বর্ষবরণে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন, ৬ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বহিষ্কার

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করায় ছাত্রলীগের ৬ কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মী নাজমুলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বাসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে নাজমুল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাজমুলসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী উত্তরণ বাসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছিল। চানখারপুলে এলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নাজমুলসহ কয়েকজনকে মারধর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। নাজমুল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এদিকে, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। মঙ্গলবার নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে সাতটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের চৌরঙ্গীর মোড়ে এক আদিবাসি ছাত্রী এ যৌন নিপীড়নের শিকার হন। অভিযুক্ত ৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে এরইমধ্যে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। প্রতক্ষদর্শীরা জানায়,  ৪৩তম ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রী নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষে হলে ফিরছিলেন। হলে ফেরার পথে চৌরঙ্গীর মোড়ে শহীদ সালাম বরকত হলের ৫ ছাত্রলীগ কর্মী তাদের পথ আটকায়। এ সময় কোন কিছু না বলে ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই আদিবাসী ছাত্রীকে ধরে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। তারা ঐ ছাত্রীর শাড়ী ধরে টান দেয় এবং সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। তার কাছে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেয়। ওই সময় ছাত্রীদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। যৌন হয়রানির শিকার ঐ ছাত্রী ও তার সহপাঠী মিলে পাঁচ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে সনাক্ত করে প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রক্টর তপন কুমার সাহা অভিযোগ আমলে না নিলে তারা  ভিসি বরাবর অরেকটি অভিযোগ করেন।  বহিষ্কৃতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য নিশাত ইমতিয়াজ বিজয় (জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ), শহীদ সালাম বরকত হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নাফিজ ইমতিয়াজ (রসায়ন বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ), ছাত্রলীগকর্মী আবদুর রহমান ইফতি (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ), রাকিব হাসান (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ) ও নুরুল কবীর (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ)। এ বিষয়ে যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী বলেন, বর্তমানে আমি এবং আমার সহপাঠীরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে এই সন্ত্রাসী ছাত্রদের ছাত্রত্ব বাতিল ও শাস্তির দাবি জানাই। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে।
বর্ষবরণে যৌন হয়রানির ঘটনায় হাইকোর্টের রুল
বাংলা বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। যৌন হয়রানির ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, রুলে তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
পুলিশের আইজি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।
যৌন হয়রানির ওই ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেন, বাঙালি জাতিসত্ত্বার এত বড় সম্মিলন নববর্ষ উদযাপন, যাতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই উদযাপন করে থাকে।
এমন একটি অনুষ্ঠানে ‘নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতা ও দায়িত্বে অবহেলার’ দায়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, জারি করা রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, পুলিশের রমনা জোনের ডিসি ও শাহবাগ থানার ওসিকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে।
এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১৭ মে দিন রাখা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে সংঘবদ্ধ একদল যুবক কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করে। নারীদের ওপর হামলা ঠেকাতে গিয়ে হাত ভেঙে যায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দীর। ওই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে গত দুদিন ধরে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে নারী অধিকার ও ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ ওই ঘটনায় দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে।

No comments

Powered by Blogger.