রাষ্ট্র বনাম অনুগত প্রজা by এরশাদ মজুমদার

এ ধরনের শিরোনামের কারণ নিয়ে নিজে খুবই ভাবি। প্রায় প্রতিক্ষণই ভাবি, এ রাষ্ট্রটা কী এবং কেন? আমি এ রাষ্ট্রের কে? কী জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজন? রাষ্ট্র আমার জন্য কী করে আর আমি রাষ্ট্রের জন্য কী করি? বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমার চিন্তার ধারা এ রকমই। মাতৃভূমি আর স্বাধীনতাকে ভালোবাসি বলেই ৭১ সালে আমি জীবন বাজি রেখেছিলাম। নিজের মৃত্যুর খবর নিজেই শুনেছি লোকমুখে। স্বাধীনতাই নাকি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। সে রাষ্ট্র মানুষের মুক্তির স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে। না, আমার সে স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হবে বলে মনে হচ্ছে না। এ রাষ্ট্র আমার কাছে অচেনা।
আমি এমনিতেই খুবই আবেগী মানুষ। আবেগ আমার চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করে। আমার জন্ম মার্চ বা ফাল্গুন মাসে। এ মাসের জাতকেরা নাকি সব কিছুই হৃদয় দিয়ে দেখে ও বিবেচনা করে, বুদ্ধি দিয়ে নয়। নিজের আবেগকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সারা জীবন কষ্ট পেয়েছি। আমার পরিবার-পরিজন ও বন্ধুরা আমায় চিনতে পারে না। ভাবি, দুনিয়ার সব মানুষই কি আমার মতো ভাবে? আমাকে একটু সম্মান করে আদর করে কেউ কথা বললে- আমিই ধরে নিই যে, তিনি খুবই ভালো মানুষ। ৫০-এর দশকে ৬০ ভাগ ভালো মানুষ ছিলেন প্রায় সবখানে। তারও আগে বাবাদের আমলে ৮০ ভাগ মানুষ ভালো ছিলেন। দাদাদের আমলে বা তারও আগে ৯৫ ভাগ মানুষ ভালো ছিলেন। সে সময়ে জমিজমা বেচাকেনা হতো মৌখিকভাবে। দলিল ছিল না। কারণ, মানুষ সহজ-সরল ছিলেন আর একে অপরকে বিশ্বাস করতেন। আখেরাতের কথা ভেবেই মানুষ মন্দ কাজ করত না। ৫০ সাল ছিল আমার বাল্যকাল। এখন আমি বৃদ্ধ। চার দিকে ৯০ ভাগ মানুষ নষ্ট হয়ে গেছে বলেই আমার মনে হয়। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। সবাই সবাইকে ঠকানোর কাজে ব্যস্ত। অন্যায়-অবিচারের পথে অর্থবিত্ত, সহায়-সম্পদ আহরণের কাজে সবাই ব্যস্ত। মানুষ সৎ আর অসৎ কাজের মাঝে কোনো ফারাক দেখতে পায় না। জন্মের মাসের কারণে আমি সীমাহীন আবেগী মানুষ, সে কথা আগেই বলেছি। ডাক্তার বলেন, বেশি আবেগ শরীর খারাপ করবে। বেশি আবেগে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আবেগের কারণে আমার পক্ষে কখনোই শাসক হওয়া সম্ভব ছিল না। এমনকি সংসারেও আমি কর্তা নই। আমার বিবিজানই সব কিছু করেন। এর কারণ, বুঝতে পারি না, এ জগত সংসারে কোন কাজটা আগে করা দরকার বা পরে করলেও চলবে। প্রায়োরিটি এক্সপেনডিচার বিষয়টি বুঝতে পারি না। আমি নিজের দেনা শোধ না করে কেউ চাইলে ধার দিয়ে দিই, অথবা গরিব কাউকে দান করে ফেলি। আমার বিবিজান বলেন, সংসারে আমি একজন মেহমান। আমি নাকি ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই। নোয়াখালিতে বলে, ঘরের খেয়ে মসজিদে আজান দেয়।
এর মানে, জগৎ-সংসারে আমার মতো মানুষের কোনো প্রয়োজন নেই। এমন একজন অপ্রয়োজনীয় মানুষ কেমন করে আজো বেঁচে আছি, বুঝতে পারি না। আমার দ্বারা জগতের কী উপকার হয়েছে? আল্লাহ আমাকে কেনই বা সৃষ্টি করেছেন?
