ব্রাহ্মণবাড়িয়া ‘খণ্ডযুদ্ধের’ রাজনীতিকরণ by ড. আবদুল লতিফ মাসুম

সমাজের সহনশীলতার ক্ষেত্রে যে কী পরিমাণ অবনতি ঘটেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা তার একটি বড় প্রমাণ। তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল তুলকালাম। পক্ষ এবং বিপক্ষে যে রক্তক্ষরণ, ভাঙচুর এবং হানাহানি হয়েছে তাকে রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বলা যায়। বাংলাদেশ সমাজের বর্তমান প্রবণতা হচ্ছে সব কিছুর রাজনীতিকরণ। সুতরাং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমর্থনে রাজনৈতিক শক্তিগুলো সুবিধাজনক সমীকরণ ঘটিয়েছে।
ঘটনার শুরু এ রকম- কোনো এক সন্ধ্যায় শহরের জেলা পরিষদ মার্কেট এলাকায় এক ইজিবাইক চালকের সাথে শহরের এক মাদরাসা ছাত্রের বাগি¦তণ্ডা হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য এগিয়ে আসেন একজন ব্যবসায়ী। মাদরাসা ছাত্রটির ওই ব্যবসায়ীর মধ্যস্থতা মনঃপূত হয়নি। ছাত্রটি পরে তার সতীর্থদের নিয়ে ওই ব্যবসায়ীর ওপর হামলা চালায়। হামলা প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। এর সাথে যোগ দেয় ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী গোষ্ঠী। জেলা পরিষদ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল নিয়ে কান্দিপাড়া মাদরাসায় আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। এবার পুলিশের সাথে এসে ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতাসীনদের সহযোগীরা জামেয়া ইউনিসিয়া মাদরাসা ভাঙচুর করে। মাদরাসা ছাত্রদের সহায়তায় এগিয়ে আসে মহল্লাবাসী। এ সময়ে ৫০-৬০টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। আক্রমণকারীরা মাদরাসার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫০৬ রাউন্ড রাবার বুলেট এবং ৭৬ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে পুলিশের ২৫ জন সদস্যসহ ৭০ জন আহত হয়। এভাবেই শেষ হয় খণ্ডযুদ্ধের প্রথম অংশ।
ক্ষমতাসীনেরা প্রথম অংশের খণ্ডযুদ্ধে জয়লাভ করতে না পেরে মধ্যরাতে দ্বিতীয় অংশের সূচনা করে। মধ্যরাতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন সন্ত্রাসীরা মাদরাসার হিফজ বিভাগের মূলফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। আটটি কক্ষের দরজা ভেঙে মাদরাসা ছাত্রদের বেধড়ক মারধর করে তারা। বুট দিয়ে কোনো কোনো ছাত্রের মাথা মাটিতে চেপে ধরে পুলিশ। এরা মাদরাসার অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র কুরআনে হাফেজ মাসুদুর রহমানকে তিনতলা থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় মাসুদুর রহমানকে রাত ২টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার তৃতীয় অংশ শুরু হয় তার পরদিন। মাদরাসা ছাত্রের নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদরাসার বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভোর থেকেই শহরে প্রায় সব সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে জানচলাচল বন্ধ করে দেয়। শুরু হয় অঘোষিত হরতাল। শহরের সব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন ভাঙচুর করে লাইনের স্লিপার খুলে ফেলায় ঢাকার সাথে সিলেট ও চট্টগ্রামের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ জনতা স্টেশনের সুইচবোর্ড, কম্পিউটার, ১০টি সিসি ক্যামেরা, ভিআইপি কক্ষ, সিগনাল বাতি, টিকিট কাউন্টার ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাঙচুর চালায়। পরে পার্সেল কক্ষের মালামাল এবং সব আসবাপত্রে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরা শহরের ওস্তাদ আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে দু’টি অফিসকক্ষসহ সব মালামাল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা আওয়ামী লীগ অফিস, সংসদ সদস্যের কার্যালয়, প্রশিকা অফিস, শিল্পকলা একাডেমি এবং ক্ষমতাসীনদের বাড়িঘরও আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
চতুর্থ দৃশ্যে এ রকম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি তলব করা হয়। মাদরাসা ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতিতে তারা পিছু হটে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে ধাওয়া করে। পুলিশ পিছু হটে গিয়ে থানার গেটে অবস্থান নেয়। দুপুর পর্যন্ত পুলিশ থানা গেট এলাকায় অবরুদ্ধ থাকে। দুপুরের দিকে শাসক দলের সহযোগীরা মাদরাসা ছাত্রদের ধাওয়া করে। আবার শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ পর্যায়ে পুলিশ ২০-২৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সমবেত মাদরাসা ছাত্র ও সাধারণ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসন শক্তির বদলে সম্মতির কৌশল অবলম্বন করে। ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশের একটি টহল দল মাদরাসা ছাত্রদের বুঝিয়ে শুনিয়ে বিরত রাখে।
