প্রধানমন্ত্রী মোদির হঠাৎ পাক সফর নিয়ে প্রশ্ন কংগ্রেসের

এমন নাটকীয় কূটনীতির কোনো নজির ভারতীয় উপমহাদেশে নেই। অথচ সেই কাজটিই করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদি। টুইট কূটনীতির মাধ্যমে শুক্রবার দুপুরের পরে মোদিই এই অপ্রত্যাশিত সফরের কথা জানিয়েছিলেন। ফলে নাটকীয়তায় ভরা ছিল এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের সেই সফর। রাশিয়া থেকে আফগানিস্তান হয়ে ফেরার পথে নাটকীয়ভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ রাখতে শুক্রবার সন্ধ্যার পর লাহোরে পৌঁছেই পেয়েছিলেন শরীফের আলিঙ্গন। আর তার পরে শরীফের নিজের বাসভবন রাইওয়ান্দ প্যালেসে নাতনির বিয়ের অনুষ্ঠানে সকলের সঙ্গে মোদির করমর্দন। শুধু নওয়াজের জন্মদিনের উপহারই নয়, নাতনি  মেহেরুন্নিসার জন্যও নিয়ে গিয়েছেন ঝলমলে একটি শাড়ি। তারই মধ্যে বসেছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে। যার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, শোরগোল থেকে দূরে, এ এক ব্যক্তিগত যোগাযোগ। মোদির এই নাটকীয় দৌত্যে বিশ্ব মিডিয়া মোদিকে হিরো বলে অভিহিত করেছে। ভারত-পাক সম্পর্ক গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা রকম নাটকের সাক্ষী হয়েছে। প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে হঠাৎই লাউঞ্জে নওয়াজের পাশে বসে তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে প্রায় দশ মিনিট কথা বললেন  মোদি, যার কোনও পূর্বাভাসই ছিল না। আর তার পরই চূড়ান্ত গোপনে ব্যাঙ্ককের মতো একটি শহরে দু’দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা থমকে যাওয়া আলোচনা শুরুর জন্য বৈঠকে বসবেন এটাও প্রত্যাশিত ছিল না। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে মোদির লাহোর যাত্রা। কিন্তু দেশের মাটিতে মোদির সমালোচনায় সোচ্চার বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠেছে, নাটক তো হলো, ভারত-পাক সম্পর্ককে সেটা আদৌ এগিয়ে দেবে তো? কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেছেন, ভারত-পাক সম্পর্ক একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। সেটা নিয়ে ছেলেখেলা চলে না! শনিবার এই সফরের অভিসন্ধি নিয়ে চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস। মণীশ তিওয়ারি টুইট করেছেন, শোনা যাচ্ছে থিম্পুতে নরেন্দ্র মোদি এবং নওয়াজ শরীফের বৈঠকের সময়ে এক ইস্পাত ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন। তিনি নাকি এখন লাহোরে আছেন। আমরা কি কিছু অনুমান করতে পারি? সফরের অভিসন্ধি নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি মোদির এই ধরনের সফরকে জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর বলেও মন্তব্য করেছেন মণীশ। শুধু মণীশ নয়, কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্র শর্মা বলেছেন, মোদি নিজেই বলেছিলেন, চীন মডেল অনুসরণ করে এগোনো ভালো। কথাবার্তা হোক, কিন্তু মৈত্রী নিয়ে অতি নাটকীয়তা এবং অতি গুরুত্ব না দেয়াই শ্রেয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজেই এখন তা মানছেন না। তাঁর আরও অভিযোগ, বিজেপি বরাবর বলে এসেছে যে, কংগ্রেস পাকিস্তানকে বিরিয়ানি খাওয়াতে চাইছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী এখন নিজেই পাকিস্তানে গিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে আসছেন। অবশ্য কংগ্রেসের সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিজেপি দলের তরফে প্রকাশ জাভরেকর বলেছেন, পাক প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সারা বিশ্ব তাঁর এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। একমাত্র কংগ্রেসই এর বিরোধিতা করছে। মোদির পাকিস্তান সফরকে সমর্থন জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাষ্ট্রসংঘ। আর মার্কিন মিডিয়া মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ লিখেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় দু’টি প্রতিবেশী দেশের কাছাকাছি আসার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই আচমকা পাকিস্তান সফর বাড়তি বল জোগাবে। প্রায় একই সুরে মার্কিন দৈনিক ‘শিকাগো ট্রিবিউন’ লিখেছে, এই সফর দু’টি প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশকে অনেক বেশি কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিলো। টাইম ম্যাগাজিনের মতে, ২০১৪-র ২৬শে মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তুলতে  মোদির এ যাবৎ পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক এই পাকিস্তান সফরই। ওই ম্যাগাজিনে আরও লেখা হয়েছে, গত এক দশকে এই প্রথম ভারতের  কোনো প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে গিয়ে প্রমাণ করলেন, আগ বাড়িয়ে ইসলামাবাদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে দিল্লির অন্তত সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই।

No comments

Powered by Blogger.