জন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে এতে জড়িয়ে পড়েছিল। এদের ১ হাজার ২১৪ জন আবার ক্যাডেট। সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানচেষ্টায় ২৪টি জঙ্গি বিমানসহ ৩৫টি বিমান ব্যবহৃত হয়েছিল, যা মোট বিমানের সাত শতাংশ। এতে আরও বলা হয়, অভ্যুত্থানচেষ্টায় ৮টি অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহ ৩৭টি হেলিকপ্টার (যা মোট সংখ্যার প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ), ১৭২টি সাঁজোয়া যান, ৭৪টি ট্যাংক ব্যবহƒত হয়েছিল। বিদ্রোহীরা তিনটি জাহাজও ব্যবহার করেছিল।

No comments

Powered by Blogger.