কথিত খণ্ডযুদ্ধের পঞ্চম অংশে দেখা যায়, নিহত ছাত্রের লাশ দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনীহা প্রকাশ করে। আবার বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে মাদরাসা ছাত্ররা। তারা হাসপাতাল ভাঙচুর করে। বিকেল ৪টায় ছাত্র-জনতা থানায় ঢোকে র‌্যাবের একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। এরা র‌্যাবের এক সদস্যকেও মারধর করে। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের একটি রিকুইজিশন পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে শতাধিত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ষষ্ঠ পর্যায়ে আবার সমঝোতার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমঝোতা বৈঠকের পর অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়। আলেমগণ আহূত হরতাল প্রত্যাহার করেন।
ঘটনাবলির আনুপূর্বিক বর্ণনা দিলাম এ কারণে যে, যাতে বিষয়টির ঘনঘটা, ব্যাপকতা এবং সহ্ংিসতার মাত্রা অনুধাবন করা যায়। অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘আপনার চেহারা আপনি ছোট আয়না দিয়েও দেখতে পারেন, বড় আয়না দিয়েও দেখতে পারেন’। এ ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটিকে প্রতীকী অর্থে গ্রহণ করা যায়। গোটা দেশের লোকজনের মনস্তাত্ত্বিক গড়নের এটি একটি খণ্ডচিত্র- এই খণ্ডযুদ্ধের মাধ্যমে তা প্রতিভাত হয়েছে। একই সাথে ঘটনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
আগেই বলা হয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছে। ক. ইসলামপন্থীরা ঘটনার ঘনঘটায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। বর্ষীয়ান আলেম হেফাজতে ইসলাম প্রধান আল্লামা শফী এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের রক্তে এ জমিন রঞ্জিত হলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ এবং নজিরবিহীন।’
খ. এর বিপরীতে চরম বামপন্থীরা ঘটনাটিকে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব বলে বর্ণনা করেছে। এদের কেউ কেউ ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছেন। এমনকি ব্রাহ্মবাড়িয়াকে পাকিস্তানের ছিটমহল বলে অভিহিত করেছেন। এর সাথে আইএস বা আল কায়েদার সংযোগ খুঁজেছেন কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী।
গ. অভ্যাসমতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘যত দোষ সব নন্দঘোষ’ নীতি অনুযায়ী তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ঘাড়ে চাপিয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ যে মামলা করেছে, তাতে আসামি করা হয়েছে স্থানীয় বিএনপির ৪৪ জন নেতাকর্মীকে। দেখা গেছে, ওই নেতাকর্মীরা আড়াই মাস কারাভোগের পর ঘটনার দিনই জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।
ঘটনাবলির বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করলে নিন্মোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে ওঠে:
সমাজে অসহিষ্ণুতার মাত্রা এতই তীব্রতর হয়েছে যে, একজন মাদরাসার ছাত্র তার সামান্য অপমান সহ্য করতে সংযমের পরিচয় দিতে পারেনি।
একটি অতি সামান্য ঘটনা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে আঘাত করলে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যেতে পারে।
মাদরাসা ছাত্ররা একটি বিশেষ গোষ্ঠী বা একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ-প্রতিপক্ষ- ঘটনাক্রম এ রকমই প্রমাণ করে।
মাদরাসায় শিক্ষিত ছাত্ররা সংক্ষুব্ধ হলে বড় ধরনের ভাঙচুর করতে পারে।
বরাবরের মতো আবারো প্রমাণিত হলো যে, পুলিশ নিরপেক্ষ নয়। তারা সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষার চেয়ে ক্ষমতাসীনদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে বেশি আগ্রহী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাক্রম আবারো প্রমাণ করেছে যে, জনতার শক্তি অপ্রতিরুদ্ধ। জনগণই আসল ক্ষমতার উৎস।
