বর্তমানে স্থানীয় সরকার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না : ড. আকবর আলী খান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেছেন, স্থানীয় সরকার সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের অংশ নয়, এটি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। ছোট প্রতিষ্ঠান হলেও এর কার্যক্রম ও দায়িত্ব অনেক। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় সরকার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
ব্র্যাক ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর যৌথ উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠকে ড. আকবর আলী খান একথা বলেন।
সোমবার অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে (জাতিসঙ্ঘ সহাস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) এসডিজি অর্জনে পর্যাপ্ত সম্পদ আহরণ ও স্থানীয় পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ড. আকবর আলী খান আরো বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যকে উপদেষ্টা করে রেখে উপজেলা পরিষদকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় এলিটরা স্থানীয় সরকারের ওপর খবরদারিত্ব করে থাকেন। এক্ষেত্রে সুশীল সমাজকে ওয়াচ ডগের ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকারকে তাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পেশ করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এবং নারীর ক্ষমতায়নের পথে অন্যতম বাধা বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে।’
ড. আকবর আলী খান বলেন, ‘বাংলাদেশ এমডিজি অর্জন বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণে উলে¬খযোগ অগ্রগতি সাধন করেছে। কিন্তু মানব উন্নয়নের সব সূচকে আমরা সেভাবে উন্নয়ন করতে পারিনি। বিশেষ করে অপুষ্টি রোধ এবং নিরাপদ পানি সরবরাহে আমরা পিছিয়ে রয়েছি।’ তিনি তাঁর বক্তব্যে ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এসডিজির লক্ষ্য তিনটি পর্যায়ে যথা বৈশ্বিক, জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে অর্জন করতে হবে বলে মত দেন।
সোমবার ‘ব্র্যাক সেন্টার ইন’ ঢাকায় ব্র্যাক কমিউনিটি অ্যামপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর যৌথ উদ্যোগে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজির স্থানীয়করণ’ বিষয়ক এক গোলটেবিল বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিনস, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার, ব্র্যাক কমিউনিটি অ্যামপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম-এর পরিচালক আন্না মিন্জ, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ-এর উপ-পরিচালক জনাব নাছিমা আক্তার জলি এবং চৌদ্দগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব রাশেদা আখতার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. বদিউল আলম মজুমদার এসডিজি’র বিশেষত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এসডিজি সংশি¬ষ্ট সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে, যদিও এমডিজি প্রণয়ন করেছিল একদল বিশেষজ্ঞ। বস্তুত এটি ‘জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য ও জনগণের এজেন্ডা’ এবং এর বাস্তবায়নও নির্ভর করবে মূলত জনগণের ওপর। যদিও নতুন এজেন্ডা এমডিজির অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত, কিন্তু এটির গুরুত্ব হলো যে, এটির পরিধি এমডিজি থেকে অনেক বিস্তৃত এবং এমডিজির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা এর লক্ষ্য।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এমডিজি অর্জনে ভালো করলেও আমরা এর সব লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। তাই এমডিজির বাস্তবতাকে সামনে রেখে পরিকল্পনা নিতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। যে পরিকল্পনা হবে জনঅংশগ্রহণমূলক। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে চাপিয়ে দেয়া কোনো পরিকল্পনা তথা একপেশে পরিকল্পনা দিয়ে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। এছাড়া শুধুমাত্র স্থানীয় সম্পদের ওপর নির্ভর না বৈদেশিক সম্পদ আহরণের ওপর নজর দিতে হবে এবং দেশের সব অঞ্চলের জন্য সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।’
রবার্ট ওয়াটকিনস বলেন, ‘এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উলে¬খযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। এখন এসডিজি অর্জনে বৈশ্বিক পরিকল্পনার পাশাপাশি জাতীয়ভাবে তথা স্থানীয়ভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন দরকার হবে।
নাছিমা আক্তার জলি, এসডিজি অর্জন করতে হলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, তাদের তথ্য দিয়ে সচেতন ও সক্রিয় করে তুলতে হবে।
রাশেদা আখতার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হলে সম্পদ ও জনবল বাড়াতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার।

No comments

Powered by Blogger.