নির্বাচন কমিশনের মূল্যায়ন

ব্রিটিশ উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডি নিয়োজিত স্বাধীন নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) সম্পর্কে যে অভিমত দিয়েছে, তাতে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটেছে। কমিশন সম্পর্কে জনগণের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অথচ সংবিধান থেকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করার সময় নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ এই যুক্তি দিয়েছিল যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আর কোনো উদ্বেগ নেই। যে কারণে একদা আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করেছিল, সেসব কারণ দূর হয়েছে। মাগুরায় একটি সংসদীয় উপনির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের অসহায়ত্ব ফুটে ওঠার প্রেক্ষাপটে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আন্দোলন দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সরকার থেকে দাবি করা হয়েছিল যে কমিশনকে যথেষ্ট শক্তিশালী করা হয়েছে। এখন প্রমাণ মিলছে যে এই দাবির ভিত্তি নাজুক থেকে গেছে। ব্রিটিশ নিরীক্ষক হানা রবার্টস প্রতিবেদনটি তৈরি করেন ২০১৪ সালের মার্চে। তাঁর মূল্যায়নের সঙ্গে আমরা একমত যে নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময়ে সামর্থ্যহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
বিশেষ করে কমিশন যে স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, তার অন্যতম অকাট্য প্রমাণ হলো নিজস্ব লোকবল থাকা সত্ত্বেও তারা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রেষণে এনে ভোট পরিচালনা করছে। একই মনোভাব থেকে তারা ভোট গ্রহণকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর তাদের কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিরত থাকে। সুতরাং ভোট অনুষ্ঠানটি বাস্তবে নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ারভুক্ত বিষয় হিসেবেই প্রতীয়মান হয়। এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে তাদের ক্ষমতা থাকলেও তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা মোটেই প্রয়োগ করে না। আমরা আশা করব, নির্বাচন-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের প্রায় ২৩ লাখ ডলার সহায়তা প্রদানকারী ডিএফআইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে সবার যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত হবে। কোনো অজুহাতেই একে অগ্রাহ্য করা সমীচীন নয়। নির্বাহী বিভাগ অবশ্যই কমিশনের ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.