সিনেমা হলে বিছানা, সোফা!

বাড়িতে প্রথম টিভি আগমনের দিনগুলো মনে পড়ে? শোয়ার ঘরে খাটে গড়িয়ে গড়িয়ে সাদা-কালো স্ক্রিনে সিনেমা আর চিত্রহার-টেস্ট ম্যাচ দেখার দিনগুলো আজ ইতিহাস। তবে বালিশে হেলান দিয়ে তারিয়ে তারিয়ে সিনেমা উপভোগ করার বিলাস হয়তো এদেশে ফিরে আসছে শিগগিরই। তা-ও আবার একেবারে মাল্টিপ্লেক্সের অন্দরে!
বছর কয়েক আগে গ্রিসের অলিম্পিয়া মিউজিক হলে এক অভিনব কাণ্ড ঘটিয়েছিল সুইডিশ আসবাব সংস্থা ‘আইকিয়া’। এক সন্ধ্যায় প্রেক্ষাগৃহের চিরাচরিত আসন ব্যবস্থা পাল্টে ফেলে স্রেফ কয়েক সারি খাটের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেই খাটের উপর পাতা হয়েছিল সুদৃশ্য আরামদায়ক বিছানা। সীমিত সংখ্যক আমন্ত্রিত ছাড়া অবশ্য সেখানে প্রবেশাধিকার মেলেনি কারো। কারণ এটা ছিল আইকিয়া-র বিজ্ঞাপনের অংশ বিশেষ।

তবে বাস্তবে বিছানায় শুয়ে সিনেমা উপভোগ করার চমক ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে। এদের মধ্যে অগ্রগণ্য ব্রিটেন। ইংল্যান্ডের ‘ইলেকট্রিক সিনেমা’ প্রেক্ষাগৃহের আসন ব্যবস্থা সত্যিই তাক লাগানোর মতো। এখানে সোফা, আরামকেদারার পাশাপাশি রয়েছে নরম গদিমোড়া খাটও। বিলাসবহুল ডাবল বেড বহরে যথেষ্ট চওড়া।

এখানে দুজন অনায়াসে হাত-পা ছড়িয়ে আরাম করতে পারেন। তবে খাটগুলো রাখা হয়েছে পর্দার সবচেয়ে কাছাকাছি। তবে হলের প্রথম সারির আসনে বসলে সাধারণত যেভাবে ঘাড়া উঁচিয়ে পর্দার ছবি দেখতে হয়, এখানে সে যন্ত্রণা নেই। দিব্যি গা এলিয়ে বিনা শারীরিক কসরতে সিনেমা উপভোগ করার জন্যই এই বন্দোবস্ত।

সিনেমা হলের বিছানা-বিলাসে পিছিয়ে নেই ইন্দোনেশিয়া। জাকার্তার সিনেমা চেইন ব্রিৎজ মেগাপ্লেক্সে রয়েছে ‘ভেলভেট সিটিং’ ব্যবস্থা। এগুলো আসলে সোফা-কাম-বেড। খাটের সঙ্গেই জোড়া ছোট্ট টেবিল, যার উপরে রাখা যায় সুখাদ্যের প্লেট। সঙ্গীর সঙ্গে মনের মতো খানা আর সিনেমা দেখার অনাবিল আনন্দ পেতে হলে অবশ্য পকেটের ভ্রুকুটিকে পাত্তা দিলে চলবে না। এই রকম সোফা-কাম-বেডের ভাড়া সাধারণ টিকিটের প্রায় চারগুণ।

প্রতিবেশী মালয়েশিয়াও কম যায় না। এদেশে বিনি চেইন অফ সিনেমায় মেলে আরামের নয়া সংস্থান। আস্ত খাট না হলেও এইসব প্রেক্ষাগৃহে রেখা হয়েছে আরামদায়ক বিন ব্যাগের বিছানা। তুলতুলে গদিতে ডুবে হলিউডের স্বপ্নরাজ্যে ভেসে যেতে কার না ভালো লাগে! টিকিটমূল্য স্বাভাবিক ভাবেই চড়া। দর্শক টানতে প্রেক্ষাগৃহের বিজ্ঞাপনে অবশ্যই প্রধান নিশানায় রয়েছেন কপোত-কপোতীরা।

পর্যটনই থাইল্যান্ডের মূল উপার্জন। তাই এদেশের মুভি থিয়েটারে পাওয়া যায় আরামের হরেক ব্যবস্থা। এখানে প্যারাগন সিনেমাপ্লেক্সে মেলে এমনই নরম গদিমোড়া বিছানা যা এই গোত্রের আসনের মধ্যে সম্ভবত সেরা। তবে তাতেও যদি দর্শক না মজে, তাই এই আসনের টিকিট কাটলে বিনামূল্যে মেলে এক গ্লাস মদিরা, এক বাক্স পপকর্ন ও মুখ চালানোর মতো সুস্ব^াদু স্ন্যাক্স।

শুধু তাই নয়, খাদ্য-পানীয় ফুরিয়ে গেলে অতিরিক্ত মূল্যের বিনিময়ে সঙ্গে সঙ্গে তা আনিয়েও নেয়া যায় সহজেই। এজন্য সর্বদা মোতায়েন করা রয়েছে বিশেষ একদল কর্মী। সিনেমা দেখার এই স্বর্গসুখ চেখে দেখতে হলে খসাতে হবে মাথাপিছু মাত্র ৯১ মার্কিন ডলার।

No comments

Powered by Blogger.