ওবামার পররাষ্ট্রনীতি উদ্ভট উদ্দেশ্যহীন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতিকে ‘উদ্ভট, উদ্দেশ্যহীন ও বিপর্যয়কর’ বলে সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের ফ্রন্টরানার ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচিত হলে আমেরিকার স্বার্থকেই সবার আগে গুরুত্ব দেবেন বলে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন ট্রাম্প। বুধবার ওয়াশিংটনের এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিজের পরিকল্পিত পররাষ্ট্রনীতির বিস্তারিত তুলে ধরেন ট্রাম্প। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা করবেন। ট্রাম্প বলেন, যেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহায়তা দিয়ে থাকে সেসব দেশকে অবশ্যই মূল্য পরিশোধ করতে হবে। যদি তারা মূল্য পরিশোধ না করে তবে যুক্তরাষ্ট্রের তাদের প্রতিরক্ষা সহায়তা দেয়ার দরকার নেই। প্রাথমিকভাবে জয় পাওয়ার পর ট্রাম্প নিজেকে রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মঙ্গলবার ভাষণ দেন। বক্তব্য শুরুর আগে ট্রাম্প বলেন, এটা শুধু তার নিজের মতবাদ নয়।
নির্বাচিত হলে এই নীতিতে কিছুটা নমনীয়তা আনবেন বলেও জানান তিনি। পুরো ভাষণজুড়েই ছিল ওবামা প্রশাসনের দুর্বলতা, বিভ্রান্তি এবং ভুলগুলো উপস্থাপন করা। ট্রাম্প আশা করেন, তিনি এগুলো উতরে যাবেন। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে একটা ঝাঁকি দেয়ার কথা বলে বক্তব্য শুরু করেন ট্রাম্প। এর আগে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সম্পর্কে ওবামা বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে তাদের তেল ও পানির সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। এছাড়া তাদের কঠিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মঙ্গলবার বক্তব্যেও এ কথা পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। ট্রাম্প বলেন, ক্রমবিস্তারমান ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শুধু মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নয়, পুরো বিশ্বেরই নীতি হওয়া উচিত। ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করবেন বলেও জানান ট্রাম্প। ক্ষমতায় গেলে ন্যাটোকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনাও রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এছাড়া ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সাধারণ আলোচনাও চান তিনি। ট্রাম্প বলেন, কেউ কেউ বলেন যে রাশিয়া যুক্তসঙ্গত কথা বোঝে না। এর কারণটাও আমি খুঁজে দেখতে চাই। আমি চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও ঠিক করতে চাই। তবে চীনের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাবেন তা জানাননি তিনি। নির্বাচনী প্রচারণায় নামার পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রাসী মন্তব্য করে সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ জন্য নিজের দলের ভেতরেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তবে, সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, পররাষ্ট্রবিষয়ক সম্পর্ক নিয়ে নিজের প্রথম এই বক্তৃতায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আগের চেয়ে কৌশলী ও সংযত মনে হয়েছে। লিখিত ভাষ্যের বাইরে কোনো কথা বলেননি তিনি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে নতুন করে সমীহ আদায় করার সময় এসে গেছে বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
ভাষণে মিত্র রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষার খরচ যুক্তরাষ্ট্র আর মিটিয়ে দেবে না বলেও জানিয়ে দেন তিনি। সেই সঙ্গে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীকে পরাজিত করার জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে অবশ্য ‘অভিবাসীরা ধর্ষক’ মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচনা জন্ম দেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন পদ্ধতি কারচুপিপূর্ণ : যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকের বেশি নাগরিক মনে করে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মনোনয়নের পদ্ধতি কারচুপিপূর্ণ এবং সেখানে প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়। দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান মনে করেন, এই প্রক্রিয়া পরিবর্তন করা উচিত। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বুধবার বার্তা সংস্থাটি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেট প্রার্থী বার্নি স্যান্ডার্স অনেক সময় এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনলাইনে এ জরিপ চালানো হয়। এতে সমানসংখ্যক ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান সমর্থকদের নেয়া হয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ ভোটার মনে করেন, কিছু প্রার্থীর ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রতারণামূলক। ৭১ শতাংশ ভোটারের মতে, তারা চান প্রত্যক্ষ ভোটে দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন করা উচিত। ২৭ শতাংশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই প্রাইমারি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বোঝেন না। আর ৪৪ শতাংশ মনে করেন, এই নির্বাচনে কেন ডেলিগেটদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রায় অর্ধেক মনে করেন, প্রাইমারি নির্বাচন একদিনে হওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.