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৭ মার্চ। তিনি তো জগদ্বিখ্যাত মানুষ। আমি খুব কাছে থেকে তাঁকে দেখেছি। তিনিও আবেগপ্রবণ ছিলেন। তার সাহস ছিল। কোনো কিছুকেই ভয় পেতেন না। ফলে তিনি তার বন্ধু ও মুরুব্বীদের পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেছেন। ঠিক-বেঠিক চিন্তা করেননি সব সময়ে। যা ভালো মনে করতেন তাই করার জন্য এগিয়ে যেতেন। কিন্তু আমি পারিনি, কারণ তার মতো সাহস আমার ছিল না। তবে ব্যক্তিগত মানমর্যাদা রক্ষার জন্য জীবন দিতে পারি। আমার সম্মানের কাছে জগৎ কিছুই না। তবুও বুঝতে পেরেছি, জগৎ-সংসার বা সমাজ কখনোই আমার মনের মতো হয়নি। রাষ্ট্র্র বা সমাজ কখনোই আমাকে মানুষ হিসেবে সম্মান করেনি; বরং অবিরাম নির্যাতিত হয়েছি।
সমাজের নিয়ম-কানুন তৈরি হয়েছে ক্ষমতাবান শক্তিশালী মানুষের দ্বারা। আইন বা নিয়ম-কানুনের লক্ষ্য হলো, ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা রক্ষা করা আর প্রজা নামের মানুষদের দমন করে অনুগত রাখা। বাদশাহী যুগ থেকে হাল আমল পর্যন্ত আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি একই ধারায় চলে আসছে। তবে নিষ্পেষিত-নির্যাতিত মানুষের বিদ্রোহ ও বিপ্লবের কারণে আইন কিছুটা রূপ বদলিয়ে মানবিক হওয়ার মুখোশ পরেছে।
মোগল আমলে আমরা প্রজা ছিলাম, এখনো প্রজা আছি। আমাদের রাষ্ট্রের নাম ‘প্রজাতন্ত্রী’। জনগণতান্ত্রিক নয়। কারণ, এখনো যারা আইন প্রণয়ন করেন তারা একটি গোষ্ঠী। এদের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য প্রজাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজেদের অধীনে রাখা। সে জন্য শাসকেরা নানা বাহিনী তৈরি করেছেন প্রজা দমনের জন্য। প্রজাদের আবার আদর করে নাগরিক (সিটিজেন) নাম দেয়া হয়েছে। বাদশাহরা প্রজাকল্যাণের নামে আইন বানাতেন। ইংরেজরাও দখলদার হিসেবে প্রজা দমনের জন্য কোতোয়াল বা পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছে। ফলে লাঠি-ডাণ্ডা-বেত আইনের প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে। যদিও এখন আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয় প্রজা নিপীড়নের জন্য।
সমাজ, রাজ্য ও রাষ্ট্রে খাজনা আদায়ের ব্যবস্থা সুপ্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। প্রজার ফসল বা আয়-রোজগার থেকেই কোতোয়ালদের বেতন দেয়া হয় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নামে প্রজাকে দমনের জন্য। প্রয়োজনে খাজনা আদায়ের জন্য সিপাহিরা প্রজাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করত। তাদের গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, বাসনকোসন লুট করে নিতো। অনেক সময় অন্য প্রজাদের ভয় দেখানোর জন্য প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো। ইংরেজ আমলে এ অত্যাচার সবচেয়ে বেশি ছিল।
আমাদের এ বাংলাদেশটি, মানে এই ভূমিটি হাজার বছর ধরে বিদ্যমান। বাঙালি মুসলমানের রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে। উদ্দেশ্য ছিল আমরা অমানবিক অত্যচারী রাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছ থেকে মুক্তি পাবো।
  1. এখন আমরা স্বাধীন। পাকিস্তান নেই, বিদেশী কেউ নেই। কিন্তু অত্যাচারের সব আইন এখনো বলবৎ আছে। হাজার চেষ্টা করেও পুলিশি আইন ৫৪ ধারা বাতিল করা যায়নি। কারণ রাষ্ট্রকে নাকি বাধ্য হয়ে অত্যাচার করতে হয়। পুরনো সব অত্যাচারী আইন ও ব্যবস্থা এখনো জারি আছে। শুধু বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র হয়েছে। এ রাষ্ট্রের একটি ভূখণ্ড আছে, যা হাজার বছর আগেও ছিল। নতুন হয়েছে একটি গান, একটি পতাকা,জাতিসঙ্ঘের সদস্যপদ। শুধু ব্যতিক্রম, শাসকেরা বাংলায় কথা বলেন। শাসকেরা হলেন পরিচিতজনের পোলা বা নাতিরা।
