আতরের তোলা ৪০,০০০ by উৎপল রায়
আতরের
নাম ‘উদ আল জাজাব’। মধ্য প্রাচ্যের দুবাইয়ের বিখ্যাত ‘আজমল’ কোম্পানির আতর
এটি। এক তোলা আতরের দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। রাজধানীর বায়তুল
মোকাররমের ‘বরকতি আতর হাউস’-এ পাওয়া যাচ্ছে উদ আল জাজাব। এছাড়া নুরানী আতর
হাউসে সিলেটের বিখ্যাত ‘আগর’ আতর বিক্রি হচ্ছে তোলা প্রতি ৩০ হাজার টাকায়।
বিক্রেতারা বলছেন, সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের রাজা, বাদশা, ধনকুবের ও শেখরা এসব
সুগন্ধি ব্যবহার করেন। তবে, বাংলাদেশের সৌখিন উচ্চবিত্তদের মধ্যেও এসব
দামি সুগন্ধি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। দাম বেশি হলেও বিত্তবানদের অনেকেই
দোকানদারদের তাগিদ দিয়ে এসব দামি ও সুগন্ধি আতর নিচ্ছেন। ঈদের দিন পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাকের সঙ্গে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সুগন্ধি আতর ব্যবহার
করবেন। সবাই মিলে যাবেন ঈদের জামাতে। এজন্য আতর কেনার ধুম লেগেছে। রাজধানীর
অভিজাত বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাথের দোকানগুলোতে বিভিন্ন মানের ও
দামের আতর বিক্রি হচ্ছে দেদার। বায়তুল মোকাররম, পুরানা পল্টন, কাকরাইল
মসজিদ, নিউ মার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বিভিন্ন
ধরনের আতর কিনছেন। বায়তুল মোকাররমের বিভিন্ন আতরের শোরুমগুলো ঘুরে দেখা
গেছে আতর কেনার চিত্র। বরকতি আতর হাউসে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা তোলার উদ আল
জাজাব আতরের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে, আজমল কোম্পানির হাতকড়া উদ প্রতি
প্যাকেট (১০০ মিলিগ্রাম) ৪০ হাজার টাকা, আল থোরাইয়া প্রতি প্যাকেট ৩৫ হাজার
টাকা, আসিম প্রতি প্যাকেট ১৫ হাজার টাকা, আতিফা প্রতি প্যাকেট ৭ হাজার ৫০০
টাকা, থাউজেন্ড ওয়ান নাইট প্রতি প্যাকেট ১০ হাজার ৫০০ টাকা, বাখুরখজ প্রতি
প্যাকেট ৩ হাজার টাকা, জিজিয়ান প্রতি প্যাকেট ২ হাজার ৫০০ টাকা, বাহরাইন
পার্ক-৬ হাজার টাকা বোতল, আল রিয়েল উদ প্রতি বোতল ৬ হাজার টাকায় বিক্রি
হচ্ছে। এছাড়া বিখ্যাত এরাবিয়ান কোম্পানির সুইস এরাবিয়ান, জান্নাতুল ফেরদৌস,
জান্নাতুল নাঈম, হাবখুশ, মোখাল্লাত মালকি, নূরা, রাশিকা, মাইসুন মোখাল্লাত
আল বারাক নামের আতর ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত
প্যাকেট ও বোতলে বিক্রি হচ্ছে নির্ধারিত দামে। এসবের পাশাপাশি আরও পাওয়া
যাচ্ছে উদ আল মানাসেক, উদ মালিকি আতিক, উদ আমিরি, খালতাত আল মুলুক, খালতাত
আল জাওয়াহের, আল হারামাইন স্পেশাল, খালতাত আল থানি, মুখাল্লাত মালিকি,
খালতাত নৌফ, আতর আল কসুর, মুবাখার মালিকি, মুবাখার আতিক, আতর লামহা, বদর আল
হায়াত, মুখামারিয়া আতিক, খালতাত আল মাহা, দুবাই টাওয়ার, আলমাস, আল খালিজ
কপ, মাতার আল হাব, মুখামারিয়া মালিকি, বুরুজ আল হারামাইন, সাফিনা আল আরব,
নাইট ড্রিম, তোফা আতর, আল বোরাক, টুইন ফ্লাওয়ার, মমতাজ, রেইনবো নামের আতর।
