আমাকে শিখণ্ডী করা হয়েছে by আহমেদ হাসান ইমরান

বাংলাদেশে মৌলবাদী আন্দোলনকে পুষ্ট করতে সারদার আমানতকারীদের অর্থ গোপনে সড়কপথে সীমান্ত পেরিয়ে জামায়াতের হাতে পৌঁছে দেয়ার খবর নিয়ে দুই দেশেই জোর আলোচনা চলছে। ভারতের একটি সংবাদপত্রে জানানো হয়, সারদার অর্থ ব্যবহার করে বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন। তবে এ অর্থপাচারের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে, সেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা (উচ্চকক্ষ) সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান অভিযোগ করেছেন, সারদার সঙ্গে তার আর্থিক যোগাযোগের কোন তথ্য না পেয়েই পরিকল্পিতভাবে কয়েকটি সংবাদপত্রে বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগকে ঘৃণ্য প্রয়াস বলে বর্ণনা করে তিনি এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, আমি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে শুধু সমর্থনই করি না এ সরকারের সাফল্য কামনা করি। বঙ্গবন্ধু আমার কাছে একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। সে দেশের বিরুদ্ধে আমি কোন কাজ করবো, এমন বেয়াকুব আমি নই। ইমরান জানান, আসলে আমাকে শিখণ্ডী করে তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, মমতার কি স্বার্থ থাকতে পারে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াতকে মদত দেয়ার? তিনি বলেন, তাকে নিয়ে সংবাদপত্রের খবরকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক দলগুলোও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থ সিংও অভিযোগ করেছেন সংবাদপত্রের খবরের ওপর ভিত্তি করে। ইমরান এ ব্যাপারে সিদ্ধার্থ সিংয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন বলে দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আর অনেক আমার পরিচিত ব্যক্তিরাও বিভিন্ন থানায় এফআইআর করেছেন। শিগগিরই তিনি বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকার বিরুদ্ধেও মানহানি মামলা করেছেন ইমরান। তিনি বলেন, আমার সবচেয়ে বড় ভুল হযেছে প্রথম থেকেই প্রতিবাদ না করা। তার ব্যক্তিগত পরিচয় জানাতে গিয়ে ইমরান বলেন, আমাকে বাংলাদেশের শ্রীহট্টের লোক বলা হচ্ছে। আদতে আমার জন্ম জলপাইগুড়ি জেলার মালনদী চা বাগানে। সেখানকার স্কুলে প্রাথমিক পড়াশোনা। পরে বানারহাট স্কুল থেকে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। কোন দিনই উচ্চশিক্ষা তিনি নেননি বা আলিগড়েও পড়াশোনা করেন নি। তবে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানিয়েছেন, সিমি’র প্রতিষ্ঠাতা নন, একজন সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্ত ছিলেন। তার দাবি, তখন সিমি নিষিদ্ধ ছিল না। ইমরান দাবি করেন, তিনি কোন দেশবিরোধী কাজে যেমন জড়িত নন, তেমনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তিনি কখনও কোন মনোভাব পোষণ করেন নি। বরং বাংলাদেশের প্রতি তিনি শুভেচ্ছাই বহন করেন। তিনি বলেন, সবই মিথ্যে প্রচার চলছে। ‘কলম’ পত্রিকা সারদাকে বিক্রি করা সম্পর্কে তিনি বলেন, বলা হচ্ছে ১৫ কোটি রুপিতে আমি এটি বিক্রি করেছি। তিনি প্রশ্ন করেন, একটি ট্যাবলয়েড কাগজ, যার প্রচার সংখ্যা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এটি কেন বিপুল অর্থ দিয়ে কেনা হবে? আসলে ৪ লাখ রুপির বিনিময়ে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছিল। সারদা নিয়ে গঠিত শ্যামল সেন কমিশনের সামনে হাজিরার সময় সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনও জানিয়েছেন কয়েক লাখ রুপিতে তিনি এটি নিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী সময়ে কলম ও আজাদ হিন্দ পরিচালনায় সারদা ১৫ কোটি রুপি খরচ করেছিল। তার মৌলবাদী কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশ্ন করলে ইমরান বলেন, আমি কি এতটাই বেয়াকুপ, আমার কাজের পরিণতি কি হতে পারে তা আমি বুঝবো না? মুসলিম সম্প্রদায়ের যাতে কোন ধরনের ক্ষতি না হয় সে জন্য সতর্ক ছিলাম বলেই কোন বিরুদ্ধ কাজে আমার যোগ ছিল না। অবশ্য ইমরান তার মৌলবাদী যোগাযোগ খারিজ করলেও তিনি যে কট্টরপন্থি মনোভাব পোষণ করতেন, তার ট্যাবলয়েড আকারে প্রকাশিত ‘কলম’ পত্রিকায় পাতায় পাতায় তার উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে। ইমরানের রাজ্যসভায় নির্বাচন প্রসঙ্গে জানা গেছে, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের নিশ্চিত প্রার্থী তালিকায় ছিলেন না। বরং তৃণমূল কংগ্রেসবিরোধীদের ভোট ভাগাভাগির ফলেই তিনি জয়ী হয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইমরানকে বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে তুলে ধরতে আগ্রহী হয়েছিলেন। সে জন্য বাঙালি মুসলমানদের নিজস্ব কাগজ হিসেবে দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত ‘কলম’ পত্রিকার উদ্বোধনে তিনি উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবর উদ্দিন শুক্রবার বলেছেন, বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ইমরান সংক্রান্ত কোন রিপোর্ট তারা পাননি। আকবর উদ্দিনের কথার সূত্র ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, তৃণমূলের টাকা বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে আনন্দবাজারে যা প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুল। বিবৃতির পাশাপাশি ইমরানের হয়ে বলার জন্য দলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং সংখ্যালঘু মুখ ফিরহাদ (ববি) হাকিম গত শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যম ‘অপ্রীতিকর ও অসত্য’ খবর করছে বলে অভিযোগ করে সুব্রতবাবুর দাবি, জামায়াত-সিমিকে জড়িয়ে, আমাদের দলের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কথা তুলে যে সব খবর প্রচার করা হচ্ছে, এত কুরুচিকর সংবাদ ইদানীংকালে দেখিনি! ওই সব অভিযোগের পক্ষে তথ্যপ্রমাণ হাজির করার জন্য সংবাদমাধ্যমকে চ্যালেঞ্জও করেছেন সুব্রতবাবু। না হলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন বলেও জানিয়েছেন। পাশাপাশি তার অভিযোগ, এর পেছনে বিজেপি রয়েছে। তারা প্রাদেশিকতা, সংঘর্ষ ছড়াতে চাইছে। তবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জামায়াত-যোগ নিয়ে তদন্তের যে কথা বলেছেন সে সম্পর্কে ফিরহাদ বলেন, সংখ্যালঘু বলেই ইমরানকে জড়িয়ে এসব প্রচার হচ্ছে। তৃণমূল তাকে সাংসদ করেছে, এ অপরাধে বিজেপি সাধারণ ঘরের এক সংখ্যালঘু মানুষকে কালিমালিপ্ত করছে।

No comments

Powered by Blogger.