শুভ্রার শেষকৃত্য সম্পন্ন

নয়াদিল্লির লোদি রোড শশ্মানে দেশ-বিদেশের বিশিষ্টদের উপস্থিতিতে চোখের জলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হল ভারতের ফাসর্ট্ট লেডি প্রণবপত্মী শুভ্রা মুখার্জির। সক্রিয় রাজনীতি দুর অস্ত, বরাবরই তিনি ছিলেন অন্তঃপুরবাসিনী। কিন্তু বিদায়ের শেষ বেলায় জনজোয়োরের আবেগে ভেসে দৃশ্যত তিনিও হয়ে উঠলেন জননেত্রী। অন্যদিকে রাইসিনা হিলসের রাষ্ট্রীয় প্রোটোকলের নিগড়ে একা হয় গেলেন ‘বাংলাদেশ-বন্ধু’ ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধায়। বুধবার সকাল থেকেই নজিরবিহীন আবেগঘন ঘটনার সাক্ষী হয়ে তাকাল ভারতের রাজধানী শুভ্রা মুখার্জির মরদেহের সামনে দ৭াড়িয়ে রীতিমতো অশ্র“সজল চোকে বিহ্বল হয়ে দ৭াড়িয়ে রইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ শ্রদ্ধা জানালেন উপ রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং, বিজেপির প্রবীন নেতা লাকৃষ্ণ আদবানি, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, দিল্লির উপ রাজ পাল নাজিব জং, মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালসহ জাতীয় রাজনীতির নেতা-নেত্রীরা। বুধবার সকালের বিমানে বোন রেহানাক, মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও পরাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলীকে সঙ্গে নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের বিশেষ বিমান দিল্লি যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সোজা যান রাষ্ট্রপতি ভবনে, দেখা করেন প্রণব মুখার্জির সঙ্গে। সেখান থেক প্রণববাবুর সঙ্গেই তালকটোরা রোডের বাড়িতে (ছেলে অভিজিৎ মুখার্জির বাড়ী) যান শেখ হাসিনা। দীর্ঘক্ষণ মরদেহের পাশে দ৭াড়িয়ে শোকস্তব্ধ প্রণববাবুকে সমবেদনা জানান প্রতিবেশি প্রধানমন্ত্রী। আগেরদিন খবর পেয়েই রাষ্ট্রপতি ভবনে ফোন করেছিলেন শেখ হাসিনা। কথা বলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সংসদ সদস্যের জানান, প্রণব ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর শেখ হাসিনার তাঁর দুই ছেলে মেয়ে জয় আর পুতুলকে নিয়ে দিল্লি আসেন। বোন রেহানার তখনও বিয়ে হয়নি।
গীতাই (শুভ্রা মুখার্জির ডাক নাম) তখন ওদের অভিভাবক ছিল।’ বিশ্লেষকরা বলেন, এত বছর পরেও এই সম্পর্ক কতটা আত্বিক তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এদিন দেখেই আন্দাজ করা যা। ফার্স্ট লেডির প্রয়াণে অন্য দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছুটে আসার ঘটনাই সম্পূর্ণ নজিরবিহীন। এর উপর এদিন তালকটোরা রোডের বাড় থেকে লোদি রোড শ্মশান পর্যন্ত শেষ যাত্রায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই গাড়িতে সওয়ার হন শেক হাসিনা। রাষ্ট্রপতির কনভয়ের সঙ্গেই পুস্তস্তবক সুসজ্জিত শবাবাহী শকটে শেষকৃত্যে নিয়ে যাওয়া হয় স্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ। লোদি রোড শ্মশানেই শেষ শ্রদ্ধা জানান দুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, শেখ হাসনাসহ সকুেল। শবশয্যার পাশে নীরবে দ৭াড়িয় চিলেন কন্যা শর্মিষ্ঠা, পুত্র অভিজিৎ এবং ইন্দ্রজিৎ। তবে মৃতদেহ চুল্লিতে ঠোকানোর সময় আবেগের বাঁধ ধরে রাখতে পারেননি মমতা এবং হাসিনা। শ্রদ্ধা জানয়ে যখন সব ভিভিআইপিরা ফিরে যাচ্ছেন, তখনও চুল্লির গেট ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন উপমহাদেশের এক রাষ্ট্রপ্রধান এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। শোকার্ত শেখ হাসিনা বার বার চোখের জল মুছছিলেন। পরে দিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে মোদর সঙ্গে বেঠক করতে যান শেখ হাসিনা। বিকেলের বিমানেই ফের সপার্ষদ ঢাকা ফিরে আসে শেখ হাসিনা। মায়ের মূল পারলৌকিক অনুষ্ঠান বীরভূমের কীর্ণহারের গ্রামের বাড়িতেই করতে চান অভিজিৎ। তবে বাবার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়ার পরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ভিভিআইপিরা চলে যাওয়ার পরই শ্মশানের গেট খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য।

No comments

Powered by Blogger.