ভারত-বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল 'অবরুদ্ধ' নেপাল

নেপালের নতুন সংবিধান নিয়ে ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে ভারত-নেপাল সম্পর্ক৷ সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুর কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীরা পোড়ালেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা৷ তাদের অভিযোগ, ভারত নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনধিকার চর্চা করা ছাড়াও আর্থিক অবরোধ করে সে দেশের সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফেলেছে৷ মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের একজন, নার্সিংয়ের ছাত্রী অমৃতা বারাল ভারতীয় দূতাবাস যাওয়ার পথে বলেন, 'আমরা ভারতকে অনুরোধ করছি, সীমান্ত খুলে দিন আর নেপালের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত হোন৷' ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি৷
গত সপ্তাহে, নতুন সংবিধান গৃহীত হওয়ার পর থেকে দক্ষিণ নেপালের তরাই অঞ্চলে এর বিরোধিতায় শামিল হয়েছেন মদেশি ও থারু সম্প্রদায়৷ এদের অভিযোগ, সংবিধানে তাদের যথেষ্ট অধিকার ও প্রতিনিধিত্ব মেলেনি৷ এই আন্দোলনের ফলে জ্বালানি, সব্জি ও ইমারতি দ্রব্য বহনকারী বহু লরির সীমান্তে আটকে পড়ে৷
সমস্যার তীব্রতা সম্পর্কে নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লক্ষ্মীপ্রসাদ ঢাকাল বলেন, 'আর্থিক অবরোধের জন্য, শেষ চার দিনে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ে কোনো ট্রাক নেপালে ঢোকেনি৷ সোমবার অবশ্য গাড়ির জ্বালানি ও রান্নার গ্যাসের কয়েকটি কনসাইনমেন্ট প্রবেশ করেছে৷'
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নেপাল অয়েল কর্পোরেশন সোমবার গাড়ির জ্বালানিতে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছে৷ প্রতি সপ্তাহে মোটরবাইকের ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে তিন লিটার আর চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে ১০ লিটার৷ এর ফলে বহু পেট্রল পাম্পে এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে৷ আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলিকেও বলা হয়েছে তাদের বিমানগুলি যেন অন্য দেশে জ্বালানি ভরে তবেই নেপালে অবতরণ করে৷
ভারতের সঙ্গে নেপালের বাণিজ্যিক সীমান্ত পাঁচটি৷ এ গুলি হলো রক্সৌল, কাকরভিট্টা, বিরাটনগর, ভৈরাওয়াহা ও নেপালগঞ্জ৷ নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রক্সৌল-বীরগঞ্জ সীমান্তে গোলমালের খবর এলেও বাকিগুলোতে অবস্থা শান্তিপূর্ণ ছিল৷ তবু ভারতের শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা মালবাহী লরি যাতায়াতের বিরোধিতা করেন৷
নেপাল তার প্রযোজনীয় পণ্যের ৭০ শতাংশই আমদানি করে ভারত থেকে৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, ভারতের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে, নেপাল চীন সীমান্তের দুটি পথ আবার খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এ বছরের এপ্রিলের প্রাণঘাতী ভূমিকম্পে এ দুটি বন্ধ রাখা হয়েছিল৷
অন্য দিকে, সংবিধান বিরোধী দল ও গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনার জন্য নেপালের তিন প্রধান বিরোধী দল- নেপাল কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল ও ইউসিপিএন মাওবাদী- তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গে অন্যান্য দলের শীর্ষনেতাদের এক বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷
নেপাল কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা শের বাহাদুর দইবা বলেছেন, 'আমার আশা, এই কমিটি বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করার পর এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারবে৷'
'নেপালে ভারত সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ শুরু করেছে'
নেপাল ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির (কৃষক-শ্রমিক দল) প্রধান নারায়ন মান বিজুকাচে বলেছেন, ভারত নেপালের সাথে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ শুরু করেছে।
সোমবার ভক্তপুরে একটি অনুষ্ঠান পুরস্কার বিতরণকালে তিনি বলেন, সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভারত নেপালে সাম্প্রদায়িক ও গোত্রীয় যুদ্ধ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ভারত উদ্দেশ্যমূলকভাবে মদেশি সম্প্রদায়কে ব্যবহার করেছে। এ লক্ষ্যে ভারত পরোক্ষভাবে সীমান্তে অবরোধ আরোপ করেছে, যা নেপালের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক আচরণ।
তিনি জরুরি প্রয়োজন মেটাতে চীন থেকে পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং বাংলাদেশ থেকে গ্যাস আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকারের উচিত উত্তর দিক থেকে সীমান্ত খোলার উদ্যোগ নেয়া।
সূত্র : কাঠমান্ডু পোস্ট

No comments

Powered by Blogger.