জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে কি লাভ হলো বিএনপির by কাফি কামাল

রাজনীতির মাঠে জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধে কি লাভ হলো বিএনপির? দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ প্রশ্নই এখন দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপি কতটুকু লাভবান হয়েছে সেটা তর্কসাপেক্ষ হলেও জামায়াতের লাভ নিয়ে প্রশ্ন নেই কারো। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে বিএনপির সহায়ক হয়েছিল জামায়াতের সমর্থন। ব্যস, লাভ এটুকুই। কিন্তু দিনের পর দিন বিএনপির জন্য বোঝা হয়ে উঠেছে জামায়াত। দলের সাংগঠনিক  ক্ষতি, কর্মীদের মনোবল ঘাটতি হওয়ার পাশাপাশি দেশে ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিএনপির রাজনীতি। ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দলের ভাবমূর্তি। তরুণ প্র্রজন্মের কাছে অব্যাহতভাবে পৌঁছাচ্ছে ভুল বার্তা। বিএনপির নীতিনির্ধারক মহল থেকে তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে তারা এমন উপলব্ধির কথা জানিয়েছেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন ছাড়া জামায়াতের সঙ্গে জোট গড়ে আর কোনো লাভের উপলক্ষই দেখেন না তারা।
বিএনপির কূটনৈতিক যোগাযোগ রক্ষাকারী দুইজন নেতা জানান, প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে বিএনপির সামনে দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিবন্ধক হয়ে আছে দুইটি বিষয়। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ও ভবিষ্যতে সুশাসনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে না পারা। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার সময়ও বিএনপির অস্বস্তির বিষয় ছিল এ দুটি বিষয়। অন্যদিকে গত বছর জানুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পাস হওয়া এক প্রস্তাবে বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার কথা বলা হয়েছে। নেতারা বলেন, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, জামায়াতকে দেখেই বিএনপিকে বিচার করছে কূটনীতিক মহল। ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট কেবল নির্বাচনী জোট এ বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা দিনের পর দিন কঠিন হয়ে ওঠছে বিএনপির সামনে। আর বর্তমান বাস্তবতায় কেবল জনসমর্থন ও জনপ্রিয়তা থাকলেই হয় না প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার ‘কারাগারে কেমন ছিলাম (২০০৭-২০০৮)’ বইয়েও জামায়াত ইস্যুকে আন্তর্জাতিক সমর্থনে প্রতিবন্ধক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ পথচলা কতটুকু সুখের হবে? বিএনপিকে আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসতে হলে যেসব শক্তিকেন্দ্রের সমর্থন প্রয়োজন, জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা থাকলে সেসব শক্তিকেন্দ্রের আনুকূল্য পাওয়া কি আদৌ সম্ভব? এ ব্যাপারে সে বইয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন ব্যারিস্টার মওদুদ। তিনি লিখেছেন, ‘বিএনপি যদি দুইয়ের গ্লানি কাটিয়ে ভারসাম্যময় মধ্যপন্থি গণতন্ত্রের ধারক-বাহক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কোনোরকমে আসতে সক্ষম হলেও বেশিদিন তা ধরে রাখতে পারবে না।’ যুদ্ধাপরাধের তকমা পাওয়া দলটির সঙ্গ ছাড়তে বিএনপির চাপ বাড়ছে ক্রমাগত। দেশি-বিদেশি শুভাকাঙক্ষীদের পক্ষ থেকে পরামর্শ আসছে জামায়াত ছেড়ে নিজস্ব শক্তিতে পথ চলার। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মহলে ধর্মভিত্তিক এ দলটি নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ।
বিএনপি সিনিয়র দুই নেতা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা ও উন্নয়নে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা ও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কারণে সামপ্রতিক বছরগুলোতে দেশটির সঙ্গে তৈরি হয়েছে অনাস্থার পরিবেশ। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি উদ্যোগ নিয়ে দেশটি সফর করেছিলেন খালেদা জিয়া। ইতিবাচক সাড়াও মিলেছিল। কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি যখন বাংলাদেশে আসেন তখন হরতালের ডাক দেয় জামায়াত। সেদিন হরতালে বের হলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখিয়ে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকটি বাতিলে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে জামায়াত। যে বৈঠক বাতিলের সূত্র ধরে ভারতের কৌশলগত রোষানলে পড়ে বিএনপি। এদিকে গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন খালেদা জিয়া। কিন্তু মোদি ঢাকায় আসার আগে জামায়াতের পক্ষ থেকে ওই সফরকে স্বাগত জানানো হলেও ঢাকা ছাড়ার দিনেই বিবৃতি দিয়ে অবস্থান পরিবর্তন করে। বিএনপি সিনিয়র নেতারা মনে করেন, বিএনপির ব্যাপক জনসমর্থন এবং পশ্চিমা দেশগুলো চাইলেও সরকারকে চাপে ফেলা যাচ্ছে না মূলত ভারতের কারণেই। এখানেই বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে আছে জামায়াত। 