মান ও ওজনভেদে এসব আতরের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা
পর্যন্ত। আতর ব্যবসায়ী মো. আবদুল গাফফার বলেন, প্রতি ঈদুল ফিতরে আমাদের
প্রতিষ্ঠানে বিচিত্র ও বাহারি মানের আতরের সম্ভার থাকে। এবারের ঈদেও এর
ব্যতিক্রম নয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানের ক্রেতারা বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও
বিত্তবান শ্রেণীর এবং তারা সৌখিন। আমরা নামীদামি সুগন্ধি সরবরাহ করে তাদের
মনোরঞ্জনের চেষ্টা করি। ৪০ হাজার টাকা তোলার উদ আল জাজাব আতরের বিষয়ে তিনি
বলেন, এ আতর সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের রাজা, বাদশা ও ধনকুবেররা ব্যবহার করেন।
তবে, বিশেষ দিনে বাংলাদেশের বিত্তবানদের মাঝেও হাতকড়া উদ ও উদ আল জাজাব আতর
ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। তাদের অনেকেই অর্ডার দিয়ে আতর আনিয়েছেন। আমরাও
যথাসাধ্য তা সরবরাহ করছি। বায়তুল মোকাররমের বর্ধিত সুপার মার্কেটের নুরানী
আতর হাউসে বিক্রি হচ্ছে মৌলভিবাজারের বড়লেখার সুজানগরের বিখ্যাত আগর আতর।
দাম জানতে চাইলে প্রতি তোলা ৩০ হাজার টাকার কথা বলেন দোকানিরা। নুরানী আতর
হাউসের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুখ জানান, আগর নামের গাছ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে এ
সুগন্ধি আতর তৈরি হয়। বাংলাদেশে এর চেয়ে ভাল আতর আর নেই। তিনি বলেন,
বাংলাদেশের এই আতরের কদর রয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশে।
সেখানকার রাজা, শেখ ও ধনকুবেররা আগর আতর ব্যবহার করেন। বাংলাদেশেও বিশেষ
দিনে আগর আতর ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। বিশেষ কেউ অর্ডার দিলে আমরা এই
সুগন্ধি সরবরাহ করি। দাম একটু বেশি হলেও এর মান যথেষ্ট ভাল বলে জানান তিনি।
আগর আতর ছাড়াও তাইফি রোজ প্রতি তোলা ১২ হাজার টাকা, ইরানি জাফরান ৮ হাজার
টাকা, বসরাই গোলাপ ২ হাজার টাকা, ভারতীয় মেশকে আম্বর ৩ হাজার টাকা, ভারতীয়
সস ২ হাজার ৪০০ টাকা, কাশ্মীরি বেলি ৮০০ টাকা, পাকিস্তানি দরগা ১২০০ টাকা,
জান্নাতুল ফেরদৌস ১২০০ টাকা, পাকিস্তানি কস্তুরি ২৪০০ টাকা তোলা বিক্রি
হচ্ছে আতরের শোরুমগুলোতে। বায়তুল মোকাররমে সুগন্ধি আতর কিনতে আসা ধানমন্ডির
ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, অনেক দিন ধরেই সুগন্ধি আতর ব্যবহার করি। আর
ঈদ হলেতো কথাই নেই। পরিবারের সবার জন্যই সবচেয়ে ভাল আতরের সন্ধানে থাকি।
দাম একটু বেশি লাগলেও ভাল মানের সুগন্ধিই আমাদের চাই। এ দিকে রাজধানীর
পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, কাকরাইল মসজিদ এলাকা ঘুরে দেখা
গেছে, ঈদ আসন্ন হওয়ায় ফুটপাথের আতরের দোকানগুলোতেও আতর কিনছেন সাধারণ
মানুষ। দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলী, জুই, রজনীগন্ধা, গোলাপ
ফুলের সুগন্ধিযুক্ত তোলা ও প্যাকেট আতর বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা
থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
No comments