ফাইজাকে নিতে চান অনেকেই by সালমা বেগম

ফাইজাকে দত্তক নিতে ভিড় ছোটমনি শিশু নিবাসে। কেউ কেউ যোগাযোগ করছেন মোবাইল ফোনে। কিন্তু শিশু নিবাস এখনই কারও জিম্মায় দিতে চায় না ফাইজাকে। এ নিয়ে শিশু নিবাসের উপপরিচালক সেলিনা পারভীন বলেন, অনেকে বাচ্চা দত্তক নিতে চান ভাল কথা। কিন্তু কেবল ফাইজাই কেন? এখানে তো ২ দিন বয়সী বাচ্চাও রয়েছে। জন্মের ২৭তম দিনে ছোটমণি শিশু নিবাসে নিয়ে আসা হয় ফাইজাকে। এরপর পার হয়ে গেল একসপ্তাহ। শিশু নিবাসের উপপরিচালক সেলিনা পারভীন বলেন, এখনও প্রতিনিয়তই এই শিশুকে দত্তক নিতে আসছেন। ভিড় করছেন ছোটমণি নিবাসে। সেলিনা আক্তার বলেন, কাউকেই কথা দেইনি। সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বাচ্চা দত্তক নেয়ার কোন নীতিমালা নেই। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শিশু দত্তক দেয়া হয়। এটার জন্য অনেক নিয়মের মধ্যে যেতে হয়। ফাইজার ব্যাপারে তিনি বলেন, মহামান্য আদালত যদি মনে করেন তাহলেই এটা সম্ভব। তিনি উল্লেখ করেন, এখানে ২৬টি বাচ্চা আছে। ফাইজা তো ২৭ দিন বয়সে এসেছে। কিন্তু দুই দিন বয়স এমন বাচ্চাও আছে আমার কাছে। ফাইজাকে যদি দত্তক দিতেই হয়, তাহলে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আওতাধীন ৮০টি পরিবার আছে। তাদের কাছে দেবো। যে শিশুর দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে তার জন্য এত ভিড় কেন? তিনি অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিনের এত ভিড়ের কারণে অন্য বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে সমস্যা হচ্ছে। সময় মতো কাজ শেষ করতে পারি না। সংবাদকর্মী এবং দত্তক নিতে আগ্রহী মানুষের ভিড় এড়াতে ছোটমনি নিবাসের প্রধান দরজাসহ কয়েকটি স্থানে প্রবেশ সংরক্ষিত লিখে দেয়া হয়েছে। ছোটমনি শিশু নিবাসের বেশ কিছু সমস্যার কথাও তুলে ধরেন সেলিনা আক্তার। বলেন, ২৬টা বাচ্চাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শীত আসছে। বাচ্চাদের একটু বেশি যত্নের প্রয়োজন। কিন্তু একজন আয়া দিয়ে তো আর ২৬ জন বাচ্চার কাজ করানো সম্ভব নয়। কমপক্ষে তিনজন আয়া প্রয়োজন। নাইট ডিউটি করার জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। ছোট বাচ্চাদের রাতে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে হয়। এভাবে হিসাব করলে ২৬ জন আয়া দরকার। উপপরিচালক বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ধাক্কা দিয়ে চালানো হচ্ছে। ছোটমনি নিবাসে ১০০ সিট থাকলেও নেই পর্যাপ্ত লোকবল। ছোট্ট এসব শিশুর দেখাশোনার জন্য প্রশিক্ষিত দুজন লোক দরকার। নার্সের কোন পোস্ট নেই। শিশুরা একটু অসুস্থ হলেই হাসপাতালে নিতে হয়। তখন তো আরও সংকটে পড়ি। সকাল-দুপুর-রাত তিন সময় তিনজনকে পাঠাতে হয় হাসপাতালে। বর্তমানে যারা এখানে কাজ করছেন, অনেকেই দায়সারা। মানবতা কিংবা আগ্রহ নিয়ে এই বাচ্চাদের দেখাশোনা করা দরকার। কিন্তু দীর্ঘ সময় কাজ করার কারণে একঘেঁয়েমি চলে আসছে। বাচ্চাদের সঙ্গে সঙ্গে এসব কর্মীরও একটু বিনোদনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। প্রতিদিন পাঁচবার খাওয়াতে হয় এক একটি বাচ্চাকে। ছয়জন বাচ্চা একসঙ্গে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় যিনি বাচ্চাদের নোংরা কাপড় পরিষ্কার করেন তাকেই বাচ্চাদের খাওয়ানোর কাজ করতে হয়। ছোটমনি নিবাসে সাত বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের রাখা হয়। সাত বছরের পর তাদের অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। সেলিনা আক্তার বলেন, এখানে আসার সময় কোন বাচ্চাই জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট নিয়ে আসে না। আমরা বাচ্চাদের দেখে অনুমান করে বয়স নির্ধারণ করি। বাচ্চার বয়স সাত বছর হলে তাদের শিফট করার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, ছোটমনি নিবাসে প্রতিবন্ধী শিশুদের রাখা হয় না। কারণ, তাদের পিছনে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। এছাড়াও সার্বক্ষণিক পরিচর্যার জন্য একজনকে সঙ্গে সঙ্গে থাকতে হয়। এখানে সেরকম ব্যবস্থা নেই। সেলিনা আক্তার বলেন, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সর্বমোট ১১ জন উপ-তত্ত্বাবধায়ক এখানে কর্মরত ছিলেন। কেউই খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না এখানে। কিন্তু আয়া, খালাসহ বাচ্চাদের দেখাশোনা যারা করছে তারা কেউ কেউ চৌদ্দ-পনের বছর থেকেই এখানে কাজ করছেন।

No comments

Powered by Blogger.