জামায়াত নিয়ে বিএনপির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যস্ত সব স্তরেই রয়েছে অস্বস্তি। বিএনপি জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মনে করেন, জামায়াতনির্ভরতার কারণে এতদিন ক্ষতিই হয়েছে বিএনপির। আর সঙ্গে থেকে লাভ হয়েছে জামায়াতের। এমন অবস্থায় সম্পর্ক দীর্ঘায়িত করা হবে আত্মঘাতী। গত বছর একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়ার সামনে জোট ভাঙার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম। সে সময় তাকে সমর্থন করেছেন দলটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অঘোষিত দূরত্ব তৈরি হলেও বিএনপির তরফে প্রকাশ্যে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আপাতত রাজনীতিতে জোট না ভেঙেই ‘একলা চলো নীতি’ অবলম্বন করে এগিয়ে যেতে চাইছে বিএনপি। তবে জোটের কোনো কার্যকারিতা প্রায় নেই বললেই চলে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ও দণ্ড কার্যকর করা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি বিএনপি। এ নিয়ে ফেসবুকে বিএনপিকে অকৃতজ্ঞ বলে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযমের ছেলে। বিএনপি এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ না করলেও দারুণ ক্ষুব্ধ দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতারা অতীতের নানা ঘটনার উল্লেখ করে বলছেন, জামায়াতই অকৃতজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছে বারবার। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাওয়া জামায়াত রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পেরেছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বহুদলীয় গণতন্ত্রের নীতির কারণে। কিন্তু স্বৈরাচার এরশাদ আমলে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও অংশ নিয়েছিল জামায়াত। পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিএনপির সঙ্গে সরকারি দলের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও দ্রুততম সময়ে পল্টি দেয় দলটি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে করেছে যুগপৎ? আন্দোলন। বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আওয়ামী লীগকে কৌশলে বিতর্কিত অবস্থানে ঠেলে দিয়ে লাভবান হয়েছে জামায়াত। খালেদা জিয়ার প্রথম আমলে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধীদের বিচারে গণআদালত গঠন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। কৌশলে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে গোলাম আযমের নাগরিকত্ব হাসিল করে নেয় জামায়াত। এ ঘটনার দায়ভার গিয়ে পড়ে বিএনপির ঘাড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের দল হয়েও বিএনপিকে মোকাবিলা করতে হয় প্রগতিশীলদের বিরোধিতা। ২০০১ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এলে জামায়াত ক্ষমতার সরাসরি অংশীদারিত্ব ও দুই জামায়াত নেতা মন্ত্রিত্ব ভোগ করেন। এ সময় জামায়াত তাদের সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক শক্তি গোছায়। অন্যদিকে জামায়াত নেতাদের মন্ত্রিত্ব দেয়ায় বিএনপির গায়ে উগ্রপন্থিদের পৃষ্ঠপোষকতা ও যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায়নের কালিমা লিপ্ত হয়। আবার ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনসহ বেশির ভাগ নেতা যখন কারাবন্দি তখন ফুরফুরে মেজাজে রাজনীতি করেছে জামায়াত। দুই বছরের নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার পর গোপন শর্তযুক্ত নির্বাচন দেয় ওয়ান ইলেভেন সরকার। জামায়াতের চাপের কারণেই নিশ্চিত ভরাডুবি জেনেও নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছিল বিএনপি। যার কারণে একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে সংসদ গঠনের সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ। আর মহাজোট আমলে নির্যাতন-নিপীড়নসহ রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ে বিএনপি। ওই সময় বিএনপির প্রতিটি জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচিকেও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার কর্মসূচি হিসেবে প্রচারণা চালায় সরকার। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিএনপির জনস্বার্থমূলক আন্দোলন। