উত্তাল মোদির গুজরাট

কোটার দাবিতে আন্দোলনরত প্যাটেল সম্প্রদায়ের সদস্যরা
গতকাল ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের একটি রেলপথের
ওপরে তারে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ
সদস্যরা সেগুলো সরিয়ে ফেলেন। ছবি: রয়টার্স
প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাট। সরকারি চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংরক্ষিত কোটার দাবিতে গত মঙ্গলবার সম্প্রদায়টি আন্দোলনে নামলে এ সমস্যার সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষে সেখানে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। পরিস্থিতি সামলাতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর পিটিআই, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বিবিসির। গুজরাটের কমবেশি ১৫ শতাংশ মানুষ প্যাটেল সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা হীরক প্রক্রিয়াজাত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। অনেকে হীরকের ব্যবসা বা কৃষিকাজেও যুক্ত। অর্থনৈতিকভাবে রাজ্যে তারাই যথেষ্ট প্রভাবশালী। তবে নিম্নবর্ণের জন্য অন্যান্য অনগ্রসর জাতি (ওবিসি) কোটার বিধান রাখায় প্যাটেল সম্প্রদায়ের লোকজনকে অসুবিধায় পড়তে হয় বলে বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য। নিজেদের অন্যান্য ওবিসি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে প্যাটেল সম্প্রদায়। কিন্তু এই দাবি নিয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকারের সঙ্গে প্যাটেলদের ক্রমেই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার সম্প্রদায়টির কয়েক লাখ সদস্য গুজরাটের রাজ্যের প্রধান শহর আহমেদাবাদে জমায়েত হয়। এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাত্র ২২ বছর বয়সী হার্দিক প্যাটেল। তিনি বিজেপি সরকারের উদ্দেশে বলেন, সরকার প্যাটেলদের দাবি অবজ্ঞা করলে আগামী ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে গুজরাটে হারতে হবে বিজেপিকে। এরপর রাজ্যজুড়ে মঙ্গলবার বন্ধ্ পালনের ডাক দেন হার্দিক। ঘোষণা দিয়ে আহমেদাবাদে অনশনে বসেন তিনি। রাতে হার্দিক প্যাটেলকে অনশন মঞ্চ থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা শুরু করে তারা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় রাস্তায় অন্তত ১০০টি বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তিতে ভাঙচুর করে তারা।
বিক্ষোভকারীরা গুজরাটের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রজনী প্যাটেলের বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের নেতা হার্দিককে ছেড়ে দেয়। তবে পরিস্থিতি সামলাতে আহমেদাবাদের কয়েকটি এলাকার পাশাপাশি সুরাট এবং মহেসানা জেলায়ও কারফিউ জারি করা হয়। মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে আহমেদাবাদের বস্ত্রাল এলাকায় পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হয়। গতকাল আহমেদাবাদে আরেকজন নিহত হয়। আর আহমেদাবাদ থেকে ১৪৫ কিলোমিটার দূরের পালানপুর শহরে একটি থানায় গতকাল স্থানীয় ৩০০-৪০০ বিক্ষোভকারী হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে দুজন নিহত হয়। এ ছাড়া মহেসানা জেলায় সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গুজরাটে নিয়মিত পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (র্যাফ), সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশের (সিআরপি) প্রায় পাঁচ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর কয়েকটি দল বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছে। আর গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্কুল-কলেজ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহনও। ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেল। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহিংসতা পরিহার করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সব সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.