আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে

মিসরের রাজধানী কায়রোয় দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ
আল–সিসির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
আইএসবিরোধী জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা করতে
গতকাল কায়রো যান তিনি। ছবি: রয়টার্স
ইরাকের কট্টরপন্থী সুন্নি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ জড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়, আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই প্রথম দেশটি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা সরাসরি ঘোষণা করল। গতকাল শনিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া রেডিও ও ইন্টারনেট ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘আইএসের বিরুদ্ধে এই লড়াই ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ থেকে ভিন্ন। নতুন এই লড়াইয়ে অতীতের ভুল করা যাবে না।’
এই লড়াই আমেরিকার একার নয় উল্লেখ করে ওবামা আরও বলেন, সন্ত্রাসবাদবিরোধী এই লড়াইয়ে যোগ দিচ্ছে আরও অনেক দেশ। আইএসের বিরুদ্ধে জোট গঠনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই প্রচেষ্টা সফল করতে বিভিন্ন দেশ সফরের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার তিনি মিসরে যান। খবর এএফপি, রয়টার্স ও এনবিসির। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জস আর্নেস্ট গত শুক্রবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আল-কায়েদা ও আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন যেভাবে যুদ্ধ করছে, সেভাবে আইএসের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করছে।আর্নেস্টের এই ঘোষণার কয়েক মিনিট আগেই মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল জন কারবি ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা ২০০২ সালের ইরাক যুদ্ধ নয়। কিন্তু ভুলে যাওয়া চলবে না যে আমরা আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি। যেভাবে যুদ্ধ করেছি ও এখনো করছি, আল-কায়েদা এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে।’ হোয়াইট হাউস ও পেন্টাগনের এই দুই কর্মকর্তার এই বক্তব্যকেই আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রথম সরাসরি ঘোষণা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, ‘আমরা আগের মতো পুরোপুরি যুদ্ধে লিপ্ত নই। এখন যা চলছে, তা হলো সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিস্তৃত পর্যায়ের অভিযান।’ কেরি এও বলেন, এই অভিযানকে ‘যুদ্ধ’ বলা ভুল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণেও সরাসরি আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকার কথা বলেননি।
ওবামা শুক্রবার নিজের দল ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য এক তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানেও আইএস প্রসঙ্গে কথা বলেন। আইএস জঙ্গিদের পরাজিত করার ব্যাপারে নিজের আত্মবিশ্বাসের কথা তুলে ধরেন ওবামা। মিসরে কেরি: গতকাল মিসরের রাজধানী কায়রো পৌঁছে আরব বিশ্বের দেশগুলোর জোট আরব লিগের প্রধান নাবিল আল-আরাবির সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি। পরে তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও বৈঠক করেন। কেরি এসব বৈঠকে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোট গঠনের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। নাবিল আল-আরাবি ও সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর কেরি বলেন, আইএসবিরোধী অভিযানে মিসর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে আইএসের পক্ষের কিছু কট্টরপন্থী গোষ্ঠীকে দমনে লড়াই করছে তারা। গতকাল মধ্যপ্রাচ্য সফরের শেষ পর্বে ছিলেন জন কেরি। আইএসবিরোধী লড়াইয়ের জন্য এ পর্যন্ত তিনি ১০টি আরব দেশের সমর্থন নিশ্চিত করতে পেরেছেন। শিয়া প্রাধান্যপুষ্ট ইরান আইএসের বিরোধী হলেও দেশটিকে জোটে নিতে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার তিনি তুরস্কে বলেন, ‘সিরিয়া ও অন্যত্র ভূমিকার জন্য’ ইরানকে জোটে নেওয়া যাবে না। ইরানের হুঁশিয়ারি: আইএস ‘দমনের নামে’ সিরিয়ায় বিমান হামলা না চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করেছে ইরান। সিরিয়ার মিত্র বলে পরিচিত দেশ ইরানের পার্লামেন্টের স্পিকার আলী লারিজানি বলেন, সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালালে তা হবে আগুন নিয়ে খেলার শামিল। ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি আলী সামখানি অভিযোগ তুলেছেন, আইএস দমন অভিযানের নামে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে।

No comments

Powered by Blogger.