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে জামায়াতের পক্ষ থেকে বিগত বছরগুলোতে পালন করা হরতালসহ নানা কর্মসূচিতে সারা দেশে ব্যাপক নৈরাজ্য হয়। যার দায়ভার এসে পড়ে বিএনপির ঘাড়ে। অপপ্রচারের পাশাপাশি হাজার হাজার মামলার শিকার হয় দলটির নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিগত কয়েক বছরের আন্দোলন- সংগ্রামে সামনের সারিতে ছিল জামায়াতের সক্রিয় কর্মীবাহিনী। সেটার সুযোগ নিতে গিয়ে দিন দিন আত্মবিশ্বাসহীন ও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বিএনপি কর্মীরা। ফলে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে আশি-নব্বইয়ের দশকের মতো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছে না বিএনপি। আবার যে ভোটের রাজনীতি বিবেচনায় জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বিএনপি সেখানে দেখা গেছে উল্টোচিত্র। বর্তমান সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপি প্রার্থীদের সমর্থন করেনি জামায়াত। বরং বেশিরভাগ এলাকায় সরকারদলীয় প্রার্থীর পক্ষেই মৌন সমর্থন দিয়ে গেছে দলটি। যার ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে বিএনপির চেয়ারম্যান ও মেয়র প্রার্থীরা হারলেও সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে নিজেদের শতাধিক ভাইস চেয়ারম্যান পদ নিশ্চিত করেছে জামায়াত। এ সময় জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার অভিযোগও উঠে। গত বছরের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরেও দুলের মধ্যে ছিল টানাপড়েন।
ভোটের রাজনীতি বিবেচনায় জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠন করলেও সাংগঠনিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতির কারণে সক্রিয় কর্মীবাহিনীই ছিল জামায়াতের শক্তি। অন্যদিকে বিএনপির শক্তি ছিল সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন। জোটের রাজনীতি করতে গিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে কিছু আসনে জামায়াতের ৪-৫ ভাগ ভোটের সমর্থন পেয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতকে ছাড় দিতে হয়েছে ২০-৪০ ভাগ সমর্থনের বেশকিছু আসন। যেসব আসনে জামায়াত বিএনপিকে ভোটে ছাড় দিয়েছিল সেখানে রাজনীতিতে ছাড় দেয়নি মোটেই। উল্টো বিএনপির সমর্থন নিয়ে শক্তিশালী করেছে নিজেদের অবস্থান। অন্যদিকে যেখানে জামায়াতকে ছাড় দিয়েছে সেখানে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে দেয়নি জামায়াত। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পাবনা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, খুলনা, বগুড়া, সিলেট, রংপুরসহ অনেক জেলায় এমন সাংগঠনিক ক্ষতির শিকার হয়েছে বিএনপি। বিএনপির ঘাঁটি খ্যাত বগুড়ায় ভাগ বসিয়েছে জামায়াত। চট্টগ্রামের একটি আসনে জামায়াতের সঙ্গে ঝামেলা বেঁধেছিল তৎকালীন বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের। বিএনপি নেতৃত্ব সেদিন জামায়াতের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে আসনটিতে দলের রাজনীতিকে ঠেলে দেয় বিপর্যয়ের পথে। পরে জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে খ্যাত কর্নেল (অব.) অলি দল ছেড়ে গিয়ে তৎকালে বিএনপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনেন তা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়। এভাবেই জামায়াতকে জোটে নিয়ে বিএনপির নিজস্ব রাজনৈতিক সক্ষমতা, সাংগঠনিক কাঠামো ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা দুর্বল হয়েছে দিন দিন। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠনের কারণে যুদ্ধাপরাধীদের লালন ও জামায়াতকে সুসংগঠিত হয়ে ওঠার দায়ভার বিএনপির কাঁধে এসে পড়েছে। তাই বিপুল সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ডানপন্থি ও উদারবাদীদের দল হওয়া সত্ত্বেও কিছু কট্টর ইসলামপন্থি নেতার কারণে বিএনপির বিরুদ্ধে প্রচারণায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, জামায়াত তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ। তারা সুঁই হয়ে ঢুকেছে- ফাল হয়ে বেরুচ্ছে। এছাড়া, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি জোট গঠন নিয়ে কেবল প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক মহল থেকেই নয়, ইসলামপন্থি বলে পরিচিত একাধিক দলের সমর্থনও গেছে বিএনপির বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অবস্থান থেকে প্রগতিশীল অনেক দল ও নেতা বিএনপির আন্দোলনের দাবির প্রতি ঐকমত্য পোষণ করেন। কিন্তু জামায়াতের কারণে তারা যোগ দিচ্ছেন না বিএনপির প্ল্যাটফরমে। এত বিপুল ক্ষতির পরও জামায়াত ইস্যুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্ন এখন বিএনপির দলীয় মহলেই।

No comments

Powered by Blogger.