ইরান–বিশ্বশক্তি ঐতিহাসিক সমঝোতা
অবশেষে
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দেশটির সঙ্গে ছয় পরাশক্তির সমঝোতা হলো। এর
ফলে তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করবে। বিনিময়ে তাদের ওপর থেকে
অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়া হবে। বিশ্বনেতারা এ চুক্তিকে স্বাগত
জানিয়েছেন। খবর এএফপি, এনবিসি নিউজ ও বিবিসির। অস্ট্রিয়ার রাজধানী
ভিয়েনায় টানা সর্বশেষ দফা আলোচনার ১৮তম দিনে গতকাল মঙ্গলবার চুক্তিটি
সম্পাদিত হয়। চড়াই-উতরাই আর অনিশ্চয়তায় ভরপুর দীর্ঘ এ
আলোচনা-প্রক্রিয়াকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুদিন আগেই বর্ণনা করেছিলেন
‘কষ্টকর রকম ধীরগতির’ বলে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সব পথ বন্ধ করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব আগের চেয়ে আরও নিরাপদ ও অধিকতর সুরক্ষিত হলো।
ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেন, ‘চুক্তিটি বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে “নতুন অধ্যায়ের” সূচনা করেছে। এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তাঁরা পারস্পরিক অবিশ্বাস ধাপে ধাপে কমাতে পারবেন। এটা একটা পারস্পরিক চুক্তি, দুই পক্ষকেই এটি মানতে হবে। ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে না।’
ইরান যাতে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করে বোমা বানাতে না পারে, এর জন্য প্রায় এক দশক ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ইরান বরাবর দাবি করে এসেছে তার পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।
বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা চুক্তিটি বিলম্বিত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলীয় সদস্যরা এই চুক্তির বিপক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। সৌদি আরবও বিরোধিতা করেছিল এই ধারণা থেকে যে এতে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের প্রভাব বাড়বে।
চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বয়ে আনতে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনি বলেছেন, চুক্তিটি সারা বিশ্বের জন্য এক নতুন আশার ইঙ্গিত। ইরান-বিশ্বশক্তির সমঝোতার ফলে বিশ্ববাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেন, চুক্তিতে ইরান যেসব অঙ্গীকার করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা যাচাই করে দেখতে পারবেন বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে ‘বড় বিজয়’ আখ্যা দিয়েছেন। তবে ইরানকে শত্রু বিবেচনা করা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ চুক্তি একটি ঐতিহাসিক ভুল বলে মন্তব্য করেছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া এবং জার্মানির প্রতিনিধিরা ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত রাখার জন্য ২০০৬ সাল থেকে দেশটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।
ইরানের সংবাদমাধ্যম বলেছে, চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেশটির তেল ও গ্যাস-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক লেনদেন, উড়োজাহাজ ও জাহাজ চলাচলের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হবে। ফলে দেশটি বিপুল অঙ্কের বাণিজ্য ও সম্পদ আবার সচল হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে পরমাণুকেন্দ্রের দুই-তৃতীয়াংশ সেন্ট্রিফিউজ অপসারণ করে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে মজুত করতে হবে। দেশটিকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের ৯৮ শতাংশই বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি আইএইএকে যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। চুক্তির যেকোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন অবরোধ দ্রুত পুনর্বহাল করা হবে বলে সতর্ক করে দেন ওবামা।
পরমাণু চুক্তিতে কী আছে
চুক্তির মূল দলিল ১০০ পৃষ্ঠার। সঙ্গে পাঁচ পাতার সংযুক্তি আছে। আলোচনা একেবারে শেষ হলে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলকে ইরানের সামরিক ক্ষেত্রগুলো পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হবে
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণের অনুরোধ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে ইরান
ইরান শর্ত অমান্য করলে ৬৫ দিনের মধ্যে তাদের ওপর আবার অবরোধ
অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো যথাক্রমে আরও পাঁচ ও আট বছর বহাল থাকবে
ইরানের শত শত কোটি ডলার দামের জব্দ সম্পদ মুক্ত করা হবে
চুক্তির প্রথম ১০ বছরে ইরান উন্নত সেন্ট্রিফিউজের জন্য গবেষণা করতে পারবে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সব পথ বন্ধ করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্ব আগের চেয়ে আরও নিরাপদ ও অধিকতর সুরক্ষিত হলো।
ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক ভাষণে বলেন, ‘চুক্তিটি বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে “নতুন অধ্যায়ের” সূচনা করেছে। এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে তাঁরা পারস্পরিক অবিশ্বাস ধাপে ধাপে কমাতে পারবেন। এটা একটা পারস্পরিক চুক্তি, দুই পক্ষকেই এটি মানতে হবে। ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে না।’
ইরান যাতে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহার করে বোমা বানাতে না পারে, এর জন্য প্রায় এক দশক ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ইরান বরাবর দাবি করে এসেছে তার পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।
বিভিন্ন মহলের বিরোধিতা চুক্তিটি বিলম্বিত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলীয় সদস্যরা এই চুক্তির বিপক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। সৌদি আরবও বিরোধিতা করেছিল এই ধারণা থেকে যে এতে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের প্রভাব বাড়বে।
চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বয়ে আনতে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মগেরিনি বলেছেন, চুক্তিটি সারা বিশ্বের জন্য এক নতুন আশার ইঙ্গিত। ইরান-বিশ্বশক্তির সমঝোতার ফলে বিশ্ববাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান ইউকিয়া আমানো বলেন, চুক্তিতে ইরান যেসব অঙ্গীকার করেছে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা যাচাই করে দেখতে পারবেন বলে তিনি আত্মবিশ্বাসী।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ চুক্তিটিকে স্বাগত জানিয়ে এটিকে ‘বড় বিজয়’ আখ্যা দিয়েছেন। তবে ইরানকে শত্রু বিবেচনা করা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ চুক্তি একটি ঐতিহাসিক ভুল বলে মন্তব্য করেছেন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া এবং জার্মানির প্রতিনিধিরা ইরানকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত রাখার জন্য ২০০৬ সাল থেকে দেশটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন।
ইরানের সংবাদমাধ্যম বলেছে, চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেশটির তেল ও গ্যাস-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক লেনদেন, উড়োজাহাজ ও জাহাজ চলাচলের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হবে। ফলে দেশটি বিপুল অঙ্কের বাণিজ্য ও সম্পদ আবার সচল হবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে পরমাণুকেন্দ্রের দুই-তৃতীয়াংশ সেন্ট্রিফিউজ অপসারণ করে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে মজুত করতে হবে। দেশটিকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের ৯৮ শতাংশই বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি আইএইএকে যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে প্রবেশাধিকার দিতে হবে। চুক্তির যেকোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বিভিন্ন অবরোধ দ্রুত পুনর্বহাল করা হবে বলে সতর্ক করে দেন ওবামা।
পরমাণু চুক্তিতে কী আছে
চুক্তির মূল দলিল ১০০ পৃষ্ঠার। সঙ্গে পাঁচ পাতার সংযুক্তি আছে। আলোচনা একেবারে শেষ হলে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলকে ইরানের সামরিক ক্ষেত্রগুলো পরিদর্শনের সুযোগ দেওয়া হবে
জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণের অনুরোধ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে ইরান
ইরান শর্ত অমান্য করলে ৬৫ দিনের মধ্যে তাদের ওপর আবার অবরোধ
অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যাপারে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো যথাক্রমে আরও পাঁচ ও আট বছর বহাল থাকবে
ইরানের শত শত কোটি ডলার দামের জব্দ সম্পদ মুক্ত করা হবে
চুক্তির প্রথম ১০ বছরে ইরান উন্নত সেন্ট্রিফিউজের জন্য গবেষণা করতে পারবে
No comments