নারায়ণগঞ্জের মতো ভোট হবে: আশরাফ

এবারের পৌরসভা নির্বাচন হবে নারায়ণগঞ্জের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো। ওই নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচনও অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের দিন রাতে বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম ওসমানকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র পদে বিজয়ী হন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পৌর নির্বাচন থেকে সরে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করব, নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত, ভোট গণনা পর্যন্ত থাকুন। নির্বাচন বয়কটের মতো কিছু করবেন না।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বিতর্কিত হলে খালেদা জিয়ার লাভ কী? নির্বাচন বিতর্কিত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচন বিতর্কিত হলে খালেদা জিয়ার কিছু হবে না। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনারও কিছু হবে না। দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা গণতন্ত্রকে বিতর্কিত করতে দিতে পারি না।’
বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) পৌর নির্বাচনে থাকবেন কি না, সন্দেহ আছে। সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে কি না, এ নিয়ে এখনো সন্দেহ আছে।’
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নানা অভিযোগ সম্পর্কে সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপি জিতলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, আওয়ামী লীগ জিতলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি—এটা ঠিক না। নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নির্ণয়ে রেফারি হলো গণমাধ্যম। বিএনপি বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ করে থাকে। কোনো অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও একজন নির্বাচন কমিশনার সেনাবাহিনী না নামালে পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম যে সেনাবাহিনী না নামিয়েও নির্বাচন সুষ্ঠু করব, তা-ই হয়েছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে।’ তিনি বলেন, আসলে নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আর সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে সরকার শতভাগ দায়িত্ব পালন করবে। তাঁর আশা, নির্বাচন কমিশনও তার সাংবিধানিক দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবে। তবে দলীয় প্রতীকে প্রথমবার নির্বাচন হচ্ছে। ফলে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাবনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সবগুলোতে জিতে গেলেও সরকারের কিছু আসবে-যাবে না। আবার একটাতেও না জিতলে সরকার পরিবর্তন হয়ে যাবে না। সরকার পরিবর্তন হবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে। তবে আওয়ামী লীগের নিজস্ব জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র-কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা জয়ী হবেন। এখন নির্বাচনের দিন বোঝা যাবে, জরিপ সঠিক কি না।
মুক্তিযুদ্ধ ও শহীদের সংখ্যা নিয়ে করা বিএনপির নেত্রীর মন্তব্যেরও জবাব দেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি বলেন, ‘উনি (খালেদা) শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের কটাক্ষ করে কথা বলছেন। তিনি কেন এই বিতর্ক তৈরি করলেন? এই বিতর্কের কারণ কী? নিশ্চয়ই এর পেছনে তাঁর কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে। উনি এগুলো বলেন, কারণ উনি দেশকে ভালোবাসেন না। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না।’
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তৃতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ইতিমধ্যে মামলা হয়েছে। কোর্টে উঠেছে। কী হয় এর জন্য অপেক্ষা করছি।’
পৌর নির্বাচনের পর সরকার পতনের আন্দোলন—বিএনপির চেয়ারপারসনের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘উনি (খালেদা) এটা ১৯৯৬ সাল থেকেই দিচ্ছেন।’
নির্বাচনে ভোটারের আচরণ নিয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘আমি চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি। মানুষের ভোট দেওয়ার কারণ কি আমার আচরণ, নাকি উন্নয়ন? কেন মানুষ ভোট দেয়, সেই রহস্যটা আজও খুঁজে পাইনি।’ নিজের জেলা কিশোরগঞ্জের অতীতের পৌর নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি।
পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে দলের ধানমন্ডির কার্যালয়ে এর আগে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলন করেছেন মাহবুব উল আলম হানিফ। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেন সৈয়দ আশরাফ। গতকাল খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে দলের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য সংবাদ সম্মেলনের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আবদুর রাজ্জাক, ফরিদুন্নাহার লাইলী, আবদুস সোবহান গোলাপ, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.