‘খাওন চাইলে খুন্তি গরম কইরা ছেঁকা দিত’

শিশু সুমাইয়া। তার মুখের দিকে তাকালে যে কারও মায়া লাগবে। কতইবা তার বয়স। হয়তো ছয় কী সাত। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে খেলতে খেলতে স্কুলে যাওয়ার কথা। সেই বয়সে তাকে করতে হচ্ছে গৃহপরিচারিকার কাজ! পরিবারের আর্থিক অনটন তার কপাল পুড়েছে। তাই স্কুলের কড়িডর ছেড়ে তার স্থান হয়েছে গোসলখানা আর রান্নাঘরে। সারাদিন ধোয়ামোছা, ফুট ফরমায়েশের মধ্যে দিন কাটে তার। মজার বিষয় হলো, সে নিজেই শিশু। আবার দুই শিশুর দেখাশোনা! তাতেও তার দুঃখ নেই। দুবেলা খাবার তো ঝুটছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সামান্য খাবারের জন্য শিশু সুমাইয়াকে অমানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। ক্ষুধায় জ্বালায় ছটফট করলেও মন গলেনি পাষণ্ড গৃহকর্ত্রীর। বরং, গরম খুন্তি দিয়ে তার  শরীরে ছ্যাঁকা দেয়া হয়। যন্ত্রণায় যতই কাঁদতো ততই ছ্যাঁকা দেয়া হতো। গতকাল দুপুরে নির্যাতনের শিকার শিশু সুমাইকে উদ্ধার করে গৃহকর্ত্রী হালিমা বেগম (৩০) কে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলা শাহীবাজার এলাকায়।
শিশু সুমাইয়া জানায়, ‘তিন দিন ধরে তাকে খাবার দিত না। খাবারের জন্য চিৎকার করে কাঁদলেও মন গলেনি খালাম্মার (গৃহকর্ত্রী)। খাওন (খাবার) চাওয়ায় আমারে খুন্তি গরম কইরা ছ্যাঁকা দিত। গরম সহ্য না করতে পাইরা যত কাঁদতাম ততই ছ্যাঁকা দিত আর মারতো’। কথাগুলো বলতে বলতে নিজের শরীরে নির্যাতনের আঘাতের চিহ্নগুলো দেখায় সুমাইয়া। নির্যাতনের সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা বলে নিজেই কাঁদতে শুরু করে।
সুমাইয়া জানায়, তাদের পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণেই মূলত কাজে আসা। ৭ দিন আগে পূর্ব পরিচয়ের জের ধরে হালিমা বেগম শরীয়তপুর বাড়িতে গিয়ে সুমাইয়াকে নিয়ে আসে।
সুমাইয়া বলে, ‘আমাকে দিয়ে ভারী কাজ করানোর ফলে আমি দুর্বল হয়ে যাই। ঠিকমতো খাবার দিত না। বরং, কিছু হলেই মারধর করতো। খালাম্মার দুই সন্তানকে আমাকেই দেখে দেখে রাখতে হতো। একটু ওরা কাঁদলেই আমাকে মারধর করতো।
সুমাইয়াকে উদ্ধারের পর তার শরীরে নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র দেখে আশেপাশের লোকজনও আঁতকে উঠে। ফলে পুলিশ নির্যাতনের অভিযোগে গৃহকর্ত্রী হালিমা বেগমকে আটক করে নেয়ার সময়ে তার উপর হামলা করে আশেপাশের বিক্ষুব্ধ লোকজন। এতে আহত হন পুলিশ কনস্টেবল ইব্রাহিম খলিল। আটক হালিমা বেগম সৌদি আরব প্রবাসী আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী। তার নিজেরও দুই সন্তান রয়েছে। নির্যাতনের শিকার সুমাইয়া শরীয়তপুর জেলার ডামুড্ডা এলাকার মোকসেদ মিয়ার মেয়ে। মোকসেদ কাঠুরিয়ার কাজ করেন। আর মা রিনা বেগম গৃহিণী।
ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এস আই ইকবাল হোসেন জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে সুমাইয়াকে উদ্ধার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.