ধানী ফসলের মাঠে লিচু চাষ

চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করার উপায় নেই যে, দক্ষিণ উপকূলের জেলা পিরোজপুরের এক ফসলি জমিতে আমন ধানের পরিবর্তে কৃষকরা এখন বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ করে বিষ্ময় সৃষ্টি করেছেন। গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে সিঁধুরে ও বাহারি রঙের টসটসে লিচু। জেলার নাজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত তারাবুনিয়া গ্রামের লিচুর বাগান দেখতে এখন জেলা ও উপজেলা কৃষি বিভাগ, সংবাদকর্মী, উদ্যোক্তাসহ অসংখ্য লোকজন আসছেন এই লিচু বাগানে। ধান, পেয়ারা, আমড়া আর সুস্বাধু মাল্টা চাষে পিরোজপুরের রয়েছে ব্যাপক সুখ্যাতি। এর পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে লিচু উৎপাদনেও ব্যপক সফলতা পেয়েছেন জেলার লিচু চাষীরা। তবে এ সফলতা এক দিনে আসেনি, ধান চাষে কম মুনাফা হওয়ায় ২০০৭ সালে জেলার নাজিরপুর উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামের অত্যন্ত কর্মক্ষম চাষী হংষপতি মিস্ত্রী ও হিমাংশু মিস্ত্রী দুই ভাই পরীক্ষামূলকভাবে নিজেদের পাঁচ একর জমিতে চায়না থ্রি ও মুজাফ্ফরপুরী নামের দুটি জাতের লিচুর চাষ শুরু করেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এ বছর জেলার নাজিরপুরসহ পিরোজপুর সদর ও মঠবাড়িয়া উপজেলার দুই শতাধিক কৃষক চায়না থ্রি ও মুজাফ্ফরপুরী জাতের লিচুর আবাদ করেছেন। চলতি মৌসুমে লিচুর বাম্পার ফলনে হাসি আর আনন্দের জোয়ার বইছে চাষকৃত কৃষকের ঘরে ঘরে। এদিকে সম্পূর্ণ কীটনাষক ও বালাই মুক্ত লিচু ক্রয় করে বেশ স্বস্তিতে রয়েছেন অত্র অঞ্চলের ক্রেতারাও। লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত এবং কৃষকদের উৎসাহে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন পিরোজপুর ও নাজিরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগও। সহযোগিতার পাশাপাশি তারা ঋণের ব্যবস্থাও করতে যাচ্ছেন। জেলা কৃষি বিভাগের প্রধান কৃষিবিদ মো. আবুল হোসেন তালুকদার যুগান্তরকে জানান, অত্র অঞ্চলের মাটি ও জলবায়ু লিচু চাষের অনুকূলে হওয়ায় ভবিষ্যতে এ চাষের আরও ব্যাপক প্রসার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার ৩টি উপজেলার ৩৭ হেক্টর জমিতে এ বছর লিচুর ফলন হয়েছে প্রায় ২শ’ মেট্রিক টন। যার পাইকারী মূল্য বর্তমান বাজার দরে তিন কোটি টাকারও বেশি। সরকারের ঋণ সুবিধা পেলে লিচু চাষ পিরোজপুর অঞ্চলে একটি অন্যতম কৃষিজাত ফসল হিসেবে এলাকার চাহিদা পূরণ করে দেশের অন্যত্র বিক্রয় করা সম্ভব হবে এবং কৃষকরাও লাভবান হবে বলে ধারণা চাষীদের।

No comments

Powered by Blogger.