বিজেপি প্রশ্নে বিভক্ত সুশীল সমাজ by তরুণ চক্রবর্তী

গুয়াহাটির ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের
উদ্যোগে বসানো হয়েছে মোগলদের আসাম জয় রুখে
দেওয়ার নায়ক লাচিত বড়ফুকনের ভাস্কর্য
উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামে ভূমিকম্প জলভাত! প্রায়ই কেঁপে ওঠে মাটি। মানুষজনের গা-সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু বহিরাগতদের কাছে অবশ্যই আতঙ্কের। ভোটপর্বেও কেঁপে উঠল ভূমি, উৎপত্তিস্থল আসামেরই গোয়ালপাড়া জেলা। এই গোয়ালপাড়াতেই নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলিবিনিময়। নিহত তিন। ভোট মৌসুমে এই খবর নিয়েও তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। গত কয়েক দশকে মৃত্যুর মিছিলও অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গেছে আসামবাসীর। ঠিক তেমনি গা-সওয়া বুদ্ধিজীবীদের দ্বন্দ্বও। সম্প্রতি অসমিয়া সমাজের প্রাতঃস্মরণীয় বুদ্ধিজীবী হীরেন গোঁহাই আর হোমেন বড়গোঁহাইয়ের উদ্যোগে সুশীল সমাজ রাজ্যবাসীর কাছে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আরজি জানায়। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘যাকে খুশি ভোট দেন, কিন্তু খাল কেটে কুমির আনবেন না! সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে ভোট দিলে  রাজ্যের ঘোরতর অমঙ্গল।’ আর এটি নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। ইতিমধ্যেই সুশীল সমাজ দুই ভাগ। হীরেন-হোমেনদের শিবির ছেড়ে বেরিয়ে এসে এসমাইল হোসেন বলছেন, ‘না বুঝেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছি।’ আর বিরোধী শিবির তো আরও কঠোর। লক্ষ্মীনন্দ বড়ুয়া, নির্মলকুমার চৌধুরীদের মতে, ভোট দেওয়ার অধিকার রাজ্যবাসীর। সুশীল সমাজের কোনো দলের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত নয়। একই সঙ্গে তাঁদের কটাক্ষ, ‘বিজেপির বদলে কংগ্রেস তো আরও বেশি খারাপ। আরও বেশি সাম্প্রদায়িক।’ অসমিয়া সমাজে বুদ্ধিজীবীরা বেশ সমাদৃত। অসম সাহিত্যসভার মর্যাদার প্রতি রাজ্যবাসী বেশ আস্থাশীল। রাজধানী গুয়াহাটি ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের উদ্যোগে সম্প্রতি বসানো হয়েছে জেনারেল লাচিত বড়ফুকনের বিশাল মূর্তি। ১৬৭১ সালে মোগলদের নৌবাহিনীকে সরাইঘাট যুদ্ধে রুখে দিয়েছিলেন অহম রাজার এই সেনাপ্রধান। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এই অহম সম্প্রদায়েরই মানুষ। মোগল অর্থাৎ ‘মুসলিম’দের আসামে অনুপ্রবেশ তাঁরই পূর্বপুরুষেরা রুখে দিয়েছিলেন, সেটা জানাবার একটা প্রয়াস তো ছিলই দীর্ঘদিন পর লাচিতের এই বিশাল মূর্তি স্থাপনের মধ্যে। কিন্তু মজার কথা, কংগ্রেসিরাই এই প্রসঙ্গ তুলছেন না। এখন বেশি করে আলোচিত প্রসঙ্গ বর্তমানের জনবিন্যাস এবং বিভিন্ন জনপদের নিজস্ব সমস্যার নিরিখে গড়ে ওঠা ইস্যু। ইস্যুগুলোও জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ১২৬ সদস্যের আসাম বিধানসভার ৬৫ আসনে ভোট প্রদান শেষ। বাকি রয়েছে ৬১টি কেন্দ্রে। মিশ্র জনগোষ্ঠীর আসামের জনবিন্যাসও ভিন্নধর্মী। ১২৬টির মধ্যে অন্তত ২৬টি আসনের ফলাফলে বাঙালিদের প্রভাব বেশি। এর মধ্যে ১৬টিতে তো বলতে গেল বাঙালিরাই একমাত্র ভোটার। চা-শ্রমিকদের প্রভাব রয়েছে কম করে ৩০টি আসনে। বোড়োরা ১৬টি আসনে নিয়ামক শক্তি। এ ছাড়া মিশিং ও কার্বিরা চারটি, ডিমাসা ও রাভা একটি করে আসনে ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারেন। রয়েছে মুসলিম ভোটও। রাজ্যের শতাধিক আসনে প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণে বাঙালি মুসলিমরাই বড় ভূমিকা নেন।

No comments

Powered by Blogger.