অভিবাসী–সংকট আরও গভীর হচ্ছে

হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের কেলেটি রেলওয়ে স্টেশন চত্বর থেকে
গতকাল অভিবাসন-প্রত্যাশীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ।
এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় স্টেশন চত্বর বন্ধ রাখা হয়। পরে
তা খুলে দেওয়া হলেও অভিবাসীদের আর ঢুকতে দেওয়া হয়নি
মূলত মধ্যপ্রাচ্যসহ এশীয় দেশগুলো থেকে ইউরোপমুখী অভিবাসন-প্রত্যাশীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে ওই অঞ্চলে চলমান অভিবাসী-সংকট দিন দিন আরও গভীর হচ্ছে। গত সোমবার এক দিনেই অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পৌঁছায় ৩ হাজার ৬৫০ জন অভিবাসী; যা এক দিনে ভিয়েনায় পৌঁছানো অভিবাসীর সংখ্যার রেকর্ড। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
যুদ্ধ, সংঘাত ও দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে মূলত সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার নাগরিকেরা নৌকায় সাগর পার হওয়াসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পথে ইউরোপে যাচ্ছে। আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত দেশ চাদ, নাইজার, সুদানসহ সাব-সাহারা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মানুষও হয়েছে পশ্চিম ইউরোপমুখী। ইউরোপের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশগুলোতে ঢোকার পথ হিসেবে তারা ব্যবহার করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইউ) দেশ হাঙ্গেরিকে। অনেক অভিবাসীরই লক্ষ্য ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ জার্মানি।
অস্ট্রিয়ার পুলিশের মুখপাত্র প্যাট্রিক মাইরহোফার গতকাল মঙ্গলবার বলেন, সোমবার এক দিনেই ট্রেনযোগে ভিয়েনা পৌঁছায় ৩ হাজার ৬৫০ জন অভিবাসী। এ নগরে এক দিনে পৌঁছানো অভিবাসীর সংখ্যার ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড। মুখপাত্র বলেন, হাঙ্গেরি কর্তৃপক্ষ ভিসা না থাকা সত্ত্বেও অভিবাসীদের বুদাপেস্ট থেকে ছেড়ে দিচ্ছে।
অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোহানা মিকল-লেইটনার শরণার্থী আইন নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে জার্মানির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে, অভিবাসীদের নিজ দেশে নিতে জার্মানি ট্রেন পাঠাচ্ছে হাঙ্গেরিতে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে জার্মানিকে। এতে হাঙ্গেরিতে থাকা অভিবাসীদের কোনো ধরনের মিথ্যা আশ্বাস দিতে হবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বৈধ শ্রমিকের অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা থাকায় সেখানে বিভিন্ন দেশে চলাফেরা সহজ। এ ছাড়া শেংগেন চুক্তিভুক্ত এক দেশের ভিসা থাকলেই চুক্তিভুক্ত অন্য দেশগুলোতে যাওয়া যায়।
হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের প্রধান রেলস্টেশনে অভিবাসীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এই পরিস্থিতিতে গতকাল একপর্যায়ে পুলিশ ওই স্টেশন চত্বর খালি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ‘স্টেশন থেকে আর কোনো ট্রেন ছেড়ে যাবে না এবং কোনো ট্রেন এসে পৌঁছাবে না’—এমন ঘোষণা দিয়ে পাঁচ শর বেশি অভিবাসী নারী, পুরুষ ও শিশুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। স্টেশনের মূল প্রবেশপথ এক ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ করে রাখা হয়।
এর আগে সোমবার হাঙ্গেরির ওই স্টেশন থেকে বেশ কিছুসংখ্যক অভিবাসী জার্মানিগামী ট্রেনে উঠতে সক্ষম হয়। ট্রেনে ওঠার জন্য সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন সিরিয়া থেকে আসা পদার্থবিদ্যার ছাত্র ইহাব ইয়াসিন (১৮)। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, অবশেষে সত্যিই জার্মানি যাচ্ছি।’ জার্মানির কোন শহরে যাবেন, তা এখনো ঠিক করতে পারেননি ইয়াসিন। তবে হামবুর্গ হলে সবচেয়ে বেশি ভালো হয় বলে মনে করছেন। ইয়াসিন জানালেন, সিরিয়ার লাটাকিয়া শহর থেকে নানা পথ পেরিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে কয়েক দিন আগে হাঙ্গেরি পৌঁছান তিনি।
একই স্টেশনে ট্রেনে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছিলেন একজন পাকিস্তানি। তিনি জানালেন দেশে একটি ছোট দোকান ছিল। তালেবান জঙ্গিরা প্রতি সপ্তাহে গিয়ে পয়সা না দিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে যেত। তাই দেশ ছেড়েছেন।
হাঙ্গেরি বলছে, শুধু আগস্ট মাসেই ৫০ হাজার অভিবাসন-প্রত্যাশী দেশটিতে প্রবেশ করেছে। গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের মতো অভিবাসী ঢুকছে। এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সব মিলিয়ে চলতি বছর এরই মধ্যে তিন লাখের বেশি অভিবাসন-প্রত্যাশী ইউরোপে পৌঁছেছে বলে তথ্য দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার।

No comments

Powered by Blogger.