কাবায় সৌদি আরবের অভিভাবকত্ব হুমকিতে

মুসলমানদের কেবলা পবিত্রতম কাবা শরিফ তাওয়াফে হজ করতে সৌদি আরবে আসেন সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু মিনায় ভয়াবহ পদদলনে শত শত হাজীর নিহত হওয়ার ঘটনায় হজ ব্যবস্থাপনাসহ কাবা শরিফে সৌদির রক্ষণাবেক্ষণ ও অভিভাবকত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণজমায়েত ব্যবস্থা ও মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িত প্রিয় স্থান আল্লাহর ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের যোগ্যতা সৌদি সরকারের নেই। মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইরান প্রযুক্তি ও উন্নয়নের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও দেশটির শিয়া জনগোষ্ঠী ও অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বে তারাও পিছিয়ে রয়েছে। ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে। ১৯২৪ সালে হাশেমি শাসকদের থেকে মক্কা দখলে নেন ইবনে সাউদ। তখন থেকেই কাবার রক্ষণাবেক্ষণ হজের সময় হাজীদের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব একচ্ছত্রভাবে পালন করে আসছে সৌদি আরব। কিন্তু তাদের এ দায়িত্বে সম্মতি নেই গোটা মুসলিম বিশ্বের। সাউদের মক্কা জয়ের পর কাবার নিরাপত্তার দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছিলেন স্বঘোষিতভাবে। মুসলিম জাতিগুলো নিয়ে সম্মেলন হলেও কেহ সেচ্ছায় স্বীকৃতি দেয়নি।
ফলে আজও একক দায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধই রয়ে গেছে। সৌদি আরব জাতীয় দুটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এক মরুভূমিসুলভ দেশটির নিচে থাকা তেল সমুদ্রের ব্যবস্থাপনা। দুই মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র কাবার হেফাজত। প্রশ্ন উঠেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে সৌদির আদৌ কাবার হেফাজত ও তেল সম্পদ ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা আছে কিনা। গত বৃহস্পতিবার মিনায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার সময় যে মর্মান্তিক দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে তা এ প্রশ্নের সমুচিত উত্তর। এছাড়া ২০০৬ ও ১৯৯০ সালেও প্রায় একই ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন হাজীরা। অন্যদিকে গত মাসে অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যবহৃত একটি দানবীয় ক্রেন ধসে অনেক হাজী নিহত ও আহত হয়। এসব ঘটনার পেছনে মূলত অব্যবস্থাপনাই দায়ী। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার চাবি হাতে নিতে ব্যাকুল ইরান এসব যুক্তি উপস্থাপন করেছে। দাবি করেছে এ দায় মাথায় নিয়ে সৌদিকে ক্ষমাও চাইতে হবে বলে। বাস্তবে সৌদির গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় দুটিতে দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা নেই। ইতিমধ্যে দেশটির তেলের মূল্য তলায় ঠেকেছে। আড়ম্বর পূর্ণতায় ডুবে থাকা রাজকীয় পরিবার খাপখাওয়াতে পাড়ছে না এ অর্ধগামী গতির সঙ্গে। যাতে তাদের নিত্য ব্যয়ের চাকা সচল থাকলেও স্থির হয়ে পড়ছে মধ্য ও নিুবিত্ত নাগরিকদের জীবনব্যবস্থা। অন্য দিকে লেবাননে হুথিদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোয় আরও বিপদের বোঝা মাথায় চাপিয়েছে দেশটি। সব মিলিয়ে নেতৃত্ব প্রদানে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের যে সব উপাদান প্রয়োজন তার কোনোটিই নেই।
যাও আছে সেগুলো একেবারেই ভঙ্গুর। অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার স্বপ্নবিলাসী ইরান নানা রাজনৈতিক প্রচেষ্টায় সৌদির এ অযোগ্যতা বিশ্বের সামনে সুচারু রূপে তুলে ধরছে। চেষ্টা করছে সৌদির অবস্থান নড়বড়ে করে নিজের গদির শেকড় ছড়াতে। কিন্তু স্বপ্ন সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়। শিয়া অধ্যুষিত হওয়ায় এ অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের করায়ত্ব করতে পারবে না দেশটি। সবমিলিয়ে আগে-পাছে কূটনৈতিক চেষ্টা অব্যাহত রাখছে ইরান ও সৌদি আরব। যার মূলে রয়েছে এ অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রাখা। এ সুবাদেই কাবার দায়িত্ব নিয়ে সৌদির প্রতি প্রশ্ন ছুড়ছে ইরান। কাবাকে ঘিরে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সৌদি পদক্ষেপ নিলেও বাগড়া দিয়ে বসেছে ইরান। পদদলিত হয়ে মিনায় নিহত ৭৬৯ জনের মধ্যে ইরানের নাগরিক রয়েছে ১৪০ জন। যে জন্য রাজনৈতিক দৃষ্টি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে তেহরান। একক তদন্তে পক্ষপাতিত্ব থাকতে পারে বলে এ বিরোধিতা করেছে তারা। মক্কার এ ট্র্যাজেডিকে আঞ্চলিক আধিপত্যে ভাগ বসানোর একটি কলকাঠি হিসেবে বিবেচনা করছে তেহরান। কিছুটা সফল হলেও নিজের অযোগ্যতায় এ লড়াইয়ে টিকতে পাড়বে না সেও। তাই প্রশ্ন রয়েই গেল সৌদি-ইরান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে দাদাগিরি করবে কে? কে নেবে কাবার দায়িত্ব? নেতৃত্ব প্রদানে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের যেসব উপাদান প্রয়োজন তার কোনোটিই নেই সৌদির। অন্যদিকে শিয়া অধ্যুষিত হওয়ায় এ অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের করায়ত্ত করতে পারবে না ইরান

No comments

Powered by Blogger.