কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে উৎপাদিত ১৬ পণ্য বালাইমুক্ত দাবি

কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে দেশে উৎপাদন হওয়া ১৬টি কৃষিপণ্য এখন ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে রফতানি উপযোগী। উৎপাদিত সবকটি পণ্যই সম্পূর্ণভাবে রোগ-বালাইমুক্ত। বিশেষ করে ইইউর চাহিদানুযায়ী ‘গুড এগ্রিকালচার প্র্যাকটিস’ (ক্যাপ) অনুসরণ করে এসব ফসল ফলানো হচ্ছে। রফতানিযোগ্য এ পণ্যগুলো হচ্ছে- বেগুন, করলা, কাকরোল, চিচিংগা, চালকুমড়া, পটল, শসা, ঢেঁড়স, সিম, মরিচ এবং পাতাজাতীয় সবজি পাটশাক, পুঁইশাক, লালশাক, ডাঁটাশাক প্রভৃতি। এসব পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে সংগ্রহ এবং সংগ্রহোত্তর সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করায় ইতিমধ্যে এসব পণ্য রফতানির জন্য প্রস্তুত রয়েছেন রফতানিকারকরা। বাধা কেবল সংশ্লিষ্ট রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট (পিসি) ইস্যু না হওয়া। এভাবেই নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ১১ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পিসি ইস্যু বাতিলের আদেশ তুলে নেয়ার অনুরোধ করেছেন সংশ্লিষ্ট রফতানিকারকরা। দেশের রফতানি বাড়ানোর স্বার্থে এ ১১ রফতানিকারকের পিসি ফিরিয়ে দেয়ার সুপারিশ সংবলিত একটি চিঠি সম্প্রতি সরকারের ১১টি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।
কৃষিপণ্য রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়সহ এর সংশ্লিষ্ট সবকটি বিভাগ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ চিঠি পাঠায়। এর আগে পিসি বাতিল হওয়া এ ১১ প্রতিষ্ঠানসহ বাংলাদেশের ২৮ রফতানিকারককে কালো তালিকাভুক্ত করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এসব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত ইইউ অঞ্চলে পণ্য রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে দীর্ঘ বিচার-বিশ্লেষণ করে এসব প্রতিষ্ঠানের শাস্তির সুপারিশ করে। যা পরবর্তীতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি সঙ্গ নিরোধক বিভাগ পিসি বাতিলের সুপারিশ কার্যকর করে। এ সম্পর্কিত রফতানিকারকদের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে অ্যাকশন প্ল্যানের আওতায় কন্ট্রাক্ট ফার্মিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইউকেএইড, সুইস কন্ট্রাক্ট এবং ডানিডার অর্থায়নে দেশের নয়টি জেলায় রফতানিযোগ্য এসব ফসলের বালাইমুক্তকরণের কার্যক্রম চলছে। জেলাগুলো হচ্ছে- নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাজীপুর ও কুমিল্লা এবং বান্দরবান। এসব জেলার ২০টি লোকেশনে এ ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এগ্রিবিজনেস ফর ট্রেড কমপিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এটিসি-পি) আওতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও এতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে। উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় এসব ফসলের স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারির মানদণ্ড এখন কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চাষাবাদ পদ্বতিতে সর্বাধিক কলাকৌশলের প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফসল সংগ্রহ এবং সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা হয়েছে। এছাড়া কোয়ারেনটাইন ইন্সপেকশন, পিসি সংগ্রহ, কুল চেইন মেটেইনও যথাযথভাবে করা হচ্ছে। কিভাবে খামার থেকে জিএপি এবং জিএইচপি এবং জিএমপি অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করা যায়- এ ধরনের একটি আধুনিক ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। নতুন ধারার এ ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হতে কৃষকদের সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আমের ফ্রুটি ফ্লাই ও অন্যান্য কোয়ারেনটাইন বালাই নিয়ন্ত্রণ করে যেসব এলাকায় রফতানিযোগ্য আম হয় সেসব এলাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালকদের সহযোগিতায় কৃষকদের তালিকা এবং জিএপি অনুসরণ করে উৎপাদন করার সব পথ অনুসরণ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক এসএম জাহাঙ্গীন হোসেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে তাজা শাকসবজি, ফলমূল ও পান রফতানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়ে থাকে। এটি দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। তবে কৃষিপণ্যের ৫০ শতাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রফতানি হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইইউ বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করায় ইইউভুক্ত দেশগুলোয় এখন রফতানি হ্রাস পেয়েছে। তিনি দাবি করেন, আমাদের রফতানিকারকরা তাদের অজ্ঞতা কাটিয়ে উঠেছে। এখন তারা আন্তর্জাতিকমানের পণ্য উৎপাদন করছে। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিদর্শন টিমও এ উৎপাদন কার্যক্রম তদারকি করছে। এমনকি অভিযুক্তরাও সব ধরনের কলাকৌশল ও বাজার ব্যবস্থাপনা মেনে চলছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের বাতিল করা পিসি ইস্যু করলে রফতানিকারকরা মানবিকভাবে যেমন উপকৃত হবে। দেশের রফতানিও বাড়বে।

No comments

Powered by Blogger.