নতুন ইতিহাসের পথে হিলারি

দীর্ঘদিনের জমে থাকা জল্পনার অবসান হলো। দৃপ্তকণ্ঠে হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন ঘোষণা দিলেন- আমি আরও অনেক কিছু করার জন্য প্রস্তুত। আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চাই। তার এই এক ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে মিডিয়ায় যেন ঝড় বয়ে গেল। কে কার আগে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে এটা উপস্থাপন করতে পারে তা নিয়ে যেন প্রতিযোগিতা। হিলারির সমর্থকগোষ্ঠীর মধ্যে যেন প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার প্রচণ্ড সুযোগ রয়েছে হিলারির। হিলারি ক্লিনটন বললেন, প্রতিদিনই আমেরিকানদের জন্য প্রয়োজন একজন চ্যাম্পিয়নের। আমি হতে চাই সেই চ্যাম্পিয়ন। মাসের পর মাস বলা যায় বারাক ওবামা প্রথম দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকেই জোর গুঞ্জন শুরু হয় যে, হিলারি ক্লিনটন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। সেই দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটালেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার বিকাল ৩টায় তার ওই ঘোষণা সংবলিত ২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন এক সমীকরণ এসে ভর করেছে। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন তাহলে সেটা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের জন্য এক নতুন মাইলফলক। কারণ, তিনিই হবেন দীর্ঘ ইতিহাসের আমেরিকার প্রথম কোন নারী প্রেসিডেন্ট। স্বামী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে নিয়ে পুরনো স্ক্যান্ডাল রয়েছে, নিজে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ই-মেইল নিয়ে কথিত কেলেঙ্কারি থাকলেও হিলারির রয়েছে অন্য রকম এক জনপ্রিয়তা। নারী প্রার্থী হিসেবে দলমত নির্বিশেষে তার প্রতি সহানুভূতি রয়েছে সর্বমহলের। তবু হিসেবি হিলারি। তিনি কোন পক্ষকে খেপাননি। সবার জন্যই বক্তব্য রেখেছেন। তার স্বামী ১৯৯১ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি আমেরিকানদের স্বপ্নকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। বিশেষ করে যে মধ্যবিত্তের কথা সবাই ভুলে থাকে তাদের কাছে তার ওই প্রতিশ্রুতি ছিল জোরালো। অনেক ভোটারের ধারণা রয়েছে যে, মধ্যবিত্তের হওয়ায় তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সেই ধারণাকে পাল্টে দিতে চান হিলারি। প্রত্যাশা করা হচ্ছে তিনি নিজের সেরাটা দিয়ে সেই ধারণা পাল্টে দেবেন। তিনি মধ্যবিত্ত শব্দটি ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে ব্যবহার করছেন ‘প্রতিটি দিন আমেরিকানদের’। হিলারি তার নির্বাচনী প্রচারণার ওয়েবসাইটটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন রোববার। ওই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা সংবলিত ভিডিও-বার্তা। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে প্রার্থী হওয়ার লড়াইয়ে নিজের নাম ঘোষণা করেন। ২০০৮ সালে ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শীর্ষপর্যায়ের রাজনীতিতে খুব অচেনা মুখ বারাক ওবামার কাছে হেরে বিদায় নেন তিনি। কিন্তু, হিলারির যোগ্যতা নিয়ে কোন প্রশ্ন ছিল না মার্কিনিদের মধ্যে। সফলভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের কারণে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। তাই তিনি নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা করছিলেন হিলারি সমর্থকরা। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি ঘোষণা দিয়ে ভিডিও-বার্তাটি পোস্ট করেন। ওই ভিডিওতে কয়েকজন মার্কিনিকে তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা বলতে দেখা গেছে। হিলারি সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন ঘটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ভিডিওটির শেষ দিকে হিলারি বলেন, তাই আমি আপনাদের ভোট অর্জনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছি। কারণ, এটা আপনাদের সময় এবং আমি আশা করি আপনারা আমার এ যাত্রায় যোগ দেবেন। এ সপ্তাহে আইওয়া থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন হিলারি। এদিকে এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও হিলারি ক্লিনটনের প্রার্থিতায় তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ওদিকে আগামী মাসে আরও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে হিলারি তার প্রচারণা শুরু করবেন।

No comments

Powered by Blogger.