বলুন তো দেখি, দেশের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর সাথে ক’জন নাগরিক দেখা করতে পারেন? কারণ তারা প্রজা; কিন্তু শাসকগোষ্ঠী বা দলের কেউ নন। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি রাস্তায় নামলে রাস্তা খালি করে দিতে হয়। ফলে চার দিকে সব যানবাহন থেমে যায়। এসব বাদশাহী আমলেও ছিল। এর মানে, আধুনিক প্রজাতন্ত্র আর বাদশাহী বা সাম্রাজ্যের মধ্যে আমি কোনো ফারাক দেখতে পাই না।
বাদশাহী বা ইংরেজ আমলে একজন সিপাহি একজন প্রজার পাছায় যেকোনো সময়ে লাথি বা ডাণ্ডা মারতে পারত। হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যেতে পারত। এখনো পারে। বলা হয়, প্রজা বা নাগরিকেরা নাকি রাষ্ট্রকে এসব ক্ষমতা দিয়েছে। এখন তো কোতোয়ালেরা দাবি করেছেন, তাদের হেফাজতে কেউ মারা গেলে তাদের বিরুদ্ধে যেন কোনো মামলা না হয়। তারা তো বাদশাহ নামদারের গদি রক্ষার জন্যই প্রজার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়, বেশি ‘আদরযত্নে’ যদি কাহিল হয়ে যায় তাহলে কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। সব কিছুই করে তারা আইনের ভেতর থেকে।
আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রজারা ভোটের নাটক করেন। এই নাটকেই নেতা (বাদশাহ বা প্রধানমন্ত্রী ) নির্বাচিত হন। আধুনিক ভাষায় ‘নেতা’ বলা হয়। বাদশাহের পারিষদকে এখন সংসদ বলা হয়। এ সংসদের প্রধান হলেন একজন প্রধানমন্ত্রী যিনি বাদশাহের ক্ষমতা ব্যবহার করেন। আর যেকোনো বিষয়ে সংসদ সদস্যরা ‘হ্যাঁ’ বলে তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। বাদশাহ দরবারে এলে পারিষদরা কোমর বাঁকিয়ে কুর্নিশ করতেন, এখনো তা করা হয়।
বাদশাহ হুজুরের বিরুদ্ধে কিছু বললে সাথে সাথে গ্রেফতার। এ দেশে আল্লাহ ও নবীজী সা:-এর বিরুদ্ধে কিছু বললে শাস্তির ব্যবস্থা নেই। মেজরিটি মানুষের বিশ্বাসকে আঘাত করলে রাষ্ট্র কিছু করে না। ফলে ‘মুক্তমনা’ যুবকদের জন্ম হয়েছে। এদের বাপদাদারা সবাই মুসলমান। এর মানে, রাষ্ট্র মেজরিটি মানুষের কথা শোনে না। অথচ এ দেশ নাকি গণতান্ত্রিক।
আমি বিশ্বাস করি, দুনিয়ার মালিক আল্লাহ তায়ালা। তিনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর তিনিই আমাকে ফিরিয়ে নেবেন। জন্ম থেকে ইন্তেকাল (স্থানান্তর) বা মরণ পর্যন্ত সময়টা আল্লাহ নির্দেশিত পথে চলার হুকুম রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান বলে মানুষ সার্বভৌম, আল্লাহ নন। শাসক আল্লাহর আনুগত্য না করলেও কিছু আসে-যায় না।
  1. সংবিধানে মানুষকে সার্বভৌম বলাটাও একধরনের চালাকি। বাস্তবে এ ধরনের কোনো ‘সার্বভৌমত্ব’ কোথাও নেই। কথায় বলা হয়, জনগণ সার্বভৌম, জনগণ রাষ্ট্রের মালিক। বুকে হাত দিয়ে বলুন, আপনি কি কখনো অনুভব করেছেন, আপনি এ দেশের মালিক। আমি কখনো অনুভব করিনি। এমনকি কখনো ভাবিও না। আমি তো সবখানেই সব সময় লাঞ্ছিত, অবহেলিত, অপমানিত। তহসিল অফিসে খাজনা দিতে গেলে উমেদার অপমান করে। খাজনা ৫০ পয়সা হলে দাবি করে পাঁচ টাকা। হয়তো বলে দিলো, তোমার নামে খতিয়ান নেই। লেখাপড়া না জানা প্রজা তখনই তহসিলদারের পা ধরে কান্নাকাটি করেন। তখন দয়ার সাগর তহসিলদার সাহেব বলেন- যা, গরু বেচে টাকা নিয়ে আয়, সব ঠিক করে দেবো। বাদশাহের জামানায় তহসিলদার যেমন ছিলেন, এখনো তেমনি আছেন।
বিপদের সময় থানায় যান, দেখবেন থানাদার চোর-গুণ্ডাদের নিয়ে মশগুল। সেখানে আপনার কথা শোনার মতো কেউ নেই। আমাদের দেশে একটি গল্প আছে- ‘বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা’। তাই সত্য কথা বলার জন্যও কেউ থানায় যায় না। থানাদারের আইনগুলো তৈরি করেছেন ইংল্যান্ডের রানী বা রাজা। কারণ প্রজা বা স্বাধীনতাকামীদের দমনের জন্য এমন আইনই দরকার। সে আইন এখনো বলবৎ।
আপনি নাকি এ রাষ্ট্রের মালিক। কথাটা কি আসলেই সত্য? আপনিই বলুন, এ দেশে কোন সরকারি অফিসে আপনি সম্মানিত? কোন সরকারি অফিসের ওপর আপনার আস্থা আছে? কোন সরকারি অফিসে ঘুষ বা দুর্নীতি নেই?
 শুরুতেই বলেছি, আমি একজন সীমাহীন আবেগী মানুষ। নিজের জীবনেই অনুভব করেছি, রাষ্ট্রটা আমার দেহকে অত্যাচারের খাঁচায় বন্দী করে ফেলেছে। অন্তর-মন বা রূহের ভেতর খোদা, আর বাইরে সমাজ, রাষ্ট্র ও বাদশাহী আইন। রূহ বলে বিদ্রোহ করো অন্যায় আইনের বিরুদ্ধে; কিন্তু দেহ বলে, দরকার কী, দেহটাকে রক্ষা করো। সবাই তো দেহ রক্ষা করেই চলছে। বাদশাহ যদি আল্লাহর কথা না শোনে তুমি হিজরত করো, না হয় আল্লাহ পাকের পানা চাও। আমি তো মোনাফেক হতে চলেছি। দেহকে নিয়ন্ত্রণ করে রাষ্ট্র, মনকে নিয়ন্ত্রণ করেন খোদা।
  1. কোথায় সত্য বলব? বাংলাদেশে এমন একটি জায়গা নেই যেখানে সত্যের কোনো স্থান আছে। এমন সব মানুষ দেখি যারা অবসরের পর দিনরাত আল্লাহ আল্লাহ করছেন। বাসা থেকে বেরিয়ে মসজিদে যান আর বাসায় ফিরে আসেন। সব কিছু থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বাইরের কোনো ঘটনাই তার মনে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। মেয়েটাকে গুণ্ডারা তুলে নিয়ে গেছে। তবুও তার ভাবের কোনো পরিবর্তন নেই। তিনি থানায়ও যাননি। কারণ, জানেন কোথাও কোনো বিচার নেই।
জানি না, এ দেশে কখনো মানব ও মানবতার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে কি না। আইনগুলো মানবিক হবে কি না। বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে চলেছি। শুধু প্রার্থনা করি- হে খোদা, আমি তোমার অনুগত বিশ্বস্ত গোলাম। আবেগে এতই কাতর হয়ে পড়েছি যে, জীবনটাকে আর টেনে নিয়ে যেতে পারছি না। রূহের বাহন জরাজীর্ণ এ দেহের আর কী প্রয়োজন বুঝতে পারি না। আমি তো রাজনীতি করি না। রাজনীতি বাদশাহের ধর্ম। কারণ, বাদশাহী রক্ষা করার জন্য মোনাফেকি বাদশাহের ধর্মে পরিণত হয়েছে। বাদশাহ ভাবেন, প্রজারা যেকোনো সময় তার গদি কেড়ে নিতে পারে। তাই সেনাপতি ও কোতোয়ালই তার একমাত্র ভরসা। তারাই একমাত্র দেশপ্রেমিক। তাই বাদশাহ বাহিনীদের মাসোয়ারা বাড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। বাইবেলে পড়েছি, রাজস্ব আদায়কারীরা খাজনা আদায়ের নামে প্রজাদের ওপর অত্যাচার করে।
এরশাদ মজুমদার
অত্যাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে কখনোই বিদ্রোহ করিনি। বাধ্য হয়েই আমি একজন অনুগত প্রজা। তবুও রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীরা আমার ক্লান্ত দেহ ও মনের ওপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বলে, রাজাকে রাজার পাওনা দাও আর আমাদের পাওনা আমাদের বুঝিয়ে দাও। আমরা তো মহান রাজার প্রেমিক কর্মচারী। আমরাই তো মহান রাজাকে রক্ষা করি। নিপীড়ক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সব উন্নয়নই শোষণের হাতিয়ার। একজন রাজকর্মচারী কখনোই দরিদ্র হন না। কারণ, তিনি ঢেউ গুনলেই প্রাসাদ তৈরি হয়ে যায়। কেউ যদি একবার রাজার পারিষদ হন, তিনি চৌদ্দ পুরুষ বসে খেতে পারবেন। আর আমি টুঁ শব্দও করি না।
লেখক : কবি ও ঐতিহ্য গবেষক
ershadmz@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.