ইসির তড়িঘড়ি জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে

দেশে বিরাজমান অশান্ত পরিবেশে তড়িঘড়ি করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে বলে মনে করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমানে সারা দেশে পেট্রলবোমা হামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নানা ধরনের সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী মামলার কারণে কারারুদ্ধ বা পলাতক রয়েছেন। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করলে চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতা অনেকটা প্রশমিত হতো এবং অপেক্ষাকৃতভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করতো। ফলে অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেতেন। ভোটাররাও নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন। তাই বিরাজমান অশান্ত পরিবেশে তড়িঘড়ি করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি না করে পারে না। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুজন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সহসভাপতি বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন ও সুজন নির্বাহী সদস্য ড. হামিদা হোসেন। সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে ড. বদিউল আলম বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার সংখ্যায় ব্যাপক তারতম্য। নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মানদণ্ড অনুসরণ হয়নি। মোট ভোটার সংখ্যা, ওয়ার্ড সংখ্যা ও ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার সংখ্যার সঙ্গে প্রতিনিধিত্বশীলতার প্রশ্ন জড়িত। আর গণতন্ত্রের মূলকথাই হলো প্রতিনিধিত্বশীলতা। তাই কোন যুক্তিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সংখ্যা নির্ধারণ এবং ওয়ার্ডের সীমানা পুনঃনির্ধারণের ক্ষেত্রে ভোটারদের সমপ্রতিনিধিত্বের বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। সম্ভাব্য অনেক প্রার্থীই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন- এমন অভিযোগ এনে সুজন সম্পাদক বলেন, আইন অনুযায়ী, কোন প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কোন ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তারিখের ২১ দিন আগে কোন প্রকার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে তিন সিটিতেই অসংখ্য বিলবোর্ড স্থাপন ও দেয়ালে পোস্টার সাঁটার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ছিল সম্পূর্ণ নির্বাক। এ ধরনের প্রচারণার সুযোগে ধনাঢ্য প্রার্থীরা নির্ধারিত ব্যয়সীমার বাইরে ভোটারদের প্রভাবিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক পরিমাণের অর্থ ব্যয় করতে পারেন, যা নির্বাচনী ক্ষেত্রকে অসমতল করে তোলে। এমন অসমতল ক্ষেত্র কম বিত্তবান প্রার্থীদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক। তিনি আরও বলেন, যেহেতু সিটি করপোরেশন নির্বাচন নির্দলীয়। তাই বিএনপির কেউ যদি এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে দলটির হাইকমান্ডের উচিত হবে এ ক্ষেত্রে কোন বাধা না দেয়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে সুজন সম্পাদক বলেন, পক্ষপাতহীনভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করুন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে অবিলম্বে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করারও আহ্বান জানান তিনি।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, কয়েকজন প্রার্থীর পক্ষ থেকে তিন সিটিতেই অসংখ্য বিলবোর্ড স্থাপন ও দেয়ালে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে, যা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রচারণামূলক বিলবোর্ড ও পোস্টার অপসারণের নির্দেশ দেয়া হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা তা মান্য করছেন না। এতে করে নির্বাচন কমিশনকে ‘সাক্ষী গোপাল’ মনে করা ছাড়া উপায় থাকবে না। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষিত হওয়া তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। যার মধ্য দিয়ে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিতপ্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, গত আট বছর ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সংবিধান ও আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। এ নির্বাচন যেহেতু দলীয় নয় তাই কোন দলের ম্যান্ডেট কার্যকর হওয়া উচিত নয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বহিষ্কার অনভিপ্রেত ও গণতন্ত্রের বরখেলাপ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সুজনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়। একইভাবে রাজনৈতিক দলগুলোকে আইনগতভাবে নির্দলীয় এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকার এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রার্থীরা যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন, সে ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা পালন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.