এই ঘটনার মাধ্যমে একটি ধূমায়িত অসন্তেষের প্রকাশ ঘটেছে। মাদরাসা ছাত্র তথা আলেম ওলামাদের মাঝে যে সুসুপ্ত ক্ষোভ, ক্রোধ, অন্যায়, অসম্মান, অবহেলাবোধ লুকায়িত আছে, তা প্রকাশ ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ঐতিহাসিকভাবে আমাদের আলেম সমাজ সম্মান ও মর্যাদার উচ্চস্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছে। ইসলামের খেদমতগার হিসেবে এবং নায়েবে রাসূল অর্থাৎ রাসূলের প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে তারা খুবই শ্রদ্ধেয়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১-এর ঘটনাবলির পরে ইসলাম, মুসলমান, আলেম-ওলেমা এবং টুপি-দাড়িওয়ালা লোকেরা বিশ্বের সর্বত্র অপাঙ্তেয় বিবেচিত হয়ে আসছে। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর পরই শুধু দাড়ি ও পাগড়ির কারণে আমেরিকায় অনেক শিখকে হত্যা করা হয়েছে। কুরআন-হাদিস, মসজিদ-মাদরাসা এবং ইসলামের প্রতীকগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যে অবমাননা এবং অপসারণের সম্মুখীন হচ্ছে। ইহুদিদের দাবি মোতাবেক কুরআন বিপজ্জনক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মার্কিন রিপাবিলিকান পদপ্রার্থী রোনাল্ড ট্রাম্প মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করছেন। আমেরিকায় মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চাইছেন। সেই রাজনৈতিক ধারাবহিকতায় বাংলাদেশসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মতো ঘটনাবলি ঘটছে।
পাশ্চাত্য তথা আমেরিকা সাবধানতার সাথে ইসলাম ও জঙ্গিবাদের পার্থক্য নির্ণয় করতে চাইলেও প্রচারণা এবং অপপ্রচারণা ইসলাম এবং জঙ্গিবাদকে এক কাতারে শামিল করেছে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ এর মিত্র খুঁজতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সর্বত্র ‘পলিটিক্যাল ইসলাম’কে বিপজ্জনক বিবেচনা করেছে। ফলে বাংলাদেশের মতো ইসলামি রাজনীতির সম্ভাবনার দেশে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ক্ষমতায় এনেছে। ক্ষমতাসীনেরা ইসলামকে পাশ্চাত্যের মতো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। বিগত তথাকথিত সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে জঙ্গি জিকির শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশে এরা তিন ধরনের- প্রথমত, মতাদর্শ আক্রান্ত বুদ্ধিজীবী শ্রেণী। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় আইএস বা আল কায়েদার ভূত দেখতে পান। দ্বিতীয়ত, মতাদর্শবিহীন স্রেফ স্বার্থবাদী জ্ঞানপাপী গোষ্ঠী। এরা পাকিস্তান এবং ইসলামকে এক করে ফেলেন। এদের কথায় মনে হয় পাকিস্তানই ইসলামের সোল এজেন্ট। এরা তাই ঘটনার উৎসমূল সন্ধান না করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পাকিস্তানের ছিটমহল মনে করেন। তৃতীয়ত, ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের কূটবুদ্ধি। এরা কোনো রাজনৈতিক ঘটনা থেকে ফায়দা হাসিলের সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাতে চান না। তাই ঘটনাটি মাদরাসা ছাত্র, ব্যবসায়ী এবং আওয়ামী সহযোগীদের- এই তিন পক্ষের হলেও মামলাটি হয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।
তাহলে আমরা দেখলাম ঘটনার মূল কারণ এড়িয়ে একই ঘটনাকে যার যার মতো করে ব্যাখ্যা করছেন রাজনীতিকেরা। এ ঘটনাবলির দ্বারা এটাও প্রমাণিত হলো যে, মাদরাসার ছাত্ররা যথেষ্ট আলোকিত, সংযমী বা সংস্কৃতিবান নয়। তা না হলে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর সংঙ্গীত প্রাঙ্গণ আক্রান্ত হতো না। একই সাথে বলা যায় যে, ‘জাতি গঠন’ এর বদলে শাসক শ্রেণী প্রথম থেকেই কৃত্রিম বিভাজনের মাধ্যমে যে বিষবৃক্ষ রোপণ করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা তারই একটি বিষফল। জাগতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষা যে অভিন্ন আলোকিত সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠার কথা- তারই অনুপস্থিতির ফলে এসব ঘটনা।
একজন মার্কিন গবেষক দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে ‘মেজরিটি মুসলিম বাট মাইনরিটি ইসলাম’। সে রকম অসম অবস্থার বাস্তব প্রমাণ দিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এই নিরেট বাস্তবতা অস্বীকার করে লাভ নেই যে, এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম অনুসারী। আলেম-ওলামা, মাদরাসা-মসজিদ এবং মাদরাসার ছাত্ররা সেই ইসলামের প্রতিনিধি। তারা একটি অনিবার্য সামাজিক শক্তি। সামাজিক শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক কাঠামোতে তাদের গ্রহণ, ধারণ, লালন এবং অনুধাবন যদি অগ্রাহ্য হয় তাহলে একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্বিকভাবেই অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.