মানব পাচার সিন্ডিকেট আত্মগোপনে by রাসেল চৌধুরী

কক্সবাজারে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক শীর্ষ মানব পাচারকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় গডফাদার-দালালদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনে ভয়ে আর আতঙ্কে মানবপাচারে জড়িতদের অধিকাংশই গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে রাঘববোয়ালদের অনেকেই এখনও এলাকায় বহাল তবিয়তে অবস্থান করছে। এদের পরিচয়ে সরকারি দলের তকমা থাকায় তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে মানব পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৃথক পৃথক ২টি তালিকা তৈরি করেছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তদন্ত প্রতিবেদনে মানবপাচারের সঙ্গে ২৯৭ জন পাচারকারী জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে রয়েছে  কক্সবাজার জেলার  সাড়ে ৩ শতাধিক পাচারকারীর নাম। দুটি তালিকাতেই রয়েছে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতাসহ অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তির নাম। উভয় তালিকায় রয়েছে উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির ভাই মুজিবুর, শফিক, ফয়সাল ও এমপির আত্মীয়স্বজন ও আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত অনেক রাজনৈতিক নেতার  নাম। তবে এ পর্যন্ত এদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, ৭ই মে থেকে  এ পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে  তালিকাভুক্ত ৫ জন মানব পাচারকারী নিহত হয়েছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছে ১৫ জন। এর মধ্যে টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন ও উখিয়ায় ১ জন ও সদরের ঈদগাঁও ভোমারিয়া ঘোনায় ১ জন নিহত হয়েছে।
টেকনাফে নিহতদের মধ্যে মানব পাচার আইনে ধলুর বিরুদ্ধে ৯টি, জাফর আলমের বিরুদ্ধে ৮টি ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার।
উখিয়ায় নিহত জাফর মাঝি মানবপাচারের তালিকাভুক্ত। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মানব পাচার আইনে ৪টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন।
জেলা পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,  মানবপাচারের তালিকায় জেলার বহু ক্ষমতাধর ও শীর্ষ  রাজনৈতিক অনেক নেতার নাম রয়েছে।  কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা এখনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেয়নি। তাই ক্ষমতাধররা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, মানব পাচার জিরো টলারেন্সে না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে। মানব পাচারকারীদের লাগাম টানতেই পুলিশের এই বিশেষ অভিযান বলেও জানান তিনি। মানবপাচারের শিকড়  তুলে ফেলতে  যা করা দরকার পুলিশ সব করবে বলে  তিনি দাবি করেছেন।
তিনি আরও জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শীর্ষ মানব পাচারকারীরা গা-ঢাকা দেয়ায় পুলিশের অভিযান এখনও তেমন সফলতার মুখ দেখেনি।

No comments

Powered